আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে শুক্রবারের আকস্মিক বন্যায় এ পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে এখনো আরও ৪১ জন নিখোঁজ আছে বলে জানানো হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে এটা নিশ্চিত।
সোমবার (৭ জুলাই) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
নিহতদের মধ্যে ২৪টি শিশুসহ ৬৮ জনই কেরি কাউন্টির, যেখানে নদী তীরবর্তী এক ক্রিশ্চিয়ান গার্লস ক্যাম্প বন্যার পানিতে ডুবে গিয়েছিল। ক্যাম্প মিসটিক নামের ওই ক্যাম্পে থাকা শিশুদের মধ্যে দশটি মেয়ে শিশু ও একজন কাউন্সেলর এখনো নিখোঁজ।
এদিকে, ওই অঞ্চলে আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও ঝড়ের পূর্বাভাস আছে এবং এর ফলে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হবার আশংকা আছে। এর মধ্যেই ধ্বংসস্তূপ ও কাদার মধ্যে উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বিষাক্ত সাপের মুখোমুখি হয়েছেন উদ্ধারকারীরা।
বন্যায় প্লাবিত হবার তিন দিন পর টেক্সাসে সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম বড় এই তল্লাশি অভিযান পরিণত হয়েছে একটি উদ্ধার অভিযানে। কের কাউন্টিতে যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, এখনো তাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১৮ জন ও ১০ শিশুর আনুষ্ঠানিক পরিচয় জানা যায়নি।
টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট রোববার বলেছেন, প্রতিটি নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ তার কার্যক্রম বন্ধ করবে না। বাচ্চা শিশুরা কিসের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, এটা দেখা ভয়ঙ্করের চেয়ে কম কিছু নয়, ওই এলাকা ঘুরে দেখার পর বলেছেন অ্যাবোট।
উদ্ধার কর্মীদের তল্লাশি অভিযানের মূল কেন্দ্র ছিলো ক্যাম্প মিসটিক। এটি মেয়েদের একটি জনপ্রিয় সামার ক্যাম্প। গুয়াডালুপে নদীর তীরে এই ক্যাম্প বন্যার পানিতে প্লাবিতে হয়ে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
শুক্রবার ওই নদীর পানি মাত্র ৪৫ মিনিটে ২৬ ফুট বেড়ে গেলে ওই বিপর্যয় দেখা দেয়। ওই সময় ক্যাম্পে সবাই ঘুমিয়ে ছিলো। নিহতদের মধ্যে বেশ কিছু তরুণ ক্যাম্পার ও ক্যাম্পটির দীর্ঘদিনের ডিরেক্টর রিচার্ড ডিক ইস্টল্যান্ডও আছেন।
উদ্ধার তৎপরতায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেয়া সাবেক নেভি সিল গ্রেগ ফ্রোয়েলিক বিবিসিকে বলেছেন, ক্যাম্প থেকে নদীর নীচের দিকে আট মাইল দূরেও ভিকটিমদের পাওয়া গেছে বলে শুনেছেন তিনি। জামাকাপড়সহ অন্যান্য দ্রব্য নদীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেছেন তিনি।
এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে ৪ জুলাই ক্যাম্পে কতজন ছিল এবং তাদের মধ্যে কতজন বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
গুয়াডালুপে নদীর পাশ অতিক্রম করে যাওয়া দুই লেনের যেই মহাসড়ক শহরতলী ও কেরভিলে শহরের ক্যাম্প মিসটিককে সংযুক্ত করেছে সেটি এখন ধ্বংসের চিত্র। ভাঙ্গা ঘরবাড়িতে গাছপালা পড়ে আছে এবং ঘরের আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে একেক দিকে। কিছু এলাকায় তারের বেড়া ও পরিষেবা লাইন উপড়ে গেছে।
কের কাউন্টির জন্য বড় একটি বিপর্যয় ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে ফেডারেল সরকারের জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা টেক্সাসে সক্রিয় হয়েছে। তিনি শুক্রবার ওই এলাকায় যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন।
ওদিকে ঘটনাস্থলে স্থানীয় অধিবাসীরাও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারে এগিয়ে এসেছে। অনেকেই ঘরবাড়ি হারানো মানুষদের আশ্রয় দিয়েছে।
আলমা গার্সিয়া নিজে গাড়ি চালিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বাড়িতে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন। আরেকজন অধিবাসী পেরলা লোকজনের কাছ থেকে জামা কাপড় ও জুতা সংগ্রহ করে পরে তা একটি আশ্রয়কেন্দ্রে দিয়েছেন।
ওদিকে বিশ্বজুড়ে শুভাকাঙ্ক্ষীরা এ ঘটনায় শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বার্তা দিয়েছেন। টেক্সাসের নিহতের জন্য রোমে প্রার্থনা করেছেন পোপ লিও ষোড়শ।
কিউএনবি/অনিমা/০৭ জুলাই ২০২৫,/সকাল ৯:৫৩