রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন

রাত-দিন মহান আল্লাহর বিস্ময়কর নিদর্শন

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪১ Time View

ডেস্ক নিউজ : আল্লাহ তাআলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির নিদর্শনগুলো বিবেচনা করতে, যেখানে জ্ঞানের জন্য বিস্ময়কর নিদর্শন ও চমকপ্রদ প্রমাণ রয়েছে। এই নিদর্শন মানুষকে তার স্রষ্টার মহিমা স্বীকার করতে এবং তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে।

সেসব নিদর্শনের অন্যতম একটি হচ্ছে রাত আর দিনের নানা আবর্তন। সকালবেলার স্নিগ্ধ বাতাস, দুপুরের প্রখর রোদ, বিকেলের ম্লান আলো—সবই জীবনের আপন দৃশ্যপট।

আর রাতের অন্ধকার, তারা ভরা আকাশ, পূর্ণিমার দীপ্তি, অমাবস্যার নিঃশ্বাসহীন কালো আকাশ—এগুলোও আমাদের কাছে পরিচিত, সহজাত। কিন্তু এই ‘অতি সাধারণ’ দৃশ্যগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে অসংখ্য শিক্ষা, মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা, ইলম ও কুদরতের অপরিসীম নিদর্শন।

পবিত্র কোরআনে বারবার দিন-রাতের এই ব্যবস্থাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নিজেকে এভাবেই পরিচয় করিয়েছেন, ‘তিনি সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র।’
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩৩)

রাত-দিনের বিরতিহীন আবর্তনের মধ্যেই আছে জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ, ‘নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০)

কোরআনের কোথাও বলা হয়েছে, এসব নিদর্শন বুদ্ধিমানদের জন্য; কোথাও বলা হয়েছে, মুত্তাকীদের জন্য। অর্থাৎ যারা চিন্তা করে, যারা আল্লাহকে ভয় করে, তারাই এই দিন-রাতের ব্যবস্থায় প্রভুর পরিচয় খুঁজে পাবে এবং বিনম্র কৃতজ্ঞতায় সিজদায় লুটিয়ে পড়বে।

কিছু আয়াতে রাত ও দিনের রূপান্তর বর্ণনা করে আল্লাহর কুদরতের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে—‘আপনি রাতকে দিনে প্রবেশ করান, আর দিনকে প্রবেশ করান রাতে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২৭)

গ্রীষ্মে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ে, শীতে কমে; আবার রাতের ক্ষেত্রেও উল্টোটা ঘটে। এক অংশ দিন ঢুকে যায় রাতের মধ্যে, রাত ঢুকে পড়ে দিনের মধ্যে। এগুলোই মহান আল্লাহর নির্ধারিত চক্র।

অন্য আয়াতে এভাবে বলা হয়েছে, ‘তিনি দিনকে ঢেকে দেন রাত দিয়ে, রাত দ্রুতগতিতে দিনের পেছনে চলে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৪)

দিন-রাত একই সময় চক্র অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হলেও আল্লাহ তাআলা সময়ের ভেতরে ভিন্ন ভিন্ন কাজের উপযোগিতা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

রাতকে বানিয়েছেন বিশ্রামের জন্য, দিনকে কর্মের জন্য, ‘তিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ করো এবং দিনকে করেছেন আলোয় উজ্জ্বল।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৬৭)

‘তিনি রাতকে বানিয়েছেন পোশাকস্বরূপ, ঘুমকে বিশ্রাম, আর দিনকে জাগরণের সময়।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৪৭)

রাতের ঘুমের প্রশান্তি দিনের সব ক্লান্তি মুছে দেয়, আর দিনের আলোতে কর্মোদ্যম প্রস্ফুটিত হয়।

আল্লাহ তাআলা সুরা কাসাসে প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন, ‘তুমি বলো, যদি আল্লাহ তোমাদের ওপর রাতকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া আর কে তোমাদের আলো এনে দিতে পারে?’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭১)

‘আর যদি দিন হয়ে যায় চিরস্থায়ী, তবে আল্লাহ ছাড়া আর কে তোমাদের বিশ্রামের জন্য রাত এনে দিতে পারে?’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭২)

এরপরই তিনি বলেছেন, ‘আপন মেহেরবানিতেই তিনি তোমাদের জন্য রাত ও দিন সৃষ্টি করেছেন, রাতে বিশ্রাম, দিনে তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৩)

দিনের আলো শুধু কাজের জন্য নয়, জীবনের জন্যও অপরিহার্য—সূর্যালোক আমাদের দেয় ভিটামিন ডি, সূর্যালোকেই হয় ফল-ফসলের বৃদ্ধি, সাধিত হয় প্রকৃতির সৌন্দর্য।

রাত ও দিনের এই পরিবর্তন মানুষের জীবন ও কর্মকে সুশৃঙ্খল করে, বিশ্রাম ও ইবাদতের সুযোগ দেয় এবং আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার নিদর্শন হিসেবে কাজ করে।

লেখক : শিক্ষার্থী, এন আকন্দ কামিল মাদরাসা, নেত্রকোনা

কিউএনবি/অনিমা/১৬ আগস্ট ২০২৫/রাত ১০:০৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit