বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

প্রতারণা করেই এতিমের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে শুকুর

খোরশেদ আলম বাবুল,শরীয়তপুর
  • Update Time : শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫
  • ২৬১ Time View

খোরশেদ আলম বাবুল,শরীয়তপুর প্রতিনিধি : এতিমের সম্পত্তি আত্মসাতকারী শুকুর আলী ছৈয়াল স্বভাবগত ভাবেই প্রতারণাকারী ও স্বার্থপর ছিল। পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশী সবাই বিষয়টি জানে। এবার এতিমদের সম্পত্তি আত্মসাত করে খুব নিচে নেমে গেছে সে। এমন কথা বললেন প্রতারক শুকুরের বোন পারভীন আক্তার ও ভাতিজি টুম্পা আক্তার।জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পাচক গ্রামের মৃত টোকানি ছৈয়ালের ছোট ছেলে শুকুর আলী ছৈয়াল এতিম ভাতিজা-ভাতিজিদের ঠকিয়ে জমি আত্মসাতের ঘটনায় সংক্ষুদ্ধ পক্ষ প্রতিবাদ স্বরূপ এসকল কথা বলেন।

পারভীন আক্তার বলেন, শুকুর বয়সে আমার ৪ বছরের বড় ছিল। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই ক্লাসে পড়তাম। শুকুর বখাটেপনা করে বেড়াত। প্রাইমারীর গলিও পেরুতে পারেনি। তাই বাবাও তাকে পছন্দ করতেন না। আমার বড় ভাই রঞ্জু ছৈয়াল তখন ঢাকায় থেকে ছোটখাট ব্যবসা করতেন। বাবার পাশাপাশি বড় ভাইও সংসারের হাল ধরে। সেই সময় বাবা বকুনি খেয়ে শুকুর বাড়ি থেকে বের হয়ে বড় ভায়ের কাছে ঢাকায় যায়। তখন বড় ভাই তার বন্ধু কাশেমের মাধ্যমে শুকুরকে কাজ শেখায়। পরে বাবাকে বুঝিয়ে টাকা নিয়ে শুকুরকে বিদেশ পাঠায়। বিদেশ গিয়ে ৭ বছর পর্যন্ত তার কোন খোঁজ ছিল না। এদিকে মা-বাবা পাগলের মতো হয়ে যায়। পরে লোক মারফত খোঁজ নিয়ে জানা যায় শুকুর প্রবাসে মেয়েদের পাল্লায় পড়েছে। রোজগারের টাকা সেখানেই ব্যয় করে। এক পর্যায়ে সে খালি হাতে ছুটিতে দেশে ফিরে আসেন। ফিরে যাওয়ার সময় আবার আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে শুকুরের বিমান টিকেট কিনে দিতে হয়। প্রবাসে ফিরে গিয়ে সে তার মালিকের সাথে প্রতারণা করে। তখন তার মালিক শুকুরের ভিসা বাতিল করে এবং আইনী প্রক্রিয়ায় বাহরাইনে প্রবেশে ৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠায়। তাহলে সে পরিবার ও সংসারের জন্য কিছু করার সময় পেলেন কখন?

তিনি আরো বলেন, দেশে ফিরে শুকুর বিয়ের জন্য ডজন খানে মেয়ে দেখে। বেকার ছেলের কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়না। পরে আমার মা আমার স্বামীকে অনুরোধ করে শুকুরকে বিয়ে করানোর জন্য। পরে আমার স্বামীর অনেক চেষ্টায় শুকুরকে বিয়ে করাতে সক্ষম হয়। তখনও শুকুর বেকার ছিল। শ্বশুর বাড়িতে যতবার বেড়াতে যেত ততবার আমার স্বামীর কাছে টাকার জন্য ধরণা ধরত। টাকা না পেলে শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত বেড়াতে যেতে পারত না। বিয়ের তিন বছর পরে শুকুর আবার প্রবাসে যায়। তার পর থেকে শুকুরের বউ আরো এক গ্রেট উপরের প্রতারক হয়ে যায়। ধীরে ধীরে শুকুরকে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলে। শ্বশুর পরিবারের সাথে সক্ষতা গড়ে ওঠে। শ^শুর পরিবারের লোকজন এমন ভাবে জামাইর বাড়িতে পরে থাকতেন দেখলে মনে হতো তাদের বাড়িতে খাবার সংকট। আমার বাবা টিভি খবর দেখতে পছন্দ করতেন। শুকুর দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পরেও বাড়িতে একটা টিভি কিনতে পারেনি। আমার বাসার পুরনো টিভি নিয়ে মেরামত করে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমার বাবা দেখেছেন। বাবা ঠান্ডা দুধ খেতে পারতেন না। তবুও একটা গ্যাসের চুলা কেনা হয়নি। বাবায় কষ্ট করে মাটির চুলায় আগুল জ্বালিয়ে দুধ গরম করে খেতেন। আমার বাবার মৃত্যুর ১৫ দিন পরে বাড়িতে গ্যাসের চুলা কেনা হয়। তারও কিছুদিন পরে ৭২ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি কেনা হয়। আমার বাবা একটু হিসেবি ছিলেন। তার স্ট্রীলের আলমারীতে অনেক সঞ্চিত টাকা ছিল। আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে বা যারা দূরে থাকতেন তাদের কাউকে খবর দেওয়া হয়নি। বাবা মারা যাওয়ার পরে তার সঞ্চিত সকল অর্থ লুকিয়ে রেখে শুকুর আমাদের খবর দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে শুকুর আমাদের জানায়, বাবার সঞ্চিত অর্থ ছিল ২৫ হাজার টাকা। পরে সেই টাকা দিয়ে বাবার নামে মিলাদ দেয়। আমার সেই বাবা কি করে শুকুরকে বাড়ির রাস্তা সংলগ্ন অর্ধেক জমি দলিল করে দেয়। যদিও দিতেন তাহলে তার জীবদ্দশায় আমাদের কাউকে বলে যেতেন। বাবার মৃত্যুর ১২ বছর পরে বের করা দলিলে অবশ্যই ঘাপলা রয়েছে। আমি এই সব কথা বলার পরে শুকুর আমাকে ও আমার স্বামীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলার দেওয়ার ভয় দেখায়। এক কথায় শুকুর একটা মানুষ রূপি পশু।

শুকুরের মৃত বড় ভাইর মেয়ে টুম্পা জানায়, শুকুর চাচার রক্তে মাংস আমার বাবার কাছে ঋণি। শুকুরের বাবা যখন তাকে সংসার থেকে বের করে দেয় তখন ঢাকায় গিয়ে আমার বাবার কাছে আশ্রয় নেয়। আমার বাবা তাকে কাজ শিখিয়ে দাদার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার করে বিদেশ পাঠায়। সেই টাকাও আমার বাবাকে পরিশোধ করতে হয়েছে। আমার বাবার মৃত্যুর সংবাদ পেয়েও কোন খোজ খবর নেয়নি বা টাকাও পাঠায়নি। আমরা তখন ছোট। ভাড়া বাসায় ঢাকা থাকতে কষ্ট হত। তাই বাড়ি চলে যাই। আমার বাবা বাড়ির যে ঘরে থাকতেন সেই ঘরে উঠি। সেই ঘরে লারকি (জ্বালানি কাঠ) রাখার অজুহাতে শুকুরের স্ত্রী আমার মা সহ আমাদের বের করে দেয়। এমন কর্মকান্ডের ইতিহাস পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী সকলেই জানে। চাচার কর্মকান্ড বলতে গেলে নিজেদের লজ্জা লাগে। সর্বশেষ আমাদের ৫ এতিম ভাই-বোনদের ঠকিয়ে দাদার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আত্মসাত করল। এখন আমরা আদালতে মামলা করেছি। আদালতে ন্যায় বিচারের দিকে তাকিয়ে থাকব, ইনশাল্লাহ।

কিউএনবি/অনিমা/২৩ মে ২০২৫, /সন্ধ্যা ৬:১৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit