রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন

ইসলামের মৌলিক বিধান মানার অপরিহার্যতা

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫
  • ৩৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : মানবজীবন শুধু ভোগবিলাসের নাম নয়, এটি আসলে দায়িত্ব ও জবাবদিহির দীর্ঘ সফর। মানুষ এই পৃথিবীতে গন্তব্যহীন পথিক হয়ে আসেনি, বরং তার আগমন হয়েছে স্রষ্টার ইচ্ছা পূরণের গুরুদায়িত্ব নিয়ে। সেই দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে দিয়েছেন এক পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা, যার নাম ইসলাম। আর যেসব মৌলিক বিধান এ ধর্মের ভিত্তি সেগুলো মানা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক ও অনিবার্য।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলামের কাঠামোকে এক স্থাপত্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬)

কোনো অট্টালিকা যেমন স্তম্ভ ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, মুসলিমের ঈমানও তেমনি এই মৌলিক স্তম্ভগুলো ছাড়া অটুট থাকে না। এই স্তম্ভগুলো হলো—ঈমান, নামাজ, জাকাত, রোজা এবং হজ।

শাহাদাহ হলো ঈমানের ঘোষণা—‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল’—এটি কেবল একটি উচ্চারণ নয়, বরং আজীবন ধারণ করা এমন এক প্রতিশ্রুতি, যাতে মানুষ তার জীবনকে আল্লাহর দাসত্বে সঁপে দেয়।

নামাজ হলো দৈনিক আত্মশুদ্ধির অনুশীলন—পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানুষকে যেমন শৃঙ্খলাবদ্ধ করে, তেমনি অন্যায়, অশ্লীলতা ও পাপ থেকে বিরত রাখে।

জাকাত শুধু দান নয়, বরং এটি সমাজে সম্পদের সুষম বণ্টনের আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ধনী-গরিবের মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়।

রোজা হলো আত্মার পরিশুদ্ধি ও সংযমের মহাসাধনা। ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট মানুষকে ধৈর্য শেখায় এবং অপরের দুর্দশা অনুভব করার যোগ্য করে তোলে।

হজ হলো সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য একটি বিশ্বজনীন মিলনমেলা, যেখানে কালো-সাদা, ধনী-গরিব, বাদশাহ-ফকির সবাই একই পোশাকে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করে—‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক।’ [হাজির হে প্রভু! হাজির]

পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে এই বিধানগুলোর গুরুত্ব স্পষ্ট করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত প্রদান করো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৪৩)

আবার অন্য এক আয়াতে তিনি ঘোষণা করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)

আর হজ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের ওপর আল্লাহর হক হলো, যে ব্যক্তি সামর্থ্যবান, সে যেন আল্লাহর ঘরে হজ করে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)

এসব মৌলিক বিধান শুধু ব্যক্তির আত্মার পবিত্রতার জন্য নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের ন্যায়ভিত্তিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্যও অপরিহার্য। নামাজ মানুষের অন্তরে তাকওয়ার বীজ বপন করে, জাকাত সমাজের বৈষম্য দূর করে, রোজা মানুষকে আত্মসংযমে অভ্যস্ত করে এবং হজ জাতি-গোষ্ঠীর সীমারেখা ভেঙে মানবতার ঐক্য রচনা করে।

আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে আমরা নানা সংকট, বিভাজন ও অবক্ষয়ের মুখোমুখি। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে সমাজ আল্লাহর মৌলিক বিধান মানে, সেই সমাজেই প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি, ন্যায়, ভ্রাতৃত্ব ও কল্যাণ। তাই একজন মুসলিমের জন্য ইসলামের মৌলিক বিধান মানা শুধু আখিরাতের মুক্তির শর্তই নয়, বরং এ দুনিয়ার সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক জীবনযাপনেও অপরিহার্য মাধ্যম।

অন্যদিকে যারা এই মৌলিক বিধানের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে বা অবহেলা করে, তারা শুধু নিজের ঈমান ও নৈতিক ভিত্তি ক্ষয় করে না; তারা সমাজের ন্যায়পরায়ণতা, সামাজিক বন্ধুত্ব এবং শৃঙ্খলা নষ্টের পথ প্রশস্ত করে। এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সমাজে বিভাজন, অসাম্য ও অবিশ্বাসের বীজ বপন করে। ইতিহাসে দেখা গেছে, যে সমাজ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে, সেখানে ক্রমেই নৈতিক অবক্ষয়, আর্থিক অস্থিরতা, সামাজিক অনিয়ম ও সামগ্রিক অশান্তি বৃদ্ধি পায়। দেশের কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাই মৌলিক বিধান মানা শুধু ব্যক্তিগত দায়িত্ব নয়, এটি সমগ্র জাতির জন্য অপরিহার্য একটি ভিত্তি।

লেখক : শিক্ষার্থী, তাকমিল ফিল হাদিস, জামিয়া ইমদাদিয়া দারুল উলুম মুসলিম বাজার, মিরপুর, ঢাকা

কিউএনবি/অনিমা/১৯ আগস্ট ২০২৫/রাত ১০:০১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit