বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩০ অপরাহ্ন

শীতকালের অজু ও গোসলে বিশেষ সতর্কতা জরুরি

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৫৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : বিশেষ করে অজুর কোনো অঙ্গ সামান্যও শুকনা থেকে গেলে তার জন্য হাদিসে জাহান্নামের শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কোনো এক সফরে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের পেছনে পড়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের কাছে পৌঁছলেন। এদিকে আমরা (আসরের) নামাজ আদায় করতে বিলম্ব করে ফেলেছিলাম।

কারণ ফরজ গোসল ও অজুর সময় কোনো অঙ্গের সামান্য থেকে সামান্য পরিমাণ শুকনা থাকলে পবিত্রতা অর্জন হবে না। এ বিষয়ে আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন (রহ.) বলেন, ‘মানুষ যদি পবিত্রতা অর্জনের অঙ্গে তৈলাক্ত বস্তু (তেল, ক্রিম) ব্যবহার করে, তাহলে দেখতে হবে যদি উক্ত তৈলাক্ত বস্তুটি জমাট বাঁধা ও আবরণবিশিষ্ট হয়, তাহলে পবিত্রতা অর্জনের পূর্বে অবশ্যই তা দূর করতে হবে। যদি তৈলাক্ত বস্তু সেভাবেই জমাট বাঁধা অবস্থায় থেকে যায়, তাহলে তা চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছতে বাধা দেবে। এতে করে তখন পবিত্রতা শুদ্ধ হবে না।

কিন্তু যদি তৈলাক্ত বস্তুটির কোনো আবরণ না থাকে কিন্তু পবিত্রতার অঙ্গগুলোর ওপর সেগুলোর চিহ্ন অবশিষ্ট থেকে যায়, তাহলে তাতে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু এ অবস্থায় ওই অঙ্গের ওপর হাত ফিরিয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সাধারণত তৈলাক্ত বস্তু থেকে পানি আলাদা থাকে। সুতরাং হতে পারে, পবিত্রতার ক্ষেত্রে পুরো অঙ্গে পানি পৌঁছবে না।’ (ফাতাওয়াত তাহারাহ, পৃষ্ঠা : ১৭৪)

তাই আমাদের কে শীতকালে অজু ও গোসলের বিষয়ে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে। য়াল রাখতে হবে আমাদের অলসতা বা বেখায়ালিপনার কারণে যেন আমাদের সকল কষ্ট বিফলে না যায়। এ ঋতুতে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো, নামাজ-অজুর প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং দান-খয়রাতে সম্পৃক্ত হওয়া বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ।

শীতকালে ও ইবাদত রয়েছে বিশেষ সুযোগ

শীতকালের দিন ছোট হওয়ার কারণে সহজেই বেশি বেশি রোজা রাখা যায়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

শীতকালের রোজা বিনা পরিশ্রমে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের অনুরূপ (সুনানে তিরমিজি)। অন্যদিকে, রাত বড় হওয়ায় দীর্ঘ সময় নামাজে কাটানো যায়। আল্লাহ বলেন, তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করত এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত (সুরা জারিয়াত: ১৭-১৮)।

এছাড়া, শীতকালে অজু ও গোসলের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। কঠিন শীতেও সঠিকভাবে অজু করা মুমিনদের পাপ মোচনের কারণ। রসুল (সা.) বলেন, ‘কষ্টকর মুহূর্তেও ভালোভাবে অজু করা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম’ (সহিহ মুসলিম)।

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো সওয়াবের কাজ

শীতকালে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে। কেউ রাস্তার পাশে আবার কেউ নদীর তীরে। তাদের জন্য গরম কাপড় ও খাদ্য প্রদান একটি বড় ইবাদত। রসুল (সা.) বলেছেন, যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরাবেন (আবু দাউদ)। মিসকিন, ইয়াতিম ও বন্দীদের খাদ্য দান করার বিষয়েও কুরআনে বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে (সুরা আদ দাহর: ৮)।

শীতকালে নফল ইবাদতের গুরুত্ব

শীতকাল নফল ইবাদতের জন্য বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। বিশেষত, কিয়ামুল লাইল এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় বেশি পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ ভাগে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে বান্দার দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার ডাক গ্রহণ করেন (সহিহ বুখারি)। এই সময় দোয়া, ইস্তেগফার এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনার গুরুত্ব অপরিসীম।

রোজা ও দানের ফজিলতবিশুদ্ধ নিয়তে রোজা রাখা শুধু জান্নাতের কারণই নয়, বরং এটি জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরত্ব সৃষ্টি করে (সহিহ বুখারি)। শীতকালে সংকটাপন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে দান করা, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা, এবং নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া মহান কাজ।

শীতকাল প্রকৃত অর্থেই মুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল। এ ঋতুর প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রোজা রাখা, কিয়ামুল লাইল করা, শীতার্তদের সহায়তা করা এবং অজু-গোসলের ব্যাপারে সতর্ক থাকা আমাদের দায়িত্ব। এ সময়ের ইবাদতগুলো সহজ হলেও ফজিলতে ভরপুর। আল্লাহর কাছে দোয়া, ইবাদত এবং সৎ আমল বাড়িয়ে নিকটবর্তী হওয়া শীতকালীন সময়ের এক মহৎ সুযোগ। রসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল অনুসরণ করে আমাদেরও উচিত এই ঋতুকে ইবাদতের মাধ্যমে সফল করে তোলা।

শীতের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমলপ্রকৃতির বিচিত্র এক উপহার হলো শীতকাল। মুমিনদের জন্য শীতকাল হলো ইবাদতের বিশেষ সুযোগ। রসুলুল্লাহ (সা.) শীতকে মুমিনের বসন্তকাল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কারণ এ ঋতুতে রাত দীর্ঘ হয়, যা কিয়ামুল লাইলের জন্য উপযোগী এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা তুলনামূলক সহজ হয়।আল্লাহ তাআলার গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো প্রতিদিন পাঁচবার তার জন্য নামাজ আদায় করা। আর এর জন্য প্রয়োজন হয় অজু। শীতকালে এই অজুতে একটি ভুলের কারণে নামাজ সুন্দর করে পড়লেও আদায় না হতে পারে।

শীতকালে সাধারণত শরীরের ত্বক শুষ্ক থাকে। যে কারণে চামড়া ভিজতে একটু সময় লাগে। তাই অজু করার সময় ভালোভাবে ডলে ডলে অজুর অঙ্গের চামড়া বা চামড়া ভালোভাবে ভিজাতে হবে। এক চুল পরিমাণ শুকনো থাকলে অজু হবে না। ওই অজু দিয়ে নামাজ পড়ে ফেললে তা পুনরায় আদায় করতে হবে। পবিত্র কোরআনে নাজিল হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে সহজ জিনিসেরই দাবি করেন। তিনি কঠিন ও দুঃসহ জিনিসের প্রত্যাশী নন।’ (সুরা বাকারা ১৮৫) ঋতু পরিবর্তন আল্লাহ তাআলার দেয়া বিধানের অংশ। তিনি পৃথিবীর স্থান ও সময়ভেদে তাপমাত্রায় বৈচিত্র্য এনেছেন। আল্লাহ তাআলা তার দেয়া বিধানাবলিও মৌসুম ও ঋতু উপযোগী করে দিয়েছেন। তার কোনো হুকুমই বান্দার জন্য কষ্টসাধ্য নয়।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৪ জানুয়ারী ২০২৫,/বিকাল ৫:২০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit