শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০২ পূর্বাহ্ন

পহেলা বৈশাখ ঘিরে মহাব্যস্ত কুমিল্লার বাঁশির গ্রামের কারিগররা

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫
  • ২৯৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : বৈশাখীমেলা মানেই বাঁশি। বাংলা লোকসংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। এ বাঁশি তৈরির বিখ্যাত গ্রাম কুমিল্লার হোমনার শ্রীমদ্দী। বাঁশি তৈরিতে বছরজুড়ে ব্যস্ততা থাকলেও বৈশাখকে ঘিরে দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। দেশের তিনভাগের দুইভাগ চাহিদা পূরণ করছেন এখানকার কারিগররা। তাদের বাঁশির চাহিদা রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ অর্ধশতাধিক দেশে।

কারিগর ও বাসিন্দারা বলছেন, ৫ বছর আগেও এ গ্রামে বাঁশি কারিগর পরিবারের সংখ্যা ছিল শতাধিক। বর্তমানে তা এসে ঠেকেছে ৭০টিতে। বাঁশির গ্রাম শ্রীমদ্দীর কারিগরদের ওস্তাদ অনিল বিশ্বাস (৫৫)। বিসিক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাকে এ পর্যন্ত ৭টি দেশে বাঁশির স্টল দিয়ে দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়েছেন। দু’হাতে বাঁশি বানাতে-বানাতে অনিল বলেন, অর্থের অভাবে বিবাহযোগ্য মেয়েটিকে বিয়ে দিতে পারছি না। সারা বছর উন্মুখ হয়ে থাকি কবে বৈশাখ আসবে। বেশি-বেশি বাঁশি বানাব। বিক্রি হবে সারা বাংলার পাইকারদের কাছে। টাকা আসবে। আসেও। কিন্তু মহাজন, এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে হাতে তেমন কিছুই থাকে না। পাশে বসা তার স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ কারও যেন দম ফেলার সময় নেই। সমানে বাঁশি তৈরির বিভিন্ন ধাপের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

একই দৃশ্য দেখা গেল বাঁশিপাড়ার রতন, জয়নাল, আয়নাল, রবীন্দ্র, শ্রীমতি বালা, আরতি বালাসহ সব বাড়িতে। গুড়-মুড়ি খেয়ে দিন-রাত বাঁশি বানিয়ে চলেছেন। ডিজিটাল যুগে বাঁশির কদর কিছুটা কমলেও বন্ধ হয়ে যায়নি। শুরু সেই নবাব সিরাজদৌল্লার আমল থেকে। মেঘনা নদীর কোলঘেঁষে ছোট্ট দ্বীপের মতো হোমনা পৌরসভার দক্ষিণে এই শ্রীমদ্দীর বাঁশির গ্রাম।

এ গাঁয়ে রয়েছে তুখোড় বাঁশি বাজানেওয়ালা বাউল ইব্রাহিম ফকির, ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম, হাসু ফকির, সিরাজুল ইসলাম, করম আলী। এখানের তৈরি উন্নতমানের বাঁশি বাংলার সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে মধ্যপ্রাচ্যের সবকটি দেশ, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্কসহ ইউরোপ, আমেরিকার অনেক দেশে আধুনিক প্রযুক্তিকে হার মানিয়ে রপ্তানি হচ্ছে।

বাঁশির গ্রামে গিয়ে দেখা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নরসিংদী, সোনারগাঁ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে আসা পাইকারদের সঙ্গে। তারা ছোট্ট পিকআপ নিয়ে এসেছেন পূর্বে অর্ডার করে রাখা বাঁশি ডেলিভারি নেওয়ার জন্য। হাজার-হাজার বাঁশি বস্তায় ভরে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। পাইকাররা জানান, বেশিরভাগ বাঁশি কিনতে হয় শ্রীমদ্দী থেকে। বাকিটুকু আসে ময়মনসিংহ থেকে। তবে শ্রীমদ্দীর বাঁশি যেমন ভালো, তেমন দামেও সস্তা।

কথা হয় ৬০ বছর বয়সি বাঁশির কারিগর আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি জানান, ৯ বছর বয়স থেকেই বাঁশি বানাতে জানেন। বাবা-মার বাঁশি বানানো দেখে শিখেছেন। সারা বছরই থাকে বাঁশি তৈরির কাজ। তবে বৈশাখ ঘিরে কাজ থাকে বেশি। চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় শুধু পুঁজির অভাবে।

কারিগররা জানান, বাঁশি তৈরির কাঁচামালের দাম চড়া এবং মৌসুমের সময় টাকা দিয়েও উপযোগী বাঁশ পাওয়া যায় না। আগে ৪০-৫০ হাজার টাকা পুঁজি খাটালেই অনেক লাভ হতো। এখন বাঁশি তৈরির সব সরঞ্জাম কিনতে ২-৩ লাখ টাকা লাগে। অথচ লাভের পরিমাণ খুব কম। সবকিছুর দাম বাড়লেও বাঁশির দাম সেই হারে বাড়েনি।

সরেজমিন বাঁশির গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের বয়স্ক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, সবারই অবসর কাটে বাঁশি তৈরি করে। কেউ ছোট ছোট করে মুলি বাঁশ কাটছেন, কেউ তা সিক দিয়ে ছিদ্র করছেন, কেউ আবার আগুনের ছেঁকা দিয়ে বাঁশির গায়ে নকশা করছেন। তারা যে শুধু জীবিকার জন্য এ কাজ করেন তা নয়; মনের টানেও এই কাজ করছেন বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ।

ব্রিটিশ আমলে প্রতি হাজার বাঁশি ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হতো। খুচরা এক আনায় বিক্রি করতেন দোকানিরা। পাইকারি দাম বেড়ে এখন সাড়ে তিন থেকে পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। প্রতিটি বাঁশি খুচরা ১০ থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলে, হোমনার শ্রীমদ্দীর বাঁশি বিখ্যাত। এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখে বাঁশি বিদেশে পাঠাতে ঋণ সুবিধাসহ সব সহযোগিতা থাকবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১১ এপ্রিল ২০২৫,/রাত ১১:১২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit