শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম

আগের দিন কেনা হয় বিষ, পান করতে চেয়েছিলেন ‘চোখ হারানো ৭ জুলাইযোদ্ধা’

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫
  • ৩৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : উন্নত চিকিৎসার অভাবে চোখ হারাতে বসেছেন জুলাই অভ্যুত্থানের আহতরা। সেই ক্ষোভ ও হতাশা থেকেই বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন চোখ হারানো চারজন। এজন্য আগেরদিন স্থানীয় একটি কাঁচাবাজার থেকে পোকামাকড় মারার নাইট্রো নামের রাসায়নিক কেনেন তারা। আত্মাহুতি দিতে চেয়েছিলেন মোট সাতজন।

বিষপানে আত্মহননের চেষ্টা করা চারজন এমন তথ্য জানিয়েছেন। রোববার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এ চার যুবক। তারা হলেন – আলী হামজা শিমুল (১৯), মো. সাগর (১৮), আখতার হোসেন (২২) ও মারুফ আহমেদ (২১)।  

বর্তমানে তারা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সোমবার (২৬ মে) সকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পাঁচতলার ৫২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৬, ৭, ১০ ও ২৭ নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছেন বিষপান করা জুলাই আহতরা। প্রত্যেককেই স্যালাইন পুশ দেওয়া হচ্ছে। তবে তারা প্রত্যেকেই বর্তমানে ঝুঁকিমুক্ত এবং দ্রুত ছাড়পত্র পাবেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বিষপান করা জুলাইযোদ্ধা ও তাদের সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতির ৯ মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আহতদের উন্নত চিকিৎসায় তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেকেই তাদের চোখ পুরোপুরি হারাতে বসেছেন। অনেকের চোখ ইতোমধ্যে তুলেও ফেলা হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে অনেকের চোখ বেঁচে যেত বলে দাবি আহতদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কক্ষে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও (অবসরপ্রাপ্ত) লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামাল আকবারের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা।  

সভায় জুলাইযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা, সামাজিক মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ জীবনমান নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করা হয়। দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে তাদের নানাবিধ সমস্যা, উদ্বেগ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা উন্মোচিত হয়। এ আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল, জুলাইযোদ্ধাদের প্রতি কোনো প্রকার অবহেলা বা অবমূল্যায়ন যেন না হয়, তা নিশ্চিত করা।  

সভায় এই মহান মুক্তিকামীদের জীবনমান উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবও গৃহীত হয়। সেসময় ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই
যোদ্ধারা পরিচালকের কক্ষে ঢুকে ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশা, দুশ্চিন্তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানান। তখন চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক তাদের সঙ্গে পরে কথা বলবেন বলে জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাইরে বের হয়ে পরিচালকের কক্ষের সামনেই বিষপান করে আত্মহুতির চেষ্টা করেন চারজন।

এই ঘটনার পর পরই তাৎক্ষণিকভাবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত যোদ্ধাদের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আইভি ফ্লুয়েড দিয়ে পেট পরিষ্কার করা হয়। ঝুঁকি কেটে যাওয়ার পর রাতে তাদের জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। এদের মধ্যে একজন কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন। তবে তাতে তার চোখের উন্নতি হয়নি।

বিষপান করা চার যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার আগের দিন স্থানীয় একটি কাঁচাবাজার থেকে নাইট্রো নামের রাসায়নিক কিনে আনেন তারা। পরিকল্পনা ছিল সাতজন বিষপান করবেন। কিন্তু চারজন বিষপানের পর বাকি তিনজনের কাছ থেকে রাসায়নিকের বোতল কেড়ে নেওয়া হয়।

বিষপান করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলী হামজা শিমুল গত ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া মডেল থানার সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন। তার বা চোখে পুলিশের ছররা গুলি এসে লাগে এবং সেটি এখনো মাথায় রয়ে গেছে। এরপর থেকে তিনি সেই চোখে ঝাপসা দেখেন। বাবার আলাদা সংসার থাকায় সংসার চালাতেন তিনি। আহত হওয়ার আগ পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় একটি শোরুমে কাজ করে দেখভাল করতেন মা ও ছোট বোনকে।

আলী হামজা বাংলানিউজকে বলেন, হঠাৎ করে একদিনে এই সিদ্ধান্ত নিইনি আমরা। আমরা এটি করতে চাইনি। আমাদের করতে বাধ্য করছে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের চৌধুরী। দশ মাস ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি হাসপাতালে। উন্নত চিকিৎসা তো দিচ্ছেনই না, বরং ফলোআপে রেখে চোখের আরো বেশি ক্ষতি করছেন। এটা নিয়ে যখন আমরা কথা বলি, তখন তিনি করছি, করবসহ নানা বাহানা দেখান। কিছুদিন আগে আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করি বাংলাদেশ কি আমার চিকিৎসা শেষ? তখন উনি বলেন, হ্যাঁ, বাংলাদেশে চিকিৎসা শেষ। তখন আমি উনাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করতে অনুরোধ জানাই। তিনি কাগজপত্র প্রস্তুত করতে বলেন। এরপর কয়দিন পরে তিনি রেফার করতে পারবেন না বলে জানান। বলেন, তোমার যা খুশি তাই করো।  

হামজা বলেন, গতকাল মিটিং চলার সময় আমরা সেখানে যাই এবং চিকিৎসার দাবি জানাই। তখন তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বলেন, তোমাদের যা ভালো লাগে তাই করো। এটা বলার পর আমরা বাইরে এসে বিষপান করি।

সরকার থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পেলেও সেটি দিয়ে সংসার চলছে না আলী হামজার। বরং সেগুলো খরচের পর আরো অনেক টাকা ঋণ করতে হয়েছে তাকে ও তার পরিবারকে।

আলী হামজা বলেন, এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। তাই আগের দিন বিষ কিনে আনা হয়েছে। তবে কোথায় থেকে রাসায়নিকটি কিনে আনা হয়েছে সেটি তিনি বলতে চাননি।

কয়েকদিন আগে সিঙ্গাপুর থেকে চোখের চিকিৎসা করে দেশে ফিরেছেন সিলেটের বিশ্বনাথের বাসিন্দা আখতার হোসেন। তিনিও বিষপান করে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের পুনর্বাসন মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এখন মে মাস চলছে। এখনো কিছু হয়নি। আমার বা চোখে গুলি লেগেছে। সেই চোখে শুধু আলো দেখি। আর কিছু দেখি না।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাকি মোহাম্মদ জাকিউল আলম বলেন, বিষপান করা চারজন ঝুঁকিমুক্ত আছে, ভালো আছে। আশা করছি, দ্রুত তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৬ মে ২০২৫, /রাত ৮:৩৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit