মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৪ অপরাহ্ন

১৬ বছর পর অধ্যক্ষ পদ ফিরে পেলেন আব্দুস সাত্তার

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৭৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : রাজনৈতিক প্রভাবে ৩২৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া সেই অধ্যক্ষ ১৫ বছর ৮ মাস ২৭ দিন পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্বীয় পদে পুনঃবহাল হলেন। রোববার এক আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে তিনি তার দায়িত্ব বুঝে নেন। ঘটনাটি ঘটে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর সেরাজুল হক কলেজে।  

জানা যায়, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রভাবে ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি মাত্র ৩২৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত করা হয় মোহাম্মদপুর সেরাজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারকে। বরখাস্তের পর তিনি নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে পর তার স্বীয়পদে বহাল হলেন।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় এক বর্ণাঢ্য র্যালি ও ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে, পটকা ফুটিয়ে বিভিন্ন স্লোগানে এক আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী তাকে কলেজ ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। পরে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাকে বরণ করে নেন। দুপুর ১২টায় কলেজ মিলনায়তনে তাকে সংবর্ধনা ও এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। 

ওই সমাবেশে চাপাতলী ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- মো. নজরুল ইসলাম সরকার, (অবঃ) সমাজ সেবা কর্মকর্তা আলী হোসেন মিন্টু, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, মো. জালাল খান, জামাল হোসেন, অধ্যাপক আমির হোসেন, দেবিদ্বার উপজেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি এবিএম আতিকুর রহমান বাশার প্রমুখ। আলোচনা শেষে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া ‘মোহাম্মদপুর সেরাজুল হক কলেজে’ আব্দুস সাত্তার ২০০২ সালের ৬ আগস্ট অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের পর রাজনৈতিক প্রভাবে এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে তাকে অধ্যক্ষের পদ থেকে অপসারণের চেষ্টা করেন কলেজ প্রতিষ্ঠাতার পক্ষ। ওই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আব্দুস সাত্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত মামলা জটিলতার কারণে উক্ত কলেজে অধ্যক্ষের শূন্যপদে অধ্যক্ষ নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এসময়ে অন্তত ৫ জন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক ফরহাদ বানু, অধ্যাপক মো. আমিরুল ইসলাম, অধ্যাপক মোবারক হোসেন, অধ্যাপক হুমায়ুন কবির দায়িত্ব পালন করেন। 

অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে দেবিদ্বার জোবেদা খাতুন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ মাসুদ পাখীকে আহবায়ক করে এবং জাফরগঞ্জ মীর আব্দুল গফুর কলেজর অধ্যক্ষ মো. বাবুল ভুইয়া ও দুয়ারীয়া এজি, মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুঁইয়াকে সদস্য করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে কলেজ তহবিলের ৩২৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়।

ওই বরখাস্তের প্রতিবাদে আব্দুস সাত্তার নিম্ন আদাল থেকে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি উচ্চ আদালত আব্দুস সাত্তারকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বকেয়া বেতন- ভাতা প্রদানসহ অধ্যক্ষ পদে বহাল থাকার রায় দেন। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। গত ৩০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার উক্ত আপিল খারিজ করে তার সমুদয় বকেয়া বেতন ভাতাসহ অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহালের রায় বহাল রাখেন।

এ ব্যপারে অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবে আমাকে বিনাদোষে হয়রানি করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত করাকালে আমার বেতন ভাতার অর্ধেক দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেই ভাতা বন্ধ রাখা হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠাতাদের হুমকির মুখে আমি কুমিল্লায় বাসা নিয়ে থাকলেও সেখানেও পুলিশ পাঠানো হয়। উচ্চ আদালতে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে হাইকোর্টের বারান্দা থেকে সন্ত্রাসী ক্যাডার দিয়ে আমাকে তুলে এনে নির্যাতন করে। আমার বিরুদ্ধে ৩২৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হলেও একজন অধ্যক্ষের ড্রয়ারে ৫শ টাকা পর্যন্ত রাখার নিয়ম ছিল।

এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, আদালত আব্দুস সাত্তারকে মোহাম্মদপুর সেরাজুল হক কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে স্বীয়পদে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি কাগজপত্র দেখে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছি। 

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/রাত ১১:২১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit