বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ: এক ম্যাচে ৬ রেকর্ড ঢাকার ১১ স্থানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেফতার ১৩১ ৯ বলের সুপার ওভার, পাঁচ বলে ৫ রান করতে পারেনি বাংলাদেশ চিকিৎসক হয়েও সুরের ভুবনে ঝংকার তুলছেন রানা প্রশাসনে রদবদল নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি তাঁবেদার থেকে দেশ রক্ষার সুযোগ তৈরি হয়েছে: রেজাউল করিম দৌলতপুরে ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে দেহ ব্যবসা : আটক-২ অবিশ্বাস্য থ্রোতে ভাঙল ৪৪ রানের জুটি, বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরালেন মিরাজ ফুলের মতো পবিত্র মানুষগুলোই আপনাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে”–কুড়িগ্রামে পথসভায় ব্যারিস্টার ফুয়াদ কিম বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজনা, প্রতিরক্ষা জোরদারের ঘোষণা দক্ষিণ কোরিয়ার

ডিম-মুরগির দামে যেভাবে কারসাজি করছেন ব্যবসায়ীরা

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৫৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : চলতি সপ্তাহে কৃষি বিপণন অধিদফতর দাম বেঁধে দিয়েছে ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির। কৃষি অধিদফতর দাম বেঁধে দেয়ার আগে যৌক্তিক দাম নিয়ে পোল্ট্রি খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নানামুখী আলোচনা হয়েছে।

সর্বসম্মতিক্রমে ২০২৪ সালের জন্য বাজারে খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লারের দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা, সোনালি মুরগির দাম ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং প্রতি পিস ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা করে ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা বেঁধে দেয়া হয়েছে। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ডিম-মুরগির দাম বেঁধে দেয়া হলেও টানা এ কয়দিন সরেজমিনে বাজার ঘুরে সবশেষ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দেখা যায়, বেশিরভাগ বাজারেই খুচরা পর্যায়ে মানা হচ্ছে না সরকারের বেঁধে দেয়া দাম।
 
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রামপুরা, বাড্ডা, নতুনবাজার, ভাটারা এসব বাজারে এখনো ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮৫-১৯০ টাকায়। সোনালি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায় এবং প্রতি ডজন ডিমের দাম এখনও ১৬০-১৬৫ টাকা। কেন সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম-মুরগি বিক্রি করছেন না জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর টাউন হলের ডিম বিক্রেতারা জানান, সরকার উৎপাদন পর্যায়ে ডিমের দাম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা এবং পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা শূন্য ১ পয়সা ঠিক করে দিলেও, তাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। প্রতিটি ডিম ১২ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।
 
রাজধানীর উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারেও একই অবস্থা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা ডজন এবং সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা ডজন করে। বাজার করতে আসা করপোরেট চাকরিজীবী মনির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ডিমের ডজন হওয়ার কথা ১৪২ টাকা, সেটা ১৪৫ টাকা রাখলেও মানা যায়। কিন্তু বেঁধে দেয়া দামের থেকে ডজনে ২০ টাকা বেশি রাখা কোনোভাবেই যৌক্তিক না। সরকার অবশ্যই ব্যবসায়ীদের লাভ নিশ্চিত করেই দাম বেঁধে দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা মুনাফা হবে না বলে যে মায়াকান্না করছেন তার কোনো ভিত্তি নেই।’
 
হিসাব করে দেখা যায়, ডিম বিক্রেতাদের কথামতো প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা ধরা হলেও খুচরা পর্যায়ে ১৬০ টাকা ডজন ধরে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা ৩৩ পয়সায়। এতে করে একটি ডিমে খুচরা পর্যায়ে বিক্রেতাদের লাভ থাকছে ১ টাকা ৩৩ পয়সা। আর ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা লাভ করছেন ১৬ টাকা করে- যা এক রকমের অযৌক্তিক। এলাকার মুদির দোকানদাররা যুক্তি দিচ্ছেন, পাইকারদের থেকে বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। এদিকে পাইকারদের যুক্তি, খামারিরা বেশি দামে বিক্রি করছে। খামারিদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা ১০ টাকা ৫০ পয়সা করেই ডিম বিক্রি করছেন পাইকারদের কাছে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, কাদের কারসাজিতে অস্থির হচ্ছে ডিমের বাজার?
 
সময় সংবাদকে সঙ্গে নিয়ে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মোহাম্মদপুর টাউন হলে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অভিযানে উঠে আসে পাইকারি বিক্রেতাদের ডিম বিক্রির নানা অনিয়ম। খামারিদের থেকে কম দামে ডিম কিনলেও, প্রমাণস্বরূপ কোনো পাকা রসিদ রাখেন না তারা। বারবার ভোক্তা অধিকার নির্দেশনা দেয়ার পরেও পাকা রসিদ না রাখায় সহজেই বোঝা যায়, কারসাজির মূল হোতাদের বড় অংশ এই পাইকারি বিক্রেতারা।
 
এ ব্যাপারে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ব্যবসায়ীদের পাকা রসিদ রাখতে বলা হলেও তারা কথা শুনছেন না। এদিকে প্রতি পিস ডিমে ১ টাকা করে লাভ করা যৌক্তিক না। যে যুক্তি দিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না, তাদের মুনাফার হিসাব দেখলে সেটি টেকে না।
 
একই দশা মুরগির বাজারেও। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি নিয়ে কারসাজি পৌঁছেছে চরমে। মোহাম্মাদপুর টাউনহল কাঁচা বাজারে সবচেয়ে বড় পাইকারি ব্রয়লার দোকান নিউ প্যারাডাইস ব্রয়লার হাউজে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল্য তালিকায় ব্রয়লারের দাম ১৮০ টাকা লেখা থাকলেও ক্যাশ মেমোতে বিক্রিমূল্য লেখা ১৮৫ টাকা। উৎপাদক পর্যায়ে পাইকারি এ দোকানটির মালিক মুহাম্মদ ইব্রাহিম কেজিপ্রতি ব্রয়লার কিনেছেন ১৬৪ টাকা করে। অর্থাৎ প্রতিকেজি ব্রয়লারে ইব্রাহিম লাভ করছেন ২১ টাকা করে।
 
ভোক্তা অধিকারকে সঙ্গে নিয়ে খোঁজ করে জানা যায়, মোহাম্মদপুর বাজারে ব্রয়লারের বড় সরবরাহ আসে এই দোকান থেকে। মুরগি সরবরাহ দিলেও সঙ্গে কোনো ক্যাশ মেমো দেন না দোকান মালিক। এতে করে ধোঁয়াশা থেকে যায় ক্রয়মূল্য এবং বিক্রয়মূল্যের হেরফেরে। এ ব্যাপারে জব্বার মণ্ডল বলেন, বড় বড় এসব পাইকারি দোকানের মালিকদের অনেকেরই নিজেদের পোল্ট্রি খামার আছে। এরা নিজেদের মুরগি নিজেরা কিনে নিজেরাই আবার খেয়াল খুশিমতো দাম ঠিক করে ইচ্ছামতো মুনাফা করেন। এদের হাত ধরেই কাঁচাবাজারগুলোতে অস্থিরতা বিরাজ করে।
 
খামার পর্যায়ে সরকারের নির্ধারিত দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে জব্বার বলেন, শিগগিরই এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করবে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। কোনাভবেই যেন নিজেদের খেয়ালখুশিমতো দামে ব্যবসায়ীরা ডিম-মুরগি বিক্রি করতে না পারেন সেজন্য অভিযান চলমান থাকবে। আশা করা যায়, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিটি বাজারে সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম-মুরগি বিক্রি হবে।
 
ভোক্তাদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অসাধু মজুতদারীদের সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে দাম বেঁধে দিয়ে কখনোই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আর বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি দাম নির্ধারণ করে দিলে অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিবে। অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ ও কৃষি বিপণন অধিদফতর শুধুমাত্র দাম নির্ধারণ করে বাজার তদারকি না করলে বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠবে এবং করপোরেট গ্রুপগুলো এ সুযোগে আবারও আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠতে পারে।
 
ক্যাব বলছে, ‘সরকারের দফতরে বড় বড় করপোরেট গ্রুপগুলোকে সুযোগ করে দেয়ার কারণে সরকারের উদ্যোগের সুফল প্রান্তিক পর্যায়ে পাওয়া যাবে না। দাম নির্ধারণ বা যেকোনো সংকট হলে শুধুমাত্র এ খাতের বড় করপোরেট গ্রুপগুলোকেই ডাকা হয়। প্রান্তিক, ছোট ব্যবসায়ী ও খামারিদের ডাকা হয় না।’ দাম নির্ধারণ বা যেকোনো সংকট সমাধানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, প্রান্তিক খামারি, ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ক্যাব।
 

এছাড়া সরকারি দফতরগুলো দাম নির্ধারণের সময় বাজার থেকে পর্যাপ্ত তথ্য না নিয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়াই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। সরকার পরিবর্তন হলেও বিগত সরকারগুলোর আমলের দাম নির্ধারণের প্রচলিত পদ্ধতিটা অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নেবার কারণে কোনো সুফল আসছে না বলে দাবি ক্যাবের। শুধুমাত্র বাজারে দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, বাজারে সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত বাজার তদারকি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রয়োজনে বাজার তদারকির পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমিয়ে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ বাড়াতে উদ্যোগী হতে হবে জানায় সংগঠনটি।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/রাত ১০:৩০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit