শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন

শবেবরাতের গুরুত্ব ও আমল

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১০০ Time View

ডেস্ক নিউজ : আজ পবিত্র শবেবরাত। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে শবেবরাত বলা হয়। শবেবরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। শব মানে রাত, বরাত মানে মুক্তি; শবেবরাত অর্থ মুক্তির রজনি। শবেবরাতের আরবি লাইলাতুল বারাত, লাইলাতুম মুবারাকা। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যরজনি বলা হয়েছে। তবে বিশ্ব মুসলমানের কাছে এ রাত শবেবরাত নামেই বেশি পরিচিত।

শবেবরাত সম্পর্কে আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের। নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী।’ (সুরা দুখান, আয়াত : ১-৩) এ আয়াতের তাফসির সম্পর্কে মুফাসসির আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী (রহ.) বলেন, ওই বরকতময় রজনি হচ্ছে অর্ধশাবানের রাত। তাবেয়ি হজরত ইকরামা (রা.) এবং অন্য তাফসিরকারকদের মতও এটাই যে, সেই বরকতময় রাত হলো মধ্যশাবান তথা শবেবরাত। (তাফসিরে ছাভী, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪০) জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) এ আয়াতের তাফসিরে বলেন, ‘আর বরকতময় রাত হলো লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা শাবানের মধ্য রাত তথা শবেবরাত। কেননা এ রাতে উম্মুল কিতাব আল কোরআন সপ্তম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে তথা প্রথম আসমানে নাজিল হয়েছে।’ (তাফসিরে জালালাইন, পৃষ্ঠা ৪১০) ইমাম আবু জাফর আত-তাবারি (রহ.) বলেন, ‘তাবেয়ি ইকরামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্যশাবানের রাতে বছরের সব ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজিদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে পরে একজনও কমবেশি হয় না।’ (তাফসিরে তাবারি, খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ২২) ইমাম কুরতুবি (রা.) বলেন, ‘এ রাতের চারটি নাম আছে লাইলাতুম মুবারাকা, লাইলাতুল বারাআত, লাইলাতুছ্ ছাক, লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান।’ (তাফসিরে কুরতুবি, খন্ড ১৬, পৃষ্ঠা ১২৬)

ইমাম বাগাভি (রহ.) লেখেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবেবরাতে সব বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবেকদরে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন।’ (তাফসিরে বাগাভি, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২২৮) শবেবরাত সম্পর্কে অনেক হাদিসে বর্ণনা এসেছে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, নবীজি এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। প্রিয়নবী তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের সংখ্যার পরিমাণের চেয়ে বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ৭৩৯) একদিন প্রিয় নবী আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা! শাবান মাসের মধ্যরাতের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে তুমি কী জানো? তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ শাবান মাসের মধ্যরাতের মর্যাদা কী? আল্লাহর হাবিব উত্তরে বললেন, আগামী এক বছরে কতজন আদমসন্তান ভূমিষ্ঠ হবে এবং কতজন আদমসন্তান মৃত্যুবরণ করবে তা এ রাতে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে তাদের আমল মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয় এবং তাদের রিজিক অবতীর্ণ কিংবা নির্ধারণ করা হয়। (বায়হাকি, মিশকাতুল মাছাবিহ-১৩০৫)। হজরত আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ নিসফে শাবান রাত থেকে আবির্ভূত হন। সে রাতে মুশরিক অথবা হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনু মাজাহ, শাবান মধ্যরাতের মর্যাদা অনুচ্ছেদ, হাদিস-১৩৯০)
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ; কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার আসমানে রহমত নিয়ে অবতরণ করেন এবং আহ্বান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছো কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস-১৩৮৪)

তবে শবেবরাতের ফজিলত থেকে এ শ্রেণির মানুষ ক্ষমাপ্রাপ্ত হয় না।

১. মুশরিক ২. হিংসা পোষণকারী ৩. সর্বদা ব্যভিচারকারী ৪. পিতা-মাতার অবাধ্য ৫. মদপানকারী ৬. হারাম মাল ভক্ষণকারী ৭. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎকারী। এ রাতে ক্ষমা পাবে না। তাদের তওবা করতে হবে। তাই আসুন! আমরা কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার দরুদ, সালাম মিলাদ, কিয়াম, ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে শবেবরাতকে আমাদের মুক্তি এবং নাজাতের অসিলা বানিয়ে নিই। আগামী বছরের তাকদির যেন আল্লাহ আমাদের জন্য শুভ এবং সুন্দর করে দেন সেই তৌফিক আল্লাহ আমাদের দিন।

লেখক : খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-২, ঢাকা

কিউএনবি/অনিমা/২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪/দুপুর ২:০২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit