ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : পিএসসির অধীনে বিসিএস পরীক্ষা সহ সকল চাকরিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগের জন্য ১৩দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।দাবি বাস্তবায়নে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পিএসসির প্রতিনিধি,শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী এবং আমলাদের সমন্বয়ে একটি ‘চাকরি সংস্কার কমিশন’ গঠনের আল্টিমেটাম দিয়েছে তারা।
আজ ২৮ এপ্রিল (২০২৫) খ্রিস্টাব্দ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম এবং চলচ্চিত্র বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমদ লিখিত বক্তব্যে এই দাবি জানান । এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল মাহমুদ প্রিন্স, শামীম মিয়া প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে জালাল আহমদ বলেন,আমরা ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে পর্যবেক্ষণ করে দেখছি যে,বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে শুধুমাত্র ‘কোটা’ পদ্ধতি সংস্কার বা কোটা বাতিল করলেই সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে না।তাই প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলেও ‘স্বচ্ছতা’ নিশ্চিত করতে হবে।পুলিশ ফেরিফিকেশনেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে।গোঁজামিল ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হলে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ হবে না।
তিনি আরো জানান, “২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করা হলেও পরের বছর থেকে অদৃশ্যমান সকল কোটা বহাল ছিল।ভাইভাতে ২০০ মার্কের মধ্যে কোটাধারী প্রার্থীদের ১৮০ নম্বর দেওয়ার নির্দেশনা ছিল।তাই মেধার ভিত্তিতে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে নিয়োগের জন্য আমরা ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর এবং ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে যৌক্তিক কিছু দাবি জানিয়েছিলাম।আমাদের ৯ দফা দাবির কিছুটা পূরণ হয়েছে।যেমন ভাইভার মার্ক কমানো, আবেদন ফি কমানো ইত্যাদি।বাকি দাবিগুলো পূরণ না হওয়ায় আমরা আন্দোলনে নামি।”
তিনি আরো জানান,”চারদিন অনশন শেষে গতকাল শাহবাগ মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি আমরা। সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। এটা কে আন্দোলন ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা বলে মনে করি।তাই আমরা নতুন করে ১৩ দফা দাবি জানাচ্ছি।”
১৩ দফা দাবি গুলো হলো:
১)সকল চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে পিএসসির অধীনে হতে হবে।সেক্ষেত্রে একাধিক পিএসসি গঠন করতে হবে।
২) নিয়োগ পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে
বিসিএস পরীক্ষা সহ সকল চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা , লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভার মার্ক সহ ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।
৩) নন ক্যাডার বিধি-২০২৩ এমনভাবে সংস্কার করতে হবে যাতে বিসিএস পরীক্ষায় প্রিলি ও রিটেন পাস করে ভাইবা তে উত্তীর্ণ হলেই সবাই সরকারি /আধা সরকারি কোন না কোন চাকরি পায়।
৪)একইদিনে একই সময়ে যাতে সম গ্রেড়ের একাধিক চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা যাতে না হয় সেজন্য পিএসসির চেয়ারম্যান স্যারের তত্ত্বাবধানে একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।
৫) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মানবিক,ব্যবসা এবং বিজ্ঞান এই তিনটি গ্রুপের কথা চিন্তা করে বিসিএস পরীক্ষা সহ সকল চাকরির পরীক্ষায় মানসম্মত এবং ভারসাম্যমূলক প্রশ্ন পত্র তৈরি করতে হবে।
৬) এক বছরের মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।প্রয়োজনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মতো একবার প্রিলিতে উত্তীর্ণ হলে দুইবার রিটেনের সুযোগ দিতে হবে। একবার রিটেন পাশ করলে দুবার ভাইবার সুযোগ দিবে হবে।
৭)প্যানেল বা ওয়েটিং লিস্ট এর ব্যবস্থা করতে হবে।মাইগ্রেশনের মাধ্যমে প্যানেল খেকে নিয়োগ দিলে পদ আর শূন্য থাকবে না।বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দক্ষ জনশক্তি থেকে গেজেটের আগ পর্যন্ত যতগুলো পদ খালি থাকবে, ততগুলো পদ পূরণ করতে হবে।
৮) ক্যাডারে ও নন ক্যাডারের জন্য একই ব্যক্তি কে একই ক্যাডারে একাধিকবার সুপারিশ করা যাবে না।
৯)বিসিএস প্রিলি , রিটেন পাস করার পর ভাইভার আগে ক্যাডার চয়েজ পরিবর্তনের সুযোগ রাখতে হবে। কারণ অনেকেই ক্যাডার চয়েজ গিয়ে ভুল করে ফেলে।
১০)প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর প্রতিটি প্রশ্নের ‘উত্তর’ ওয়েবসাইটে দিতে হবে।
১১) লিখিত পরীক্ষার পর দ্রুত সময়ে খাতা পুন:নিরীক্ষণ করার সুযোগ দিতে হবে।
১২)৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নিতে হবে।
১৩)পিএসসি এর সংস্কার সরকারের হাতে।পিএসসির মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত। সার্চ কমিটি গঠন করার পর গণশুনানি করে সরকারী কর্ম কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ দিতে হবে।
তিনি বলেন,”শুধুমাত্র পিএসসি কেন্দ্রিক বিসিএস পরীক্ষা নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সকল প্রকার চাকরি পরীক্ষার নাম্বার সহ সহ ফলাফল প্রকাশের দাবি জানাই।
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পিএসসির প্রতিনিধি,
শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী এবং আমলাদের সমন্বয়ে একটি চাকরি সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।না হলে আবারও নতুন করে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
কিউএনবি/আয়শা/২৮ এপ্রিল ২০২৫,/রাত ১১:৩৩