বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল কত ধরণের উদ্যোগই না গ্রহন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বেশি বেশি প্রার্থীকে অংশগ্রহন করানো। এ বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে দলীয় প্রতীক ভোট তুলে দেওয়ার পাশাপাশি আরো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ যেন ‘উল্টোরথ’ নিয়ে ছুটে চলছেন। দলটি চাইছে নিজেদের সংগঠনের প্রার্থী কমিয়ে এনে একজনকে দল থেকে সমর্থন দেওয়া। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান এ তিনটি পদেই তারা ‘একক প্রার্থী’ দিতে চায়। আগামী ২১ মে আখাউড়া উপজেলায় ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
এ লক্ষ্যে দলটি গত রবিবার বিকেলে প্রার্থীদেরকে নিয়ে সভা ডাকে। তিন পদে প্রার্থী হওয়া মোট ২৫ জনের মধ্যে ২০জন দলটি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উপস্থিত হয় বলে দলটির সূত্র দাবি করেছে। সূত্রের দাবি, প্রার্থীরা জানিয়েছে এক্ষেত্রে দলের অভিভাবক আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এম.পি যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটাই তারা মেনে নিবেন বলে সভায় প্রার্থীরা জানিয়েছেন।
অপরদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের আরেকটি রাজনৈতিক বলয়ের প্রকাশ্য দেখা মিলেছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওই বলয়টি একটি সভা করে, যা আওয়ামী লীগের সভার পরপরই জেলা পরিষদ ডাক বাংলোতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বলয়ে থাকা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক একাধিক প্রভাবশালী নেতা সেখানে সিদ্ধান্ত নেন যে তাদের পক্ষ থেকে একজনকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ বোরহান উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন, সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মো. নুরুল হক ভুইয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আব্দুল হালিম হেলাল, যুবলীগের সাবেক আহবায়ক মো. মনির হোসেন, জেলা পরিষদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য শেখ বোরহান উদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভায়ও উপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে জোরালোভাবে ছয় থেকে সাতজন প্রার্থী হয়েছেন। বাকি দুই পদেও তিন থেকে চারজন করে প্রার্থীর কথা শুনা যায়। তবে সভার আগ মুহুর্তে ওই তিন পদেই প্রার্থী সংখ্যা হুট করে বাড়তে থাকে। দলীয় একটি সূত্র দাবি করেছে, মূলত আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগে এখন দু’জন নেতা রয়েছেন। একজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ও সাধারন সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজল।
দীর্ঘদিনেও উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি না হওয়ায় মূলত সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফার কথামতোই উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ভোটে চেয়ারম্যান পদে তাকজিল খলিফার একাধিক ঘনিষ্টজন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে তার এক স্বজন প্রার্থী হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘মন্ত্রীর আরেক নির্বাচনী এলাকা কসবাতে ভোট উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর একজন আত্মীয় ভোটে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলেও তিনি কারো পক্ষ নিবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় আখাউড়ায় এক নেতার তার ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে এখন মন্ত্রীর দোহাই দিয়ে প্রার্থীদেরকে এক করতে চাইছেন। আশা করি মন্ত্রী মহোদয় এতে সায় দিবেন না। আর এতে আখাউড়াতে ভোটের মাঠ হবে বেশ উৎসবমুখর।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী অবশ্য দাবি করেছেন, এখানে একক প্রার্থী দেওয়ার কোনো বিষয় নেই। আমাদের দলে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে আমরা ডেকেছি। তারা সবাই একবাক্যে বলেছেন মন্ত্রী মহোদয় যে সিদ্ধান্ত দেন সেটাই তারা মানবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রী মহোদয় যদি মনে করেন যে নির্বাচন উৎমবমুখর পরিবেশে ভোট করতে যদি সব প্রার্থী থাকার প্রয়োজন আছে তাহলে সেটাই হবে। আমরা শুধুমাত্র প্রার্থীদের মতামতের কথা ওনাকে জানাবো।’
কিউএনবি/আয়শা/১৬ এপ্রিল ২০২৪,/সন্ধ্যা ৬:৪৪