ডেস্ক নিউজ : বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি এই নির্দেশনা দেন। বাংলাদেশর সাহসী ছাত্র-জনতাকে বীরোচিত অভিনন্দন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আপনাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে গণহত্যাকারী হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আবারও প্রমাণ হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কখনো পরাজয় মানে না, মানতে পারে না এবং মানবে না। কোনো অপশক্তি বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।
‘১৯৭১ এবং ২০২৪- এই দুই মুক্তিযুদ্ধেই জনগণের বার্তা একটি। তাহলো- শর্ত দিয়ে স্বাধীনতা হয় না। স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ স্বাধীনতা অর্জন এবং স্বাধীনতা রক্ষায় কোনো শর্ত মানে না।’ বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে বাংলাদেশে আমি যতো মানুষের সাথে কথা বলেছি, প্রতিটি মানুষের অনুভূতি প্রকাশের প্রথম উচ্চারণ ছিল- বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশ এবং জনগণকে স্বাধীন করতে গিয়ে চোখে মুখে বুকে গুলি আলিঙ্গন করা আবু সাঈদ কিংবা মুগ্ধের মতো হাজারো ছাত্র-ছাত্রী তরুণ-তরুণীকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। গণতন্ত্রের বিজয়ের ইতিহাসে এই মানুষগুলো স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
‘ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মধ্য দিয় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ দেখেছে আরেকটি বিজয়। আমি বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দলমত নির্বিশেষে অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশের বীর জনগণকে।’হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার গৌরবকে কালিমাযুক্ত করার ষড়যন্ত্র এরই মধ্যে আবারও শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র উত্তরণের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে।
শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ধর্ম-বর্ণ পরিচয়ের কারণে কেউ যাতে নিরাপত্তাহীনতায় না থাকে, সবার আগে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’‘একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশ অপরিহার্য। পুলিশ জনগণের শত্রু নয়, বরং হাসিনা নিরাপদে ক্ষমতায় থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের শত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, পুলিশের ভেতরে একটি চক্র ছাড়া অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা এবং সদস্য চাকরিবিধি এবং দেশের আইন মেনেই দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমানে একটি চক্র পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করতে চাইলে তাকে ধরে আইনের হাতে তুলে দিন। কোন পুলিশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ নিয়মে অভিযোগ করুন।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দয়া করে নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। প্রতিহিংসা, প্রতিশোধে লিপ্ত হবেন না। বিচারের ভার নিজ হাতে দয়া করে নেবেন না। কেবল দৃষ্টান্ত অনুসরণ নয়, নিজেই দায়িত্বশীলতা এবং মানবাধিকারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। নৈরাজ্যের পতনে নৈরাজ্য কোনো সমাধান হতে পারে না।’
প্রশাসনকে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা এখন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যে নিয়োগ কিংবা পদন্নতিতে মেধাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।’‘দেশকে আমদানিনির্ভর এবং বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা থেকে আমাদের বের করে আনতে হবে। দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে, কর্মসংস্থান তৈরি করে বেকার সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে।
গার্মেন্টস, শ্রম, ওষুধ, আউটসোর্সিংসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে নিয়ে রফতানি বাজারের আওতা আমাদের যেকোনো মূল্যে বাড়াতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর এবং কর্মমুখী শিক্ষা চালু করে দেশে-বিদেশে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো দক্ষ ও মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আধুনিক এবং বাস্তবসম্মত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে আইনের শাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন এবং সেটা করা হবে।’
দেশে কিংবা প্রবাসে এমন অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন যারা জ্ঞানে বিজ্ঞানে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তাদের অনেকেই যুক্ত হতে চান না উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানান, এইসব গুণী মানুষকে রাষ্ট্র পরিচালনায় এবং নীতি প্রণয়নে অন্তর্ভুক্ত করতে জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ চালু করার প্রস্তাব বিএনপি এরই মধ্যে রেখেছে।
রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় পরিবর্তন আনতে না পারলে বিপ্লবের কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘স্বৈরাচার গণহত্যাকারী হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে হাজারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত বিপ্লবের প্রথম ধাপ সফল হয়েছে মাত্র। এই বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তাই বিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়নের দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
নাগরিক হিসেবে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হিংসা-প্রতিহিংসা নয়, আসুন সবাই মিলে রাষ্ট্র এবং সমাজে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করি। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি দুর্নীতিমুক্ত, নিরাপদ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা গড়ে তোলার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।’
এর আগে বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে অনলাইনে যুক্ত হন তারেক রহমান। তিনি যুক্ত হলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান।
পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ উপলক্ষে এদিন হাজার হাজার নেতাকর্মী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এতে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কিউএনবি/আয়শা/০৭ অগাস্ট ২০২৪,/রাত ৮:০৭