মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০৭ পূর্বাহ্ন

জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলার নেপথ্যের ২ কারিগর আটক 

মশিউর রহমান, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি ।
  • Update Time : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
  • ২৯৬ Time View
মশিউর রহমান, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : স্বামী আল-আমীনকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি সিলেটে থাকতেন কুলসুম বেগম। ৪ বছরের সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল তার। গত ২৮ আগস্ট দাম্পত্য কলহের জেরে সিলেট থেকে সাভারে বোনের কাছে চলে আসেন কুলসুম। পথে গাড়িতে দেখা মেলে শফিকুর রহমানের সাথে। শফিক কুলসুমকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যায় রুহুল আমীনের কাছে। রুহুল আমীন ও শফিকুর কৌঁাশলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জীবিত স্বামী আল-আমীনকে মৃত দেখিয়ে ১৩০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাদী হিসাবে উপস্থাপন করেন কুলসুমকে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। অবশেষে পুলিশ তাদের কক্সবাজার থেকে আটক করেছেন। 
শুক্রবার দুপুরে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রকিবুল ইসলাম এর কাছ থেকে আটকের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের আলেকজাহান এসএম পাড়ার মোস্তাক আহমেদের বাড়ি থেকে মিথ্যা মামলার কারিগর রুহুল আমীন ও শফিকুর রহমানকে আটক করেন পুলিশ। এসময় বাদী কুলসুমকেও উদ্ধার করা হয়। স্বামী আল-আমীনকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলার কথা স্বীকার করেছেন কুলসুম। আটকরা হলেন মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার টেপড়া গ্রামের মেছের আলীর ছেলে, একই জেলার ঘিওর থানার ফুলহারা গ্রামের মৃত মাসুম আলীর ছেলে। এছাড়া ভুয়া মামলার বাদী ঘিওর থানার স্বল্পসিংজুরি বাঙলা এলাকার আব্দুল খালেকের মেয়ে কুলসুমকেও আটক করা হয়। 
আল-আমীনের স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, ‘আমি পারিবারিক কলহের জেরে শ্বশুর বাড়ি সিলেট থেকে সাভারে আসি গত ২৮ আগস্টে। আমার স্বামী আমার ভরনপোষণ না দেওয়ায় সাভারে এসে চাকরির খোঁজ শুরু করি। এসময় গাড়িতে পরিচয় হয় শফিকুর রহমান নামের এক ব্যাক্তির সাথে। তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছে জন্ম নিবন্ধন চেয়ে নেয়। পরে একদিন সাভারের সেনা শপিং কমপ্লেক্সে শফিকুর রহমান ও রুহুল আমীন আমাকে ডেকে নেয়। পরে তারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে মামলা প্রস্তুত  করেছে বলে আমাকে জানায়।
আমি রাজি না হলে নানা রকম ভয়ভীতি দেখায় তারা। পরে তারা আমাকে আদালতে নিয়ে উকিলের সামনে কাগজে স্বাক্ষর নেয়। রুহুল আমীন ও শফিকুর রহমান আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে যা বলেছে তাই করতে বাধ্য করেছে। সর্বশেষ তারা আমাকে কক্সবাজারের একটি গ্রামে বাসা ভাড়া করে দিয়ে থাকতে বলে। আমি সেখানেই থাকি, গত ১৯ নভেম্বর কক্সবাজার শফিক আসে। ২১ নভেম্বর পুলিশ রুহুল আমীনসহ কক্সবাজার এসে শফিককে আটক করে। 
সে আরও বলেন, স্বামী দাবি করা জীবিত আল-আমীনই আমার স্বামী। তিনি বেঁচে আছেন। আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে মিথ্যা মামলার বাদী বানিয়েছেন। রুহুল ও শফিক আমাকে যা বলতে বলেছে আমি বাধ্য হয়ে তাই করেছি। এব্যাপারে অভিযুক্ত শফিকুর রহমান বলেন, কুলসুমের সাথে আমার গাড়িতে পরিচয় হয়। পরে তাকে নিয়ে আমি রুহুল আমীনের কাছে যাই। তিনি মামলার সব কাজ করেছেন। এর বেশী কিছু বলতে রাজি হন নি তিনি।
এব্যাপারে রুহুল আমীন বলেন,  কুলসুমই এসে আমার কাছে মামলা করার জন্য সহযোগীতা চেয়েছেন। পরে আমি তাকে সহায়তা করেছি। টাকার বিনিময়ে কতজন  আসামির নাম বাদ দেওয়ার জন্য এভিডেভিড করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনোয়ার মাস্টার, বাশার, ইলিয়াস শাহী ও সারোয়ার তালুকদারের নাম মামলা থেকে বাতিলের জন্য এভিডেভিড করা হয়েছে। তবে তাদের কাছে কোন টাকা নেওয়া হয় নি।
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক এসআই রকিবুল ইসলাম বলেন, তদন্ত করে বাদীকে উদ্ধার করে দুই জনকে আটক করা হয়েছে। তারা জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা দায়েন করেছিলেন। যে মামলায় আসামি করা হয়েছিল ১৩০ জনকে। অথচ বাদীর স্বামী এখনও বেঁচে আছেন এবং আদালতে উপস্থিত হয়ে আল-আমীন সব স্বীকার করেছেন। 
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর বলেন, জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা দায়েরের পিছনের কারিগর হলেন শফিক ও রুহুল আমীন। তাদের আটক করা হয়েছে। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে। 

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২২ নভেম্বর ২০২৪,/বিকাল ৩:৩৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit