ডেস্ক : সম্মানিত পাঠক বৃন্দ, আজকে আলোচনা করব বাইতুল্লাহ অর্থাৎ কাবা ঘরের ইতিহাস। কাবা ঘর সারা পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘর। কাবা সারা দুনিয়ার মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র। আমাদের কিবলা, কাবাকে সামনে রেখে আমরা নামাজ আদায় করি। হজ্বের সময় কাবার তওয়াফ করা হয়। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ কাবা ঘর। যেখানে এক রাকাত নামাজ আদায় করলে মসজিদে নববী ও মসজিদে আল আকসা ব্যতিত অন্য কোন মসজিদে এক লক্ষ রাকাত নামাজ আদায় করার সওয়াব পাওয়া যায়।
(মা’আরেফুল কুরআন) এই ঘরটিই পৃথিবীর সর্ব প্রথম ঘর। যা হযরত আদম (আঃ) নির্মাণ করেছিলেন এবং এই ঘরের রয়েছে অনেক বরকত। ইহা সমগ্র বিশ্ববাসির জন্য হিদায়াত। কুরআনে এসেছে: আল্লাহ তায়ালা বলেন” নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে। তা বাক্কায় (মক্কায়, মক্কার পূর্ব নাম বাক্কা) যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। (সুরা আল ইমরান-৯৬) কি সেই বরকত? প্রিয় পাঠক এই কাবা ঘর যেখানে আছে আজ পর্যন্ত সেখানে খাবারের অভাব হয় নাই।
সেখানে অনুর্বর মরুভূমি হওয়া সত্যেও প্রচুর পরিমাণ ফল ফলে, তরিতরকারি যা কিছু প্রয়োজন সব আছে। তা শুধু মক্কা বাসির জন্য না বরং সারা পৃথিবী থেকে সেখানে লোকজন আসে সবার জন্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবারের ব্যবস্থা আল্লাহ তায়ালা তার বরকতে রেখেছেন। সেই কাবা আজও পর্যন্ত রয়েছে। তবে সংস্করণ করা হয়েছে কয়েক বার, কাবা ঘর এপর্যন্ত মোট পাঁচ বার স্থাপন করা হয়েছে।
দ্বিতীয়বারঃ আল্লাহ রব্বুল আলামীন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে বাইতুল্লাহ শরীফ দ্বিতীয়বার পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেন। সে সময় কাবা ঘরের কোন প্রকার চিন্হ অবশিষ্ট ছিল না। হযরত জিবরাইল (আঃ) এসে হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ (আঃ)কে তাঁর পূর্বস্থানটি দেখিয়ে দেন। অতঃপর হযরত ইব্রাহিম (আঃ)স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে সঙ্গে নিয়ে কাবা গৃহের পুনর্নির্মাণের কাজ আরম্ভ করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন “স্বরণ কর, যখন ইব্রাহিম ও ইসমাইল (আঃ) কাবা গৃহের স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদিগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয় তুমি শ্রবণকারী,সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা-১২৭)
তৃতীয়বারঃ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুওয়্যাতের পাঁচ বছর আগে তৃতীয় বারের মতো কোরাইশগন কর্তৃক পুনর্নির্মাণ হয়। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কর্তৃক নির্মিত সে যুগের কাবা ঘরের কোন ছাদ ছিল না। এর প্রাচীর সমুহও পর্যাপ্ত পরিমাণে উঁচু ছিল না। নয় হাত পরিমাণ এর উচ্চতা ছিল। পালাবদলের খেলায় কাবা ঘর তখন হয়ে পড়েছিল জরাজীর্ণ। নিচু ভূমিতে হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে অভ্যন্তর পরিপূর্ণ হয়ে যেত। এতে কাবা ঘরকে নতুন করে পুনর্নির্মাণ এর পুত অভিপ্রায় উদিত হয় কোরাইশদের অন্তরে।
চতুর্থবারঃ নবী করিম ( সাঃ) যখন জিবিত ছিলেন তখন মাঝে মধ্যেই নবীজী বলতেন যদি কাবা ঘরটা ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করতে পারতাম? এবং হযরত ইব্রাহিম (আঃ) পুর্ণ নির্মিত জায়গাটা কা’বার অন্তর্ভুক্ত করতে পারতাম? নবীজীর এমন কথা বলার কারণ হল, যখন কোরাইশগন কাবা ঘর তৃতীয়বার নির্মাণ করেছিলেন তখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর স্থাপনের কিছু অংশ বাত পরে যায়, নবীজী সে অংশটুকুও কা’বার অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নবীজী তা করেন নাই।তার কারণ হল, নবীজী ভেবেছিলেন যে আমি যদি কাবা ঘর ভেঙ্গে দেই, তাহলে নও-মুসলিমরা অজ্ঞ লোকদের মনে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবে তাই তিনি এ কাজ করেন নাই। (মাআরেফুল কুরআন)। তবে আমার মনে হয় নবীজী এই কাজটি না করেই ভালো হয়েছে। কারণ পরবর্তী লোকেরা মনে করবে এটা অনেক বড় সওয়াবের এর কাজ। নবীজীর সুন্নাত। এ মনে করে সবাই তখন বাইতুল্লাহ শরীফ বারবার ভাঙ্গত। পরবর্তীতে হুজুর (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর ভাগিনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর খিলাফত এর সময় বাইতুল্লাহ শরীফ ভেঙ্গে নবী করিম (সাঃ) ইচ্ছা অনুযায়ী ইব্রাহিমী নির্মাণের উপর কাবা গৃহের পুনর্নির্মাণ করেন।
পঞ্চমবারঃ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর স্বাসণ আমলে আবারও সে বাইতুল্লাহ শরীফ ভেঙ্গে দিয়ে কোরাইশদের স্থাপনের উপর পুনর্নির্মাণ করেন। অতঃপর হযরত ইমাম মালেক (রহ) ফতোয়া দেন যে এখন থেকে কাবা ঘর আর ভাঙ্গা যাবে না। নতুবা যেই ক্ষমতায় আসবে সেই কাবা ঘর ভাঙ্গবে। অতএব, কাবা ঘর আর ভাঙ্গা যাবে না। তার এই দূর দর্শী কাল জয়ী ফতোয়া সারা দুনিয়ায় সকল আলেমসমাজ সাধারণ মুসলমান একবাক্যে মেনে নিয়েছিল। (মা’আরেফুল কোরআন) কাবা ঘর এ পর্যন্ত পাঁচ বার নির্মাণ করা হয়েছে।
ইসলামিক লেখকঃ মুফতী আবুল কালাম আজাদ।
কিউএনবি/আয়শা/১৫ জানুয়ারী ২০২৫,/দুপুর ১:২২