শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

স্বর্ণের উৎপত্তির রহস্য জানালেন বিজ্ঞানীরা

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
  • ১১৭ Time View

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : সোনা ও অন্যান্য ভারী মৌল কোথা থেকে এসেছে—এই প্রশ্ন বহুদিন ধরেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক বড় রহস্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। তবে সম্প্রতি একটি গবেষণায় সোনার উৎপত্তি নিয়ে নতুন তথ্য উঠে এসেছে।  বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, ‘ম্যাগনেটার’ নামে পরিচিত অতিমাত্রায় চুম্বকীয় নিউট্রন তারায় বিস্ফোরণ থেকেই মহাবিশ্বে সোনার সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।

সোনার উৎপত্তি নিয়ে সর্বশেষ যা জানা গেল

ম্যাগনেটার থেকে সৃষ্ট ‘জায়ান্ট ফ্লেয়ার’ বা বিশাল বিস্ফোরণেই তৈরি হয়েছে সোনাসহ অন্যান্য ভারী ধাতু।

মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলোর পুরনো ডেটা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এমনই তথ্য পেয়েছেন।

২০২৫ সালের ২৯ এপ্রিল দ্যা অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পুরোনো মহাকাশ টেলিস্কোপের ডেটা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, ম্যাগনেটার থেকে সৃষ্ট ‘জায়ান্ট ফ্লেয়ার’ বা বিশাল বিস্ফোরণ থেকেই সোনাসহ অন্যান্য ভারী মৌলের উৎপত্তি হতে পারে।

গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ প্যাটেল। তিনি ২০ বছর আগের নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির টেলিস্কোপ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, কীভাবে লোহা, সোনাসহ অন্যান্য ভারী মৌল মহাবিশ্বে সৃষ্টি ও বিস্তার লাভ করেছে।

নাসার ওয়েবসাইটে তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিনি বলেন, ‘এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন—মহাবিশ্বে কঠিন পদার্থ কীভাবে তৈরি হয়েছে। এটি এক ধরনের মজার ধাঁধা, যার উত্তর আমরা এখনো পুরোপুরি পাইনি।’

গবেষকেরা অনুমান করছেন, ম্যাগনেটার বিস্ফোরণ মাধ্যমেই গ্যালাক্সিতে লোহার চেয়ে ভারী মৌলের প্রায় ১০ শতাংশ উৎপন্ন হয়েছে।  

ম্যাগনেটার কী এবং সেখানে সোনা কীভাবে তৈরি হতে পারে?

ম্যাগনেটার হলো এক ধরনের নিউট্রন তারা, যার চৌম্বক ক্ষেত্র অত্যন্ত শক্তিশালী। যখন একটি বিশাল তারা বিস্ফোরিত হয় তখন তার কেন্দ্রে যে অতি ঘন এবং সঙ্কুচিত অংশটি রয়ে যায়, সেটিকেই নিউট্রন তারা বলা হয়।

গবেষণার সহ-লেখক ও লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক, জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী এরিক বার্নসের মতে, প্রথম ম্যাগনেটার গঠিত হয়েছিল প্রায় ১৩.৬ বিলিয়ন বছর আগে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির কিছু পরেই। আর মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে।

মাঝেমধ্যে ম্যাগনেটারে ‘স্টারকোয়েক’ ঘটে—পৃথিবীর ভূমিকম্পের মতো এক ঘটনা। এটি তারার ভূত্বক ভেঙে ফেলে। কখনো এই কম্পনের সঙ্গে ঘটে ‘জায়ান্ট ফ্লেয়ার’, যা মহাকাশে গামা রশ্মি ছড়ায়। গবেষকেরা দেখেছেন, এই ফ্লেয়ারের সময় ম্যাগনেটার থেকে পদার্থ নির্গত হয়—যা আগে লক্ষ্য করা সম্ভব হয়নি।

গবেষকেরা ধারণা করেছেন, ম্যাগনেটারের বিশাল বিস্ফোরণের (জায়ান্ট ফ্লেয়ার) মাধ্যমে সোনা গঠিত হতে পারে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে নিউট্রনগুলো হালকা পরমাণু উপাদানকে ভারী মৌলে রূপান্তরিত করে। একটি মৌলিক উপাদানের পরিচয় নির্ধারিত হয় তার প্রোটনের সংখ্যা দ্বারা। তবে, নিউক্লিয়ার ক্ষয়ের (nuclear decay) মধ্য দিয়ে কোনো পরমাণু অতিরিক্ত একটি নিউট্রন অর্জন করে। যার ফলে সেই নিউট্রন একটি প্রোটনে রূপান্তরিত হতে পারে।

প্রোটনের সংখ্যা পরিবর্তন হলে একটি মৌলের পরিচয়ও পরিবর্তিত হয়ে যায়। নিউট্রন তারাগুলোর ভেতরে নিউট্রনের ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি। যদি কোনো নিউট্রন তারা ভেঙে পড়ে, তবে একক পরমাণুগুলো খুব দ্রুত অনেক নিউট্রন ধরে ফেলতে পারে এবং একাধিক নিউক্লিয়ার ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। এর ফলেই গঠিত হতে পারে ইউরেনিয়ামের মতো অতিভারী মৌল।

এর আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, সোনার উৎপত্তি শুধু নিউট্রন তারার সংঘর্ষ থেকেই হয়; অর্থাৎ কিলোনোভার (দুটি নিউট্রন তারা বা একটি নিউট্রন তারা এবং একটি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষ) ফল হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। ২০১৭ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে একটি নিউট্রন তারার সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করেন এবং দেখতে পান, এমন সংঘর্ষ থেকে সোনা, প্লাটিনাম এবং সিসার মতো ভারী মৌল তৈরি হতে পারে। ধারণা করা হয়, এ ধরনের সংঘর্ষ মহাবিশ্বের ইতিহাসে তুলনামূলকভাবে অনেক পরে ঘটেছে। 

তবে নতুন গবেষণা বলছে, ম্যাগনেটার ফ্লেয়ার মহাবিশ্বের শুরুর সময়ে ঘটেছিল, অর্থাৎ কিলোনোভারও আগে।  যা ইঙ্গিত দেয়, প্রথম সোনা সৃষ্টি হয়েছিল এই ম্যাগনেটার ফ্লেয়ার থেকেই। 

নাসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এই গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নাসা ২০২৭ সালে একটি মিশন পরিচালনা করবে। এতে কম্পটন স্পেকট্রোমিটার অ্যান্ড ইমেজার (COSI) নামের একটি গামা-রে টেলিস্কোপ ব্যবহার করা হবে। এটি গামা রশ্মি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ম্যাগনেটার ফ্লেয়ারে উৎপন্ন মৌল শনাক্ত করতে পারবে।

এই টেলিস্কোপ মিল্কি ওয়ের ভেতর ও বাইরে ঘটে যাওয়া শক্তিশালী ম্যাগনেটার জায়ান্ট ফ্লেয়ার পর্যবেক্ষন করবে। নাসার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই টেলিস্কোপ জায়ান্ট ফ্লেয়ারে সৃষ্টি হওয়া নির্দিষ্ট মৌলগুলিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হবে, যা মৌলগুলোর উৎস সম্পর্কে আরও গভীর ও সুস্পষ্ট ধারণা দিতে সাহায্য করবে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৭ মে ২০২৫, /রাত ১১:২৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit