বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ১১:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ইরান থেকে ৭০ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরানোর প্রস্তুতি সচিবালয়ে আবারও কর্মচারীদের বিক্ষোভ, কঠোর কর্মসূচির হুমকি ফেসবুকে থাকছে না ভিডিও, আসছে নতুন নিয়ম ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদর দফতরে বিমান হামলার দাবি ইসরায়েলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ারে খালেদা জিয়া ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে এক সিনেমায় কাজের প্রস্তাবে যা বলেন জায়েদ খান বিড়ি শ্রমিক নেতা শামীম হোসেনের স্ত্রী উষা খাতুনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ মাটিরাঙ্গায় বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণ ও সদস্য নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন।  ‘বর্তমান অসাধারণ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়’–আর্জেন্টাইন বিস্ময়বালকের প্রশংসায় শাবি দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা চট্টগ্রাম নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্র সবাইকে রুখে দাঁড়াবে হবে

যশোরের যশ খেজুরের রস চৌগাছায় শীতের খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন গাছিরা

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)
  • Update Time : শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৮ Time View

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় শীতে যশোরের যশ খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করার কাজে ব্যবস্ত গাছিরা। শীতের আগমন বার্তা ঋতু বৈচিত্রে এখন রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে চৌগাছা উপজেলার মাঠে মাঠে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতি মধ্যে খেজুর গুড় জি আই পণ্য হসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এ ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উঠান বৈঠক, গাছি সমাবেশ, খেজুরের গুড়ের মেলা ও ব্যাপক ভাবে খেজুর গাছ রোপণ করা হয়েছে।অল্পকদিনের মধ্যে পুবালি বাতাসে চির সবুজের বুকচিরা অপরুপ সৌন্দর্যে সকলের মন মাতিয়ে তুলবে মিষ্টি খেজুর রস ও গুড়ের ঘ্রাণ। কাক ডাকা ভোরে থেকে চলবে রস সংগ্রহ। সন্ধ্যায় চলবে গাছ পরিচর্যার কাজ। চলতি মৌসুমে কিছুটা আগেই উপজেলার প্রান্তিক গাছিরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ জনপদের গ্রামে গ্রামে সকালের শিশিরের সাথে অনুভুত হচ্ছে মৃদু শীত।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) সরেজমিনে উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের নিয়ামতপুর এলাকায় গেলে চোখে পড়ে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন। এ সময় কথা হয় নিয়ামতপুর গ্রামের মিজানুর মিয়ার ছেলে গাছি আব্দার রহমান,মসলেম আলীর ছেলে বাবু, মৃত এরশাদ আলীর ছেলে নুর হোসেন নুরো, রমজান আলীর ছেলে নাজিম উদ্দীন ও আমজেদ হোসেনের ছেলে গাছি গেসু মিয়ার সাথে তারা জানান, আগাম খেজুরের গুড় পেতে শীত মৌসুমের শুরুতেই গাছ প্রস্তুত শুরু করেছি। এ বছর ১টি গাছ প্রস্তুত করতে মুজুরি ১শ ২০ টাকা। এক জন দিনে ১৫/১৬টি গাছ প্রস্তুত করতে পারে।আর মাত্র কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে গুড় ও পাটালি তৈরি শুরু হবে। চলবে প্রায় ফালগুন মাস পর্যন্ত। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি উপজলার প্রতিটি গ্রামে চোখে পড়ছে। খেজুর রস ও গুড়ের জন্য চৌগছার সুনাম/খ্যাতি রয়েছে দেশ জুড়ে। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ও গাছি। একদশক আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ পতিত জমিতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপ-ঝাড়ের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ।

এখনও শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে গ্রাম বাংলার খেজুর রস-গুড় খেতে। এক সময় সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীন পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য ছিলো চোখে পড়ার মত। গাছির গলাই শুনা যেত “ঠিলে ধুয়েদে বৌ গাছ কাটতে যাবো, খেজুর গাছেচোমর বেরেছে তোরে এনে দেব, সন্ধ্যে রস পেড়ে এনে জাও রেনদে খাবো”। ভোর থেকে শুর করে সারা বেলা যেন গাছিরা মেতে থাকতো রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালী তৈরির কাজে। নলেন গুড়ের সাধ ও ঘ্রাণ ছিল স¤পূর্ণ ভিন্ন। নতুন প্রজন্মের কাছে এখন অবশ্যই রূপকথা মনে হবে। যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ।উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের পেটভরা গ্রামের গাছি আব্দার রহমান বলেন, শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার মহা উৎসবা। শহরে থেকে সকলে গ্রামের বাড়ীতে আসে রস-গুড় খেতে। তবে নতুন করে কেউ আর খেজুর গাছ তোলা-কাটার কাজ করতে চাচ্ছে না। তবে খেজুর গাছ আমাদের অর্থনীতি,সংস্কৃতি, সাহিত্য তথা জীবনধারায় মিশে আছে। এই ঐতিহ্যকে যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করতে হবে। একটি খেজুর গাছ ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। এছাড়া খেজুর পাতা জ্বালানি কাজেও ব্যবহার হয়ে থাকে।

কিন্তু জয়বায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ এখন উপজেলা জুড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে।এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বুক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য ও অপেক্ষার পালা। এ জন্য মৌসুমে আসার সাথে সাথে দক্ষ গাছিদের কদর বাড়ে। আমরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গাছিদের এ পেশায় টিকে থাকার জন্য প্রশিক্ষন, উঠান বৈঠক, সমাবেশ করেছি।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, যশোরের যশ খেজুরের রস এ আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যরক্ষা করতে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও পতিত জমিতে খেজুর গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। খেজুর গুড় ইতি মধ্যে জি আই পণ্য হসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এ পেশার সাথে জড়িত গাছিদের নিয়ে সমাবেশ করে তাদেরকে উৎসহ দেওয়া হচ্ছে। এ মৌসুমেও গুড় মেলা করা হবে।

কিউএনবি/অনিমা/২৬ অক্টোবর ২০২৪,/দুপুর ১২:১৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit