রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৯ অপরাহ্ন

সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ মহাপাপ

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪১ Time View

ডেস্ক নিউজ : সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’। বর্তমান বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এ স্লোগানের বাস্তবতা। বাংলাদেশ এর অজানা দৃশ্যপট ও অপ্রত্যাশিত রঙ্গমঞ্চে পরিণত হয়েছে। ধনী-গরিব, ছোট-বড়, উচ্চ-নিম্ন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রত্যেক স্তরের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি, গোষ্ঠী সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, জবরদখল ও লুটপাটের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। ভাই, ভাইয়ের সম্পদ আত্মসাৎ করছে। ক্ষমতাধররা আত্মসাৎ করছে জনগণের অধিকার, নেতা-নেত্রীরা হরণ করছে সরকারি সম্পদ। চতুর্দিকে চলছে ছিনতাই, লুণ্ঠন, দস্যুতা ও দুর্নীতি। সবাই হুমড়ি খেয়ে নামছে এ অপকর্মের প্রতিযোগিতায়। আজ ভোলাগঞ্জে পাথর লুট, কাল কক্সবাজারে বালু হরণ, চাঁদপুরে ইলিশ গায়েব, অস্ত্রাগারের গোলাবারুদ ও আইসিটি বিভাগের বাজেটে দুর্নীতি, সরকারি জমি দখল, শেয়ার কেলেঙ্কারি হাজারও লুটপাটে সবাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যৎ পরিণাম কোথায় দাঁড়াবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা প্রত্যেক মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। এ সম্পদ জনগণের পবিত্র আমানত। রাষ্ট্রীয় সম্পদ কম হোক বা বেশি, দামি হোক বা নগণ্য, এতে সব মানুষের মালিকানা সংশ্লিষ্ট। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর ইসলামি রাষ্ট্রের দ্বিতীয় রাষ্ট্র প্রধান, অর্ধ পৃথিবীর শাসক ওমর (রা.) শপথ করে বলেন, নিশ্চয় এ রাষ্ট্রীয় সম্পদে কেউ কারও চেয়ে বেশি অধিকারী নয়। আমিও কারও চেয়ে বেশি অধিকারী নই। (আল ফাতহর রাব্বানি-৮৭)। ব্যক্তিগত কারও সম্পদ হরণ করা এবং সরকারি মাল গ্রাস করা ইসলামের দৃষ্টিতে সমান মহাপাপ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি সম্পদ আত্মসাতের ভয়াবহতা আরও মারাত্মক। ব্যক্তিগত সম্পদের ক্ষেত্রে মালিক যেহেতু নির্দিষ্ট, তাই তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া সহজ। সরকারি সম্পদের মালিক দেশের সব মানুষ। তাই দেশের সব মানুষের কাছ  থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া কতটা কঠিন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯৮০ দশকের কথা, আমি তখন হরষপুর দারুল উলুম মাদরাসা হবিগঞ্জের ছাত্র। খোদাভীরু মহান সাধক, আল্লামা সিরাজুল ইসলাম খান ছাত্রদের উপদেশ প্রদান করেছিলেন। মাদরাসাটি রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন। তিনি উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, টিকিট ছাড়া কেউ রেলে ভ্রমণ করবে না। রেল সরকারি সম্পদ। টিকিট না করার ফলে সরকারি টাকা আত্মসাৎ হিসেবে গণ্য হবে। এ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে অথবা অন্য সময়ে এ পরিমাণ টাকার টিকিট সংগ্রহ করার মাধ্যমে তা ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় গোটা দেশের মানুষের কাছে থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তা করা না হলে পরকালে দায়মুক্তির পরিণাম অনেক কঠিন হবে। সৃষ্টি হবে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রেক্ষাপট।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমরা একবার রসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে খায়বর যুদ্ধে গমন করি। সে যুদ্ধে আমরা কোনো রৌপ্য বা স্বর্ণ লাভ করতে পারিনি। তবে বিভিন্ন মালামাল, খাদ্যসামগ্রী ও পোশাকপরিচ্ছদ লাভ করি। এরপর আমরা এক উপত্যকায় চলে যাই। সেখানে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর একটি গোলাম ছিল। এমন সময় একটি তির এসে গোলামের শরীরে নিক্ষিপ্ত হয় এবং তাতে তাঁর মৃত্যু হয়। আমরা বলতে লাগলাম, ইয়া রসুলুল্লাহ কী সৌভাগ্য তাঁর! সে শাহাদাতের পরম মর্যাদা লাভ করল। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, কখনো না। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ করে বলছি, নিশ্চয় সেই লম্বা চাদরটি আগুন হয়ে তাঁর দেহ দগ্ধ করেছে, যেটি সে খায়বর দিবসে গনিমতের মাল বণ্টনের আগে তুলে নিয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন, সাহাবিগণ এ ঘটনায় ভীষণ ভীত হয়ে পড়েন এবং যাঁর কাছে একটা বা দুটো জুতার ফিতা পর্যন্ত ছিল, তা-ও এনে জমা দেন। তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একটি জুতার ফিতা আগুনের অংশ, দুটি জুতার ফিতাও আগুনের অংশ।’ (সহিহ বুখারি)। 

ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা, সাধারণ কর্মচারী বা যেকোনো দায়িত্ববান ব্যক্তি জাতীয় সম্পদের ক্ষেত্রে জবাবদিহির আওতায় থাকবেন। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেকেই একজন রাখাল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সহিহ বুখারি)।

আল্লাহতায়ালা সরকারি সম্পদ আত্মসাতের ভয়াবহতা বোঝানোর লক্ষ্যে রসুলুল্লাহ (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন, ‘কোনো বস্তু আত্মসাৎ করা নবীর পক্ষে অসম্ভব। আর কেউ গোপনে কিছু আত্মসাৎ করলে, সে কেয়ামত দিবসে আত্মসাৎকৃত বস্তু নিয়ে আসবে। অতঃপর প্রত্যেককে পরিপূর্ণভাবে দেওয়া হবে যা সে অর্জন করেছে। (সুরা আলে ইমরান-১৬১)। মহান আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ঘোষণা করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।’ (সুরা নিসা-২৯)। শরিয়তের দৃষ্টিতে চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, জুয়া এবং সরকারি-বেসরকারি ও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ আত্মসাৎ ইত্যাদি সবই অন্যায়ভাবে গ্রাস করার নামান্তর।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

কিউএনবি/অনিমা/১৬ আগস্ট ২০২৫/রাত ১০:০৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit