ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ
————————–
আজকাল পাঠক খুব বেশি রবীন্দ্রনাথ পড়ে বলে মনে হয় না। তারা জানে শেষের কবিতা কাব্য নয় ওটা উপন্যাস। এ বই তারা প্রিয়জনকে কিনেও দেয়। অথচ এই বইয়ের গভীরতম তত্ত্বের তালাশ তারা করে না্। আবার শেষের কবিতা নিয়ে যত আলাপ হয় তাঁর যোগাযোগ উপন্যাস নিয়ে ততটা হয় না। লোকে রবীন্দ্র সংগীত শোনে বটে কিন্তু কজনই বা আর চক্ষুজোড়া নিমীলিত করে হৃদয়ঙ্গম করে?
জাগিবে একাকী, তব করুণ আঁখি,
তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি
মম দুঃখবেদন, মম সফল স্বপন
তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম
তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম’
আজকাল এত এত মোটিভেশনাল স্পিকার, বইয়ের রিভিউয়ার কই কবিগুরুর বইয়ের রিভিউ দিতে তো দেখিনা।এত মোটিভেশনের অভাব পড়েছে ,গল্পগুচ্ছ তো কেউ পড়ে না। জানে কেবল পোস্টমাস্টার, হৈমন্তী আর অপরিচিতা। কই মাল্যাদানের কথা তো ওঠে না। একরাত্রি, নিশীথে, দুর্বুদ্ধি, কঙ্কাল এসব ছোটোগল্পগুলো অলক্ষ্যে থেকে যায়। প্রকৃত বাস্তবতার ধারে কাছে নেই আমাদের প্রজন্ম। কবিগুরুর গল্প, উপন্যাস, গানই তো একপ্রকার মোটিভেশন কিংবা মেডিটেশন।
প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথ আমাদের নিশীথিনী-সম। নিরবে হৃদয়ের খুব কাছাকাছি যাকে রাখা যায়। সুখে দুঃখে নিরন্তর যে আমাদের ভাবের ভাষা যোগায় সেই তো আমাদের রবীন্দ্রনাথ।
এ সময়ের মননশীল কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান বলেন প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব ব্যক্তিগত রবীন্দ্রনাথ। সত্যিকার অর্থেই বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক মাত্রই তাদের ব্যক্তিগত রবীন্দ্রনাথ আছে। কারন আমাদের সকল ভালোবাসায় সকল, আঘাত, সকল আশায় তাঁকে নিঃশর্তভাবে পাওয়া যায়।
ব্যক্তিগত রবীন্দ্রনাথ হতে পারে কোনো ছোটগল্প, কোনো কবিতা, কোনো উপন্যাস কিংবা কোনো গান অথবা কোনো উক্তি। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমাদের সমগ্র রবীন্দ্রনাথ নেই। কারণ সমগ্র রবীন্দ্রনাথ এতই বিশাল, এতই বিস্তৃত যে, শরৎচন্দ্রের ভাষায়- ‘তোমার দিকে চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের অন্ত নাই’।
লেখিকাঃ তাবাসসুম আক্তার উর্মি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক মেধাবী ছাত্রী। বর্তমানে শিক্ষকতা পেশা বেছে নিয়েছেন। তিনি গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ভাষা ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্রের প্রভাষক। সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন প্রকাশনায় তিনি লেখালেখি করেন। আজকের কলামটি তার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে অনুমতি স্বাপেক্ষে প্রকাশ করা হলো।
কিউএনবি/অর্চনা/১৩.০৫.২০২৪/ রাত ১১.১৫