এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় হঠাৎ প্রচন্ড ঠান্ডায় বেড়েছে শীতের কাপড় বিক্রি। চৌগাছায় কয়েক বছরের চেয়ে চলতি শীত মৌসুমে শীতবস্ত্রের এবার ভালোই বেচাকেনা শুরু হয়েছে। ঠান্ডা এমন থাকলে শীতের গরম কাপড় ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ শীত বেড়েছে তাই উপজেলার বিভিনন্ন হাট-বাজারে ফুটপথে কমদামে পুরাতন কাপড়ের দোকানে শীতবস্ত্র কিনতে ভিড় করছেন নিন্ম-আয়ের মানুষ।উপজেলার হাট-বাজার গুলোতে ফুটপথের পাশাপাশি ভ্যান, ট্রাক ও পিকআপে আসা পুরাতন পোশাক বিক্রি বেড়েছে। ক্রেতারা এ সব পাইকারি ও খুচরা দোকান ঘুরে দাম দর করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ভালো টাকার বেচা-কেনা হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
চৌগাছা বাজারের পুরাতন গরম কাপড় ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম বলেন, পুরাতন পোশাক কিনতে আসেন নিন্ম-আয়ের মানুষ। এ বছর পুরাতন জ্যাকেটের বেল পাইকারি কিতনে হচ্ছে প্রায় ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়। এ ছাড়া কার্ডিগান ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, হুডি ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, মাফলার ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, টুপি দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা ও কম্বল বিক্রি হয় ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। বিক্রি করতে পারলে বেলভেদে প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা লাভ হয়।পুরাতন শীতের কাপড় ব্যবসায়ী ফজের আলী ক্লথ স্টোরের মালিক ফজের আলী বলেন, চীন, তাইওয়ান, জাপান ও কোরিয়া থেকে বেশি আসে পুরাতন কাপড়ের গাইড। ঢাকা ও যশোর থেকে এসব কিনে এনে স্বল্প লাভে বিক্রি করি। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বাকি ও নগদে কিনে নিয়ে যান। গেল দু বছর মহামারি করোনার কারণে লাভের মুখ দেখিনি। এবার লাভের আশা করছি। হঠাৎ প্রচন্ড ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় এ ধরণের পুরাতন কাপড়ের চাহিদা বেড়ে গেছে। বিক্রিও বেড়েছে বেশ।
মৌসুমী শীতের খুচরা কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুস ছালাম বলেন, শীতের সময়ে পুরাতন শীতবস্ত্র বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয় হয়। অন্য সময় ক্ষেত-খামারে কামলার কাজ করি এবং ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। শীতে মহাজনের কাছ থেকে পুরাতন শীতবস্ত্র নিয়ে ফুটপথে ও ভ্যানে করে বিক্রি করি। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলে যায়। বাড়িভাড়া,দায়দেনা ও দোকান বাকিও পরিশোধ হয়।ছালামের মতো কয়েক শত মৌসুমী ব্যবসায়ী চৌগাছা. সলুয়া, পুড়াপাড়া, পাশাপোল, ধুলিয়ানী ও হাকিমপুরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে পুরাতন শীতবস্ত্র বিক্রি করেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীতের কয়েকটি মাস শীতের তীব্রতা বেশি থাকে। ফলে গরম কাপড়ের চাহিদা বেশি। জেলা শহর যশোরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ব্যবসাও জমাজমাট হয়ে উঠেছে।
চৌগাছা বাজারে শীতের গরম কাপড় কিনতে আসা ইছাহক আলী বলেন, এবার শীতবস্ত্রের দাম তেমন বাড়েনি। জ্যাকেট, মাফলার ও টুপি কিনেছি বাড়ীতে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর জন্য। স্কুল শিক্ষক লিটন বিশ্বাস বলেন, চৌগাছায় পুরাতন গরম পোশাক কম দামে পাওয়া যায়, প্রতি বছর পরিবারের সবার জন্য গরম কাপড় কিনতে আসি।এদিকে রবিবার (৩১ ডিসেম্বর ও ১৭ পৌষ) হঠাৎ প্রচন্ড ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় শীতের নতুন কাপড়ের দোকানেও বেড়েছে ভিড়।চৌগাছা কাপুড়িয়া পোট্রির মান্নান ক্লথ ষ্টোরের মালিক হাজী আব্দুল মান্নান বলেন, শীতে বেচাকেনা বেশি হলেও বাকি দিতে হয়। দিন দিন ব্যবসা বড় হচ্ছে বাড়ছে বাকীর পরিমান। শীত মৌসুমে কাপড় ব্যাবয়ায় অন্তত এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেই। এনজিওর ঋণ নিয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি।চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা শাহা বলেন, শীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কম্বলসহ বিভিন্ন গরম কাপড় বিতরণ কর হচ্ছে। ইতি মধ্যে আমি নিজে ঘুরে ঘুরে হতদরিদ্র, ভ্যান চালক, অবহেলীত নিন্ম আয়ের মানুষসহ হাসপাতালের রোগীদের মাঝে কম্বলসহ বিভিন্ন গরম কাপড় বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/৩১ ডিসেম্বর ২০২৩/বিকাল ৫:৩৬