তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : দিল্লিতে বায়ু দূষণ মোকাবিলার জন্য কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। কিন্তু এই উদ্যোগের বিপুল খরচ এবং বারবার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। শীতকালে দিল্লিকে এক-দু’দিনের স্বস্তি দিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করা কি যুক্তিসঙ্গত?
গত কয়েক বছর ধরেই শীতকালে দিল্লির আকাশ ঢেকে যায় বিষাক্ত ধোঁয়ায়। এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে দিল্লি সরকার আইআইটি কানপুরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ক্লাউড সিডিংয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তিনটি ট্রায়াল করেও এখনও পর্যন্ত দিল্লিতে বৃষ্টির একটি ফোঁটাও ঝরানো যায়নি।
প্রাথমিকভাবে নয়টি ট্রায়ালের জন্য ৩.২১ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। আইআইটি কানপুরের তথ্য অনুযায়ী, দুটি ট্রায়ালের খরচ প্রায় ৬০ লক্ষ রুপি (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২০ হাজার)। বিশেষজ্ঞরা হিসাব কষে দেখাচ্ছেন, যদি পুরো শীতকালে ক্লাউড সিডিং করা হয়, তবে মোট খরচ ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা হতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ, পাইলটের ফি, জ্বালানি এবং ক্লাউড সিডিং-এর উপকরণ যেমন সিলভার আয়োডাইড ফ্লেয়ার ও অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য অতিরিক্ত ৫.৩০ কোটি রুপি।
আইআইটি কানপুরের ডিরেক্টর স্বীকার করেছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে খরচ কিছুটা বেশি হলেও বড় পরিসরে এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে তা কমতে পারে। যদিও তাঁর দাবি, দিল্লির সামগ্রিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ বাজেটের (৩০০ কোটি টাকা) তুলনায় এই খরচ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।
পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতো বিপুল খরচ যে জন্য ব্যয় করা হচ্ছে, তার বৈজ্ঞানিক সফলতা প্রশ্নবিদ্ধ।
দিল্লিতে এই ট্রায়াল ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ মেঘে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্পের অভাবের কথা জানিয়েছেন। শীতকালে বৃষ্টির জন্য ন্যূনতম ৫০-৬০ শতাংশ আর্দ্রতা প্রয়োজন কিন্তু মেঘে ছিল মাত্র ১০-১৫ শতাংশ। এই শুষ্ক আবহাওয়ায় বৃষ্টি-সক্ষম মেঘ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর।
সাধারণভাবে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি মূলত বৃষ্টি বা তুষারপাত বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, সরাসরি বায়ু দূষণ কমানোর এর কোনো শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ক্লাউড সিডিং-এর কার্যকারিতা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। দূষণকারী অ্যারোসল কণা নিজেরাই মেঘে বৃষ্টিপাতের প্রক্রিয়াকে দমন করতে পারে, যা ক্লাউড সিডিং-এর প্রভাবকেও প্রভাবিত করে। পূর্বে অন্ধ্রপ্রদেশে ২০০৪-২০০৯ সালের মধ্যে খরার মোকাবিলায় ১১৯ কোটি টাকা খরচ করেও সফলতা মেলেনি।
পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রতিবার কৃত্রিম বৃষ্টিতে ১৫ কোটি টাকা (দিল্লির মোট ১৫০০ বর্গ কিমি এলাকার হিসাবে) খরচ হলেও তা দিয়ে দূষণ কমে বড়জোর এক বা দু’দিনের জন্য। দীর্ঘমেয়াদী এবং পরীক্ষিত সমাধানের দিকে না গিয়ে শর্টকাট খোঁজা হচ্ছে। সাবেক সরকারি কর্মকর্তারাও একে খরচের দিক থেকে অতিরিক্ত এবং কার্যকারিতার দিক থেকে সীমিত বলে অভিহিত করেছেন। ক্লাউড সিডিংয়ের সাফল্য নিশ্চিতভাবে পরিমাপ করারও কোনো উপায় নেই, কারণ সাধারণ বৃষ্টির থেকে কৃত্রিম বৃষ্টিকে আলাদা করা কঠিন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রতিবেশী রাজ্যগুলির খড় পোড়ানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল কারণের ফলে তৈরি হওয়া দিল্লির এই গভীর সমস্যা মোকাবিলায় ক্লাউড সিডিং একটি দামি জুয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী ও বহুমাত্রিক পদক্ষেপ।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
কিউএনবি/অনিমা/৩০ অক্টোবর ২০২৫,/বিকাল ৩:৪০