মো. সাইদুল আনাম, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যাতম সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদ সহ ৫ জাসদ নেতা হত্যার অন্যতম ফাঁসির আসামি বাখের আলী ওরফে কবির এর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কিশোরীনগর গ্রামের কবরস্থানে এ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এসময় দৌলতপুর থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ ও বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খোয়াজ আলীসহ উপজেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় মুসল্লিরা উপস্থিত ছিলেন। ফাঁসির আসামি বাখের আলী ওরফে কবির এর নাম জুলাই শহীদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত থাকায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে বলে জানান, বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খোয়াজ আলী।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেলে দেশব্যাপী আনন্দ মিছিল হলে ঢাকায় আত্মগোপন ও ছদ্দবেশে পলাতক থাকা কাজী আরেফ আহমেদ সহ ৫ জাসদ নেতা হত্যার অন্যতম ফাঁসির আসামি বাখের আলী মিছিলে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে তাকে দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের নিজ গ্রামের কিশোরীনগর কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে জুলাই শহীদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
কিশোরীনগর গ্রামের মৃত মোজাহার আলীর ছেলে বাখের আলী ওরফে কবির জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আনন্দ মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাটি নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে এলাকাবাসীর। এদিকে আবার দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফাঁসিঁর আসামির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা গুঞ্জন। এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, জুলাই শহীদের তালিকায় দৌলতপুরের একমাত্র শহীদ কবির এর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। সে ফাঁসির আসামি কিনা সেটা আমার জানা নেই।
অপরদিকে দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আলোচনা সভা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের। দৌলতপুর উপজেলার সমন্বয়ক কমিটির আহ্বায়ক পরিচয়দানকারী রকি আহমেদ ও সদস্য সচিব আব্দুল আলীম আকাশ দৌলতপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক এম মামুন রেজা ও নির্বাহী সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক সাইদুর রহমানকে আলোচনা সভাস্থল থেকে বের করে দেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আলোচনা সভা থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেওয়ার ঘটনায় দৌলতপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশের সব জেলা ও উপজেলা সমন্বয়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলেও দৌলতপুর উপজেলায় সমন্বয়ক কমিটির পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশে যোগ দেওয়ার বিষয়টিও ক্ষতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক এম মামুন রেজা ও নির্বাহী সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক সাইদুর রহমান জানান, উপজেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছিলাম। সভার শুরু হওয়া আগে দৌলতপুর উপজেলার সমন্বয়ক কমিটির আহ্বায়ক রকি আহমেদ ও সদস্য সচিব আব্দুল আলীম আকাশ আমাদের দু’জনকে সভাস্থল থেকে বের করে দেন। ঘটনাটি চরম অপমানজনক ও দুঃখজন বলে তারা উল্লেখ করেন।
এবিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই বিষযটি ক্ষতিয়ে দেখা হবে। তারা আমার আমন্ত্রণে এসেছিলেন। পরে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ কনফারেন্স রুমে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী’র সভাপতিত্বে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম, দৌলতপুর থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ, দৌলতপুর মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ ও দৌলতপুর উপজেলা জামায়াতের আমির উপাধ্যক্ষ মো. বেলাল উদ্দিন। আলোচনা সভায় উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
কিউএনবি/আয়শা/৫ আগস্ট ২০২৫/রাত ১০:৫০