সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন

মৃত্যুর পর মা-বাবার হক যেভাবে আদায় করব

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : মা-বাবা আল্লাহর অমূল্য এক নিয়ামত। তাই তাঁদের প্রতি সদয় হওয়া এবং তাঁদের অধিকার আদায় করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনের সর্বোচ্চ রূপ হলো, তাঁদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলা শিখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে আমরা আমাদের মা-বাবার জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করব।

ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার রব! আমাকে নামাজ কায়েমকারী বানাও এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের রব! আমাদের দোয়া কবুল করো। হে আমাদের প্রভু! আমাকে, আমার মাতা-পিতাকে এবং সকল মুমিনকে ক্ষমা কোরো, যেদিন হিসাব নেওয়া হবে।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৪০-৪১)

নুহ (আ.)-এর দোয়া কোরআনে এসেছে, ‘হে আমার রব! আপনি আমাকে, আমার মাতা-পিতাকে, যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে এবং সকল মুমিন নর-নারীকে ক্ষমা করে…।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ২৮)

এভাবেই নবীরা মৃত মা-বাবার জন্য দোয়া করেছেন।

মৃত্যুর পরও মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হওয়া

আল্লাহ তাআলা মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও কর্তব্য পালনের আদেশ শুধু তাঁদের জীবিত অবস্থায়ই নয়—মৃত্যুর পরও। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সবচেয়ে উত্তম সওয়াবের কাজ হলো সন্তানের পক্ষে পিতার বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা।’ (সহিহ আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৪৩) মৃত্যুর পর মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যপরায়ণতার কয়েকটি দিক হলো—

১. তাঁদের জন্য দোয়া করা : রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ছাড়া—সদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যা দ্বারা উপকার পাওয়া যায়, অথবা এক ধার্মিক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৩১)

২. তাঁদের অসিয়ত পালন করা, যদি মাতা-পিতা জীবদ্দশায় কিছু অসিয়ত করে যান, বিশেষত তা যদি এক-তৃতীয়াংশ সম্পদের মধ্যে থাকে, তবে তা পালন করা বাধ্যতামূলক। যদি অসিয়তটি ফরজ কোনো কাজের জন্য হয় (যেমন—ঋণ পরিশোধ), তবে দ্রুত পালন করা ফরজ। আর যদি তা নফল বা অতিরিক্ত কোনো ইবাদতের জন্য হয়, তবে তা দ্রুত সম্পাদন করাও সুন্নত ও সওয়াবের কাজ।

৩. তাঁদের ছুটে যাওয়া আমলগুলো আদায় করা, যেমন—মাতা-পিতা যদি রমজানের ফরজ রোজা আদায় করার আগেই ইন্তেকাল করেন, তাহলে সন্তান তাঁদের পক্ষ থেকে কাজা রোজা আদায় করতে পারে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মারা যায়, তার অভিভাবক (সন্তান) তার পক্ষ থেকে রোজা রাখবে।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৫২)

৪. মা-বাবার পক্ষ থেকে সদকা করা : ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদাহ (রা.)-এর মা তাঁর অনুপস্থিতিতে ইন্তেকাল করেন। তিনি এসে রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে ইন্তেকাল করেছেন। আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করি, তা কি তাঁর উপকারে আসবে?’ তিনি বলেন, হ্যাঁ। সাদ বলেন, ‘তাহলে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমার খেজুরবাগানটি আমি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করলাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৫৬)

৫. মাতা-পিতার ঋণ পরিশোধ করা : মাতা-পিতার মৃত্যুর পর তাঁদের ঋণ পরিশোধ করা সন্তানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুমিনের আত্মা ঋণ শোধ না হওয়া পর্যন্ত আটকে থাকে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৭৮)

৬. মাতা-পিতার মানত ও কাফফারা পূরণ করা : মাতা-পিতার মৃত্যুর পর তাঁদের মানত (নজর) ও কাফফারা (বিভিন্ন কসম বা অপরাধের ক্ষতিপূরণমূলক ইবাদত) আদায় করা সন্তানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। এর মধ্যে রয়েছে যেমন—হত্যা বা শপথের কাফফারা, রোজা, হজ, ওমরাহ ইত্যাদি মানতের ইবাদত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘একজন নারী সমুদ্রে বিপদে পড়ে মানত করেছিলেন যে আল্লাহ যদি তাঁকে রক্ষা করেন, তবে তিনি এক মাস রোজা রাখবেন। আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করেন, কিন্তু তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে রোজা রাখেননি। পরে তাঁর আত্মীয় (তাঁর বোন অথবা কন্যা) নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে ঘটনাটি বলেন। নবী (সা.) বলেন, ‘বলুন তো, যদি তার কোনো ঋণ থাকত, আপনি কি তা পরিশোধ করতেন? সে বলল, হ্যাঁ। নবীজি বলেন, তাহলে আল্লাহর ঋণ আরো বেশি পরিশোধযোগ্য।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৫৩)

এসব হাদিস স্পষ্ট করে দেয় যে মাতা-পিতার পক্ষ থেকে মানত ও কাফফারা আদায় করা এবং তাঁদের ঋণ পরিশোধ করা শুধু তাঁদের প্রতি কর্তব্যপরায়ণতা নয়, বরং আল্লাহর হক আদায় করাও বটে।

কিউএনবি/অনিমা/১১ জুলাই ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:৪৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit