বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২২ অপরাহ্ন

রসুল (সা.)-এর সাহাবির সংজ্ঞা

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫
  • ৬৪ Time View

ডেস্ক নিউজ : যারা প্রিয় রসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইমানের অবস্থায় স্বচক্ষে দেখেছেন এবং ইমানের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের সাহাবি বলা হয়। আবু জেহেল, উতবা, শায়বা নবী আলাইহিস সালামকে স্বচক্ষে দেখা সত্ত্বেও সাহাবি নয়। কারণ, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছে, কিন্তু ইমান অবস্থায় দেখেনি। এমনিভাবে কোনো ব্যক্তি নবীজিকে দেখেছে এবং ইমান-ইসলামও গ্রহণ করেছে, কিন্তু মৃত্যুর আগে ইমান-ইসলাম বর্জন করে মুরতাদ হয়ে গেছে সেও সাহাবি নয়। সাহাবি হওয়ার জন্য দুটি শর্ত- ১. আল্লাহর রসুলের সঙ্গে ইমান অবস্থায় সরাসরি সাক্ষাৎ হতে হবে, ২. মৃত্যুর সময় ইমান থাকতে হবে।

সাহাবির ফজিলত

যে ব্যক্তি ইমান অবস্থায় প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছেন এবং এক মুহূর্ত হলেও তাঁর সাহচর্যে কাটিয়েছেন, আল্লাহর দরবারে তাঁর মর্যাদা পৃথিবীর সব গাউস-কুতুব ওলি-আবদালের মর্যাদার চেয়ে বহুগুণ বেশি।

মুখদরামিনদের পরিচয় : যারা প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ইমান-ইসলাম গ্রহণ করেছেন, মৃত্যু ইমান অবস্থায়ই হয়েছে, কিন্তু কোনো কারণবশত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার মতো সৌভাগ্য হয়নি, আরবি ভাষায় তাঁদের ‘মুখদরামিন’ বলা হয়।

রসুল-প্রেমিক ওয়ায়েস করোনি (রহ.)

হজরত ওয়ায়েস করোনি (রহ.) ছিলেন সেই মুখদরামিনদের একজন। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর আগে হজরত ওমর ও আলী (রা.) আনহুমাকে এই মর্মে অসিয়ত করে গেছেন যে, ‘আমার ইন্তেকালের পর তোমরা ওয়ায়েস করোনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমার পক্ষ থেকে তাকে সালাম জানাবে এবং তোমরা নিজেদের জন্য তার কাছে দোয়া চাইবে।’

হজরত ওয়ায়েস করোনি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইরানের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ছিলেন নবী-প্রেমিক। তিনি নবীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মদিনায় এসেছিলেন; কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো- তিনি মদিনায় গমনকালে পথিমধ্যে শুনতে পেলেন, প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাত্র কয়েক দিন আগে ইন্তেকাল করেছেন। ফলে তিনি নবীজির বিয়োগ ব্যথায় ব্যথিত হয়ে ক্রন্দন করতে করতে পাগল হয়ে যান। লোকমুখে শোনা যায় তিনি পাগল ছিলেন। আসলে তা ঠিক নয়। হজরত ওয়ায়েস করোনি (রহ.) বহুদিন আগে থেকেই মুসলমান হয়েছিলেন, নবীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সাহাবি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনের মতো সময়-সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। তারপরও নবীজির সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হতে না পারার কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি ভালোবাসি, তিনি আমার মাহবুব (প্রেমাস্পদ)।’ তাঁর সাক্ষাৎ লাভে আমি সাহাবি হতে পারব- এগুলো হলো আমার আবেগ! আর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ হলো- তুমি তোমার মায়ের খেদমত  করো, আমি আমার মাহবুবের নির্দেশকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। ঘটনা হলো- হজরত ওয়ায়েস করোনি (রহ.) নবীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য পাগলপারা হয়ে তাঁর শ্রদ্ধেয় বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করলে তাঁর মা তাঁকে বললেন, প্রিয় বৎস! আমি এখন বৃদ্ধা। কোনো কাজ করার মতো সাধ্য আমার নেই। এ অবস্থায় তুমি হলে আমার একমাত্র সেবাকারী। এখন তুমি যদি আমাকে রেখে নবীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চলে যাও, তবে আমার সেবা করবে কে? আমাকে অজু-গোসলের পানি এনে দেবে কে? তবে তুমি একটি কাজ করতে পার, তোমার অবস্থা জানিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সংবাদ পাঠাও।

তিনি যদি তোমাকে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অনুমতি প্রদান করেন, তাহলে তুমি যেতে পারবে; তখন আমার পক্ষ থেকে কোনো প্রকারের আপত্তি থাকবে না।

মায়ের নির্দেশমতো লোক মারফত সংবাদ পাঠালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বলেছেন, আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সাহাবি হওয়ার চেয়ে মায়ের খেদমত করা বহুগুণে শ্রেয়। কারণ মা অসন্তুষ্ট হলে সাহাবি হয়েও ইমানি মৃত্যু সুনিশ্চিত নয়।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

কিউএনবি/অনিমা/১ আগস্ট ২০২৫/সন্ধ্যা ৬:৫৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit