আলমগীর মানিক,রাঙামাটি : পাহাড়ের মারমা জনগোষ্ঠির আর্থসামাজিক উন্নয়ন, ঐক্য, শিক্ষার প্রসার, শান্তি, কৃষ্টি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সংরক্ষন ইত্যাদি উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত মারমা সংস্কৃতি সংস্থা মাসস নিয়ে সমালোচনা থামছেনা। পাহাড়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে বহুল পরিচিত মাসস রাঙামাটি জেলায় বর্তমানে কমিটি জটিলতায় মারমা তরুন-তরুনীদের মাঝে প্রতিনিয়ত ক্ষোভের সঞ্চার করছে প্রতিনিয়ত।খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বিগত পতিত স্বৈরাচারি সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী পলাতক নেতা অংসুই প্রু চৌধুরীর প্রত্যক্ষ মদদে দীর্ঘ প্রায় দুই দশক সময়ে মাসসকে নিজেদের কব্জায় রেখে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সারাদেশে স্বৈরাচারি সরকারের ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতির ধারাবাহিকতায় পার্বত্য রাঙামাটিতেও সাংস্কৃতিক সংগঠন মাসসের সকল প্রকার ফান্ড অনিয়মের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মারমা নেতৃবৃন্দ।কাপ্তাইয়ের ওয়া¹ার মারমা জনপ্রতিনিধি আফাইন মারমা জানান, বিগত সময়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের দখলে ছিলো মাসস।
বর্তমানে পলাতক আওয়ামীলীগ নেতা অংসুই প্রু চৌধুরীর প্রত্যক্ষ মদদে মংশ প্রু মারমা গংরা আমাদের ঐতিহ্যবাহি মাসস সংগঠনটিকে নিজেদের দখলে রেখে ব্যাপক অনিয়ম করে সংগঠনটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।এদিকে একাধিক মারমা জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলে জানাগেছে, আওয়ামীলীগের পলাতক নেতাদের সাথে আতাঁত করে বিগত ১২ বছরের অধিক সময় দখলে রাখা মাসস এর সকল প্রকার প্রাপ্ত অর্থ লুটপাট করে নিয়েছে সেসময়ের দোসররা। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও মাসসের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে স্বঘোষিত সভাপতি সেজে জনৈক মংশি প্রু মারমা নিজেকে সভাপতি দাবি করে দেশ-বিদেশে মাসসের নামে অর্থ সংগ্রহ করছে। এতে করে পাহাড়ের অন্যতম বৃহৎ জনপ্রিয় মারমা জনগোষ্ঠির মাসস নামক সংগঠনটিকে দেশ-বিদেশে বিতর্কিত করে তুলছে। এতে করে পাহাড়ে মারমা জনগোষ্টির কৃষ্টি কালচার সম্পর্কে নীতিবাচক ধারনার জন্ম দিবে।
কাউখালীর জনপ্রতিনিধি মং সুই প্রু মারমা, থোয়াই সিং মারমা, রাজস্থলীর মুই থুই অং মারমা, বেতবুনিয়ার পাইচিং মারমা ও কাউখালীর চিংচাউ মারমার সাথে কথা বলে জানাগেছে, দীর্ঘ ১২ ধরে মাসস এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন কালীণ সময়ে মংশি প্রু মারমা সাংস্কৃতিককর্মীদেরকে নিয়মিত বেতন-ভাতা প্রদান করেনি, সাংগ্রাই জলোৎসব নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ও মাধ্যম থেকে কালেকশন করা অনুদানের অর্থের কোনো হিসেব সংরক্ষণ করা হয়নি; বিগত বছরগুলোতে শুধুমাত্র আওয়ামীলীগপন্থী মারমাদের নিয়ে মাসস দখলে রেখেছে; গত ১৮ই আগষ্ট তারিখে স্বৈরাচারি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিয়ে রাঙামাটির মাসস কার্যালয়ে গোপন মিটিং করে মারমা জনগোষ্টিতে বিতর্কিত করার মতো গুরুত্বর অভিযোগও পাওয়া গেছে।এছাড়াও ৫ই আগষ্টের পর রাঙামাটি জেলা পরিষদ থেকে পালিয়ে যাওয়া অংসুই প্রু চৌধুরী কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে বলে অপপ্রচার চালিয়ে সভাপতির পদ বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্ঠার অভিযোগও উঠে মংশি প্রু মারমার বিরুদ্ধে। এদিকে সম্প্রতি তার নিজ এলাকা চিৎমরম থেকে এবং বাঙ্গালহালিয়া থেকেও স্থানীয় সচেতন মারমারা এই দূর্নীতিবাজকে ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে বলেও জানা গেছে। এতো কিছুর পরেও মংশি প্রু মারমা পাহাড়ের বান্দরবান-রাজস্থলী-কাপ্তাইয়ে বিচরণকৃত একটি আঞ্চলিকদলের সাথে আতাঁত করে মারমা যুবক যুবতীদের নানান ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে জানাগেছে।
এদিকে, ইউরোপীয় একটি সংস্থার সাথে মাসসের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে একটি এনজিওর মাধ্যমে তাদেরকে রাঙামাটিতে আনতে ডোনেশন কালেকশন করার উদ্যোগও নিয়েছে মংশি প্রু মারমা। একাধিক মারমা নেতৃবৃন্দ জানান, মূলত পলাতক রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীর প্রত্যক্ষ মদদে মংশি প্রু মারমা এতোসব অপকর্ম করার সুযোগ পাচ্ছে এবং তাকে আইনের আওতায় আনলে অংসুই প্রু চৌধুরীর সঠিক ঠিকানাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন মারমা নেতৃবৃন্দ।উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে মংশি প্রু মারমার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ তোলা হয়েছে সেগুলো ভিত্তিহীন। আমি লেনদেনের সাথে জড়িত ছিলাম না। যারা দায়িত্বে ছিলো তারাই এর উত্তর দিতে পারবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিগত বছরে বিবদমান পরিস্থিতিতে রাঙামাটিতে কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান হয়নি, আমাদের সাংগ্রাই অনুষ্ঠানও যাতে না হয় সেজন্য আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে একটি পক্ষ থেকে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে; এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না। আমি সাংগঠনিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি স্বঘোষিত বিষয়টি সঠিক নয়।
কিউএনবি/অনিমা/১৪ মার্চ ২০২৫,/বিকাল ৫:৫২