ডেস্ক নিউজ : গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার নাজমুল করিম খান বলেছেন, ‘পুলিশকে ভাই কাজ করতে দেন। পুলিশ এখন খুব দুর্বল অবস্থায় আছে, প্লিজ। আমি আপনাদের মাধ্যমে বারবার বলছি, আমি কাজ করবো, আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আগে আমার একজন পুলিশ যে সাহসিকতা নিয়ে কাজ করতো, এখন তিন জন পুলিশ সে সাহসিকতা দেখাচ্ছে না, পাচ্ছে না। এখনও পুলিশ ভীতসন্ত্রস্ত।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্টে কতজন পুলিশকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, আপনারা জানেন? পুলিশের কাজের জন্যই মারা হয়েছে, এটাকে আমি ডিফেন্ড করছি না। কিন্তু পুলিশ ট্রমায় আছে। পুলিশ কিন্তু এখনও ট্রমাটাইজ। সেই ট্রমাটাইজড পুলিশকে যদি আগের মতো আপনি পুলিশিং করতে চান, সেটি কিন্তু আমাদের এখনও সম্ভব হবে না। আমরা কাজ করছি দেখাচ্ছি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা গ্রেফতার করেছি। এগুলো কি আপনারা এপ্রিশিয়েট করেন। প্লিজ, আপনাদের কাছে অনুরোধ আমাদের কাজগুলোকে এপ্রিশিয়েট করেন। আমাদেরকে সহযোগিতা করেন, আমরা কাজ করতে চাই। আমরা প্রিভেনশন (ঠেকাতে) করতে পারিনি, কিন্তু ডিটেকশন (চিহ্নিত) করতে পেরেছি। প্রিভেনশনের জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আজকে আপনাদের কাছে একটিমাত্র অনুরোধ রাখবো পুলিশকে আবার কাজ করার সুযোগ করে দেন। পুলিশ জনগণের রোষানলের শিকার হয়েছে। এখান থেকে পুলিশ ট্রমাটাইজ হয়েছিল।’
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে জিএমপি সদরদফতরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত আসামিদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
নাজমুল করিম খান বলেন, ‘আপানার (সাংবাদিকেরা) সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছেন, যখন চাপাতি দিয়ে বাদশাকে কোপালো তারপরে একজন মাথায় কার্টন নিয়ে এগোচ্ছে। চাপাতি দিয়ে কোপানো যে আতঙ্ক, একটা দৌড়াদৌড়ি, চিৎকার করা, একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটলো আমরা দেখিনি। কুপিয়ে মারছে, মানুষ যে চিৎকার করবে, সহযোগিতা চাইবে, কেউ কোনও সহযোগিতা চায়নি, চিৎকার করেনি।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের দায়িত্ব অবহেলাটা অবশ্যই আমি মনে করবো, যখন আমি দেখব সেখানে পুলিশ ছিল, কিন্তু প্রতিকার করেনি। পুলিশের অবশ্যই অবহেলা থাকতে পারে, আমার অবহেলাও থাকতে পারে। অবহেলা এবং সীমাবদ্ধতা দুটিকে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেললে হবে না। আমাকে কাজ করার সুযোগ দেন, আমি অথবা আমরা ফোন রিসিভ করবো। আমাকে শুধু স্থানীয় সাংবাদিকেরা ফোন দেয় না, ঢাকা থেকেও সাংবাদিকরা ফোন করে তথ্য চায়।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রিভেনশন হলো প্রথম কাজ যার মাধ্যমে সর্বোচ্চ এফোর্ড দিয়ে থাকি। প্রিভেনশনের মধ্যে আমাদের যে পেট্রোলিং করে থাকে সে কাজগুলো করে থাকে। আমাদের হিসাব অনুযায়ী গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তায় প্রতিদিন চার লাখ লোক আসা যাওয়া করে। চার লাখ লোক আসা-যাওয়ার মাঝে একটি বা দুটি পেট্রোলিং টিম থাকে। তাদের জন্য দুটি টিম যথেষ্ট কি না আপনারা ভেবে দেখবেন। যাদের হাতে চাপাতি ছিল ৭-৮ জন, কিন্তু সংঘবদ্ধ ছিল। এখানে একজন সাংবাদিক ভাই সাহস করে শুধুমাত্র ছবি তুলেছে, তার জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা কিন্তু ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারিনি, নিজেদেরকে একত্রিত রাখতে পারিনি। আমার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতে আসতে তারা কিন্তু কাজটি করে চলে গেছে।’
জিএমপি কমিশনার বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেকগুলো শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে শ্রমিক শ্রেণির লোকেরা যখন তার পেটের খাদ্য জোগাড় করতে পারেনি, পেট যখন খালি থাকে তখন তার হুঁশ থাকে না। এই নিম্ন শ্রেণির লোক তখন রাস্তায় ছিনতাই বা অন্য কাজে বেরিয়ে যায়। যেকোনও জায়গায় কর্ম বন্ধ হয়ে গেলে তখন সেখানে ক্রাইম বেড়ে যায়, এটাই স্বাভাবিক। আমরা শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়াতে হুমকি মনে করছি। ৫ আগস্টের পর যেসব শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে ওইসব কারখানার শ্রমিকরা এসব কাজে অংশগ্রহণ করছে।’
তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি যারা দীর্ঘদিন এখানে অথবা এ দেশ শাসন করেছে (আওয়ামী লীগ) এই জায়গাটি তাদের জন্য খুব জোরালো জায়গা ছিল। আপনারা জানেন, ২০০১ সালে যে দলটি সারা দেশে ৫৮টি সিট পেয়েছে। ওই দলটি তখন গাজীপুরে পাঁচটি সিট পেয়েছে- তার মানে এই দলটি এখানে খুব শক্তিশালী। সেই দল যখন রাজনীতি থেকে দূরে থাকে, তখন তার যে সমর্থক আছে তারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে আনস্ট্যাবল করার জন্য। আমরা প্রতিনিয়তই তাদের নজরদারি করছি এবং সেই নজরদারি আমাদের জন্য একটি বাড়তি বিষয় হয়ে গেছে। এটি আমরা মোকাবিলা করতে গিয়ে ক্রাইমের প্রতি যতটুকু আমাদের মনোযোগ দেওয়ার কথা, এদিকে নজর দিতে গিয়ে দেখা যায় সেদিকে আমরা নজর দিতে পারি না। সেই কারণে চান্দনা চৌরাস্তায় ক্রাইম বেড়েছে কি না আমি জানি না। আগের পরিসংখ্যান যদি দেখেন, ক্রাইম কিন্তু আগের পরিসংখ্যান মতোই আছে। আমি আপনাদেরকে ক্রাইম পরিসংখ্যান দিয়ে দেখাতে পারবো।’
জিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বাদশা নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। এ সময় আসামি গোলাপী তাকে হানিট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করে। এটি যখন বাদশা বুঝতে পারে, তখন তার থেকে ছুটতে চায় এবং কিল-ঘুষি মারে। এ সময় আগে থেকে ওতপেতে থাকা আসামিরা এসে বাদশাকে কোপানো শুরু করে। এ সময় বাদশা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে থাকে। সাংবাদিক তার পেশাগত কারণেই এটি ভিডিও করে। আসামিরা সাংবাদিক তুহিনকে ভিডিও ডিলিট করতে বলে, কিন্তু তিনি রাজি হয় না। একপর্যায়ে ওই আসামিরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদ মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
কিউএনবি/অনিমা/৯ আগস্ট ২০২৫/রাত ৯:০১