রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:০৩ অপরাহ্ন

দিনে দরবেশ, রাতে চাঁদাবাজ

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৬২ Time View

ডেস্ক নিউজ : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে সাভার ও আমিনবাজার এলাকা দখল, চাঁদাবাজি, সহিংসতার এক নরকরাজ্যে পরিণত করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর অনেকে ভেবেছিলেন এবার স্বস্তি ফিরে আসবে। তাদের আশার গুড়ে বালি ছিটিয়ে আবারও একদল চাঁদাবাজ সক্রিয় হয়েছেন এই এলাকায়।

জানা গেছে, হেমায়েতপুর-আমিনবাজার এলাকায় আবির্ভাব হয়েছে নতুন ‘সম্রাট’ মোশারফ হোসেন মুশার। একসময় আওয়ামী লীগ ঘেঁষা এই নেতা রাতারাতি ভোল পাল্টে এখন বিএনপি নেতা সাজার চেষ্টা করছেন। এলাকায় শুরু করেছেন দখল-চাঁদাবাজি। দিনে চাঁদার বিপক্ষে মাইকিং করেন তিনি, আর রাতের বেলা চাঁদা তোলেন।

গত ৭ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে সাভারের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা হেমায়েতপুরের ফুটপাত, ভ্রাম্যমাণ দোকান, কুলিবিট, বাসস্ট্যান্ড, বাজারঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ কমিটি, গার্মেন্টস ঝুট, হাউজিং ব্যবসাগুলো দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মুশার বিরুদ্ধে।

এই মোশারফ হোসেন মুশা ও তার পাঁচ ভাই মিলে পুরো এলাকার দখল নিয়েছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তারা এক মাসের মধ্যেই নিজস্ব বাহিনী দিয়ে একাধিক তাণ্ডব চালিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসী জানান, সম্প্রতি একটি দখলের ঘটনায় বাধা দিতে গিয়ে মুশার লোকজনের হাতে বেধড়ক মারধরের শিকার হন এস আলম পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার হাসমত, আরিফ, ফিড ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম, মেহেদি ও আব্দুল মজিদ। পরে তারা সবাই হাসপাতালে ভর্তি হন।

হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক্সিম ব্যাংক থেকে এনআরবি ব্যাংক পর্যন্ত সিংগাইর সড়কে থাকা কয়েকশ দোকান থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা তুলছে মোশারফের লোকজন। একইভাবে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে জয়নাবাড়ি সড়কে ও হেমায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের জমিতে নির্মিত মার্কেটে শতাধিক দোকান থেকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা তোলা হচ্ছে। স্কুলের নামে তোলা টাকা চলে যাচ্ছে মোশারফের কাছে। বাদল হোসেন নামের এক ফুটপাথ দোকানি বলেন, মোশারফের লোকজন দিনে চাঁদামুক্ত করতে মাইকিং করেন, আবার সন্ধ্যা হলে তারাই দোকানপাট থেকে চাঁদা তোলেন।

এছাড়া ওই এলাকাটির লক্ষাধিক ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন মোশারফ এবং তার ভাই রকিব ও রাসেল। সম্প্রতি আমিনবাজার এলাকার টিমটেক্স গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা দখল করেন মোশারফের ভাই শরিফ। চেষ্টা চলছে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের এজেআই গ্রুপ, ডেকো গ্রুপসহ বেশকিছু কারখানার ঝুট ব্যবসা দখলের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোশারফ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীব ও তার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আলী বলেন, মুশা আমাদের ইউনিয়ন থেকে ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মৃত সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি কাউকে কোনো টাকা দেননি। এ পর্যন্ত ১৬৯ জন মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও তিনি কাউকে কোনো টাকা দেননি।

তিনি জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সাধারণ সভার মাধ্যমে আমরা তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুর্নীতির দায়ে দুই-তিন দিনের মধ্যে তাকে আমরা পূর্ণাঙ্গ বহিষ্কার করব।

এসব বিষয়ে মোশারফ হোসেন মুশা বলেন, আমি কারও দখলবাজির দায় নেব না। আমি কোনো চাঁদাবাজি ও দখলবাজির সঙ্গে জড়িত নই। চাঁদাবাজি বন্ধে আমি মাইকিং করেছি।

কিউএনবি/অনিমা/১০ অক্টোবর ২০২৪,/দুপুর ২:১৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit