মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৫ অপরাহ্ন

ইসলামই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫
  • ৩৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : ইসলামে দ্বীন বলতে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাকে বোঝায়, যা বিশ্বাস, নৈতিকতা এবং সামাজিক রীতিনীতিসহ জীবনের সব দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। দ্বীন শব্দের অর্থ ও তাৎপর্য শুধু ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি জীবনদর্শন, যা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য পথপ্রদর্শন করে।

‘জীবনব্যবস্থা’ শব্দটি সাধারণত জীবন পরিচালনার জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বা পদ্ধতিকে বোঝায়। এটি একটি ব্যাপক ধারণা–যাতে ব্যক্তি, সমাজ এবং প্রকৃতির বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত। এটি ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক নিয়মকানুনসহ জীবনের সব ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

ইসলাম অনুষ্ঠানসর্বস্ব কোনো ধর্ম নয়। আল্লাহতায়ালা ইসলামকে দ্বীন অর্থাৎ জীবনব্যবস্থা বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে একমাত্র দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) হচ্ছে ইসলাম। আর যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরই তারা মতানৈক্য করেছে, পরস্পর বিদ্বেষবশত। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর আয়াতসমূহের সঙ্গে কুফরি করে, নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।’ (সুরা আলে-ইমরান, ১৯)। এ আয়াতে স্পষ্টভাবে ইসলামকে একমাত্র জীবনব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করা কুফরির শামিল।

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তারা কি আল্লাহর দ্বীনের (জীবনব্যবস্থা) পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করছে? অথচ আসমানসমূহ ও জমিনে যা আছে তা তাঁরই আনুগত্য করে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় এবং তাদেরকে তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন করা হবে।’ (সুরা আলে-ইমরান, ৮৩) রাসুলুল্লাহ (সা.) ১০ম হিজরির ৯ জিলহজ তারিখে আরাফার ময়দানে যখন বিদায় হজের ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন সুরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়, এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা দ্বীনকে পরিপূর্ণ করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং ইসলামকে একমাত্র জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করার কথা বলেছেন।

আয়াতটিতে বলা হয়েছে, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য একমাত্র দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে।’ (সুরা মায়েদা, ৩) আয়াতে আল্লাহতায়ালা জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকেই মুসলিমদের জন্য একমাত্র পূর্ণাঙ্গ দ্বীন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) তালাশ করে, তা কখনো তার নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে না। আর আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা আলে-ইমরান, ৮৫)

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তাদের কি এমন শরিক আছে, যারা তাদের জন্য এমন দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) নির্ধারণ করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি?’ (সুরা শুরা, ২১) বর্তমানে ইসলামকে আমরা শুধু ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। আমরা মনে করি, ইসলাম হলো শুধু স্রষ্টাভিত্তিক ইবাদতমূলক কাজকর্ম। নামাজ পড়া, রোজা রাখা, হজ করা, জাকাত দেওয়া মানেই ইসলাম। কিন্তু ইসলাম যে পূর্ণাঙ্গ এক জীবনব্যবস্থা, সেটা অনেকে মানতে চায় না।

পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আল্লাহর কোরআন ও নবি মুহাম্মদ (সা.)-এর হাদিস অনুসারে সার্বিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাকে ইসলাম বলা হয়। শুধু নামাজ-রোজাসহ পাঁচটি স্তম্ভেই ইসলাম সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামের পরিধি ব্যাপক, বিস্তৃতি। জন্ম থেকে মৃত্যু, দোলনা থেকে কবর এবং ব্যক্তি ও পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত ইসলাম ব্যপ্ত। আমাদের ইহকালীন-পরকালীন মুক্তি, শান্তির জন্য ইসলামই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আর এ ইসলামকে পূর্ণরূপে অনুসরণ করতে হবে। 

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না । নিশ্চয় সে তোমাদের স্পষ্ট শত্রু। (সুরা বাকারা, ২০৮) দ্বীন শব্দের অর্থ আনুগত্য। আর ইসলাম মানে আত্মসমর্পণ। তাই দ্বীন ইসলাম অর্থ হলো আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের ভিত্তিতে তাঁর আনুগত্যের বিধান। অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম এমন একটি জীবনবিধান, যা আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও তাঁর পূর্ণ আনুগত্য দাবি করে। 

ইসলামের বাস্তব রূপ হচ্ছে  রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন। তিনি মসজিদে ইমামতি করেছেন, মদিনায় রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন, যুদ্ধের ময়দানে সেনাপতিত্বও করেছেন। এসবই তিনি আল্লাহর রাসুল হিসেবে করেছেন। তাই দ্বীন ইসলামকে ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত অর্থাৎ জীবনের সব শাখায় প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য দ্বীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নুহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে ওহি পাঠিয়েছি এবং ইবরাহিম, মুসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হলো, তোমরা দ্বীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না। (সুরা শুরা, ১৩) সুতরাং পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষেত্রেই ইসলাম অনুসৃত হওয়া আবশ্যক। জীবনের  সব ক্ষেত্রেই ইসলামের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করার মধ্যেই ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি নিহিত।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৮ আগস্ট ২০২৫/বিকাল ৫:৪৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit