মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ফুলের মতো পবিত্র মানুষগুলোই আপনাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে”–কুড়িগ্রামে পথসভায় ব্যারিস্টার ফুয়াদ কিম বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজনা, প্রতিরক্ষা জোরদারের ঘোষণা দক্ষিণ কোরিয়ার মাশরাফি-সাকিবের রেকর্ড ভেঙে রিশাদের ইতিহাস ট্রফি ফিরে পেতে নকভিকে ভারতের চিঠি নোয়াখালীতে বিনা ভোটে বিজয়ী হতে নমিনেশন ফরম ছিঁড়ে প্রার্থীর ভাইকে মারধর পাঁচপুকুরিয়ায় মিঠুন দম্পতির অসামাজিক কার্যকলাপে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী ফুলবাড়ীতে গ্রামপুলিশ কর্তৃক শিক্ষককে মারপিটের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন ফুলবাড়ীতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার যোগদান চৌগাছায় কৃষকের আত্মহত্যা ভূরুঙ্গামারীতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ সমাবেশ

নির্বাহী কমিটির প্রায় ৬০০ নেতা কোথায়?

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১১৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : কারাগারের বাইরে থাকা দলের নেতাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি যেকোনো উপায়ে সফল করতে হবে। এজন্য দলটির হাইকমান্ড শুরু থেকেই চাপে রেখেছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্তদের। আন্দোলনের শুরুতে ‘কৌশলগত’ কারণে আত্মগোপনে গিয়ে কর্মসূচি পালনের কথা বলা হলেও এর সিকিভাগও মাঠে দেখাতে পারেননি নেতারা। এর প্রভাব পড়েছে সবপর্যায়ের কর্মীদের ওপর।

নেতারা অন্তরালে যাওয়ায় কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মনোবলে ধীরে ধীরে চিড় ধরেছে। এতে ঘোষিত হরতাল অবরোধে কয়েক মিনিটের কিছু ঝটিকা মিছিল ছাড়া বড় ধরনের কোনো তৎপরতা নেই বললেই চলে। এ অবস্থার জন্য রাজনৈতিক মামলা, কর্মীদের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হানা, গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘর ছাড়া, আইনি সহায়তা না পাওয়া, আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা না পাওয়াকে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তৃণমূলের কর্মীরা। পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য হরতাল-অবরোধ, পাশাপাশি রাজপথে নেতাদের দৃশ্যমান করার কর্মসূচির চিন্তা করছে হাইকমান্ড।

দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা, অন্তত ১০ জন তৃণমূল নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে দিকনির্দেশনা নিয়ে এলাকায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা দিতে ব্যর্থ হন। আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে নেতারা মাঠে না থাকায় কর্মসূচি বাস্তবায়নও সঠিকভাবে হয়নি। নবম দফায় ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি শেষ হবে আজ সকালে। আগামীকাল বুধবার সকাল থেকে শুরু হবে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি। শেষ কয়েক দফায়, বিশেষ করে গত মধ্য নভেম্বরের পর থেকেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরের হরতাল-অবরোধের প্রভাব কমে আসতে থাকে। এমনকি গতকাল সোমবার যখন নবম দফায় বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি চলছে, তখনো সারা দেশে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছে।
সন্ধ্যার পর দুয়েকটি যানবাহনে আগুন লাগার খবর শোনা গেলেও অবরোধ উপেক্ষা করেই দূরপাল্লার যান চলাচল করেছে। দোকানপাট, শপিং মলও স্বাভাবিক দিনের মতোই খোলা রাখতে দেখা গেছে। লাগাতার কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের মতো ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে কর্মীদেরও। দলটির কর্মীদের পিকেটিং কমে আসাকে এ অবস্থার জন্য দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক মাসে কারাগারের বাইরে থাকা কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো নেতাই রাজধানীতে পিকেটিং করেননি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কয়েকজন নেতা, যুবদল, ছাত্রদল ও মহানগর বিএনপির হাতেগোনা কয়েকটি মিছিল হলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা মেলেনি। মিছিলগুলো এতই স্বল্পজীবী যে, সংবাদকর্মীরাও নাগাল পাননি। গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নেতারা মাঠে না থাকায় কর্মীদের মধ্যেও শক্ত মনোবলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে তারা পিকেটিং করতে রাজপথে নামেননি।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক পর্র্যায়ের দুই নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা দিয়েও মাঠে নামাতে পারছেন না খোদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তারা আরও জানান, আন্দোলনের শুরুতে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষ এক নেতাকে নির্দেশনার জন্য ফোন করেছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। কিন্তু তাকে পাননি। পরে বাধ্য হয়ে আরেক নেতাকে নির্দেশনা দিয়ে মহানগরের ওই নেতার কাছে পৌঁছানোর কথা বলেন। কুমিল্লা দাউদকান্দি নির্বাচনী এলাকায় স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের ছেলে যিনি নিজেও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাকে ফোন করে পিকেটিংয়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্দেশনা দিয়েছিলেন। জবাবে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে এই মুহূর্তে তার পক্ষে রাজপথে থেকে কার্যকর আন্দোলন সম্ভব নয়। ক্ষুব্ধ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পরে ওই থানার অন্য নেতাদের যেকোনো উপায়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পিকেটিং করতে নির্দেশনা দেন।

নেতারা মাঠে না থাকায় সাধারণ কর্মীরাও যে ক্ষুব্ধ সেটি বোঝা যায় তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায়। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার যুবদল কর্মী আল আমিন বলেন, ‘গ্রেপ্তারের অভিযানের মুখে নেতারা আত্মগোপনে। আমরা কার নির্দেশে, কাকে নিয়ে মাঠে নামব। এভাবে আত্মগোপনে থেকে বিএনপিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তারা, এটা ভাবতে হবে। প্রতিবারের মতো এবারও বিএনপিকে ঘরে ঢুকিয়ে একা একা নির্বাচন করছে সরকার। সিনিয়র নেতারা মাঠে থাকলে তার সঙ্গে ১০ জন এমনিতেই থাকেন। প্রায় ৬০০ জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা এখন কোথায়?

ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই জেলার শ্রীনগর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলকর্মী আশিক অভি বলেন, ‘জেলার নেতাদের কাউকেই গত এক মাসে কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এই উপজেলায় সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে এম আবদুল্লাহ নির্বাচন করবেন, সেটা তার ঘনিষ্ঠ নেতারা একদিন বলেছেন। অথচ তিনি তো আন্দোলন শুরুর পর আসেনইনি। ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে আন্দোলনরতদেরও আর্থিকভাবে সহায়তা করেননি।’গাজীপুর জেলার বিএনপির সমর্থক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের সমাবেশে গিয়েছিলেন নির্দেশনা আনতে। সেটি তো হয়নি, বরং পেয়েছি দুটি নতুন মামলা।’

নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সাবেক এক কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিচ্ছিন্নভাবে ঝটিকা মিছিল, দুয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও সড়কে টায়ার জ্বালালেই কর্মসূচি সফল হয় না। বিএনপির মতো একটি দলের কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে সিনিয়র নেতারা যদি এমন আচরণ দেখান, তাহলে কর্মীদের মনোবল এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায়। এমন পরিবেশে সাধারণ কর্মীরা মাঠে টিকে থাকবে কীভাবে?

বিএনপি অবশ্য বলছে তারা চেষ্টা করছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় সেটি অনেকটাই কম। জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘চলতি বছরের ২৮ জুলাই থেকে আজ (গতকাল) পর্যন্ত ২২ হাজার ১৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৯১২টির অধিক, আসামি ৮১ হাজার ৪৩ জন, আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৬২৪ জনের অধিক, মারা গেছেন ২০ জন (সাংবাদিক ১ জন)। ৩২টি মামলায় ৯ জনকে মৃত্যুদ- ও প্রায় ৫৭৯ জনের অধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থেকে মিছিল-মিটিং করছেন। পরিস্থিতি পরিবেশ বুঝে জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা কর্মসূচি পালন করছেন।’

ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, ‘টানা কর্মসূচির কারণে হয়তো কিছুটা গতি কমেছে। কিন্তু আমরা এখনো রাজপথে সক্রিয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। হরতাল-অবরোধ রেখেই আরও নতুন কর্মসূচি আসছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে ওই কর্মসূচিতে তৃণমূল নেতাকর্মীসহ দলের সব স্তরের নেতারাই মাঠে সক্রিয় থেকে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘গ্রেপ্তারের ঝুঁকি থাকায় হয়তো বিএনপির সিনিয়র নেতারা মাঠে থাকতে পারছেন না। তাই স্বাভাবিকভাবেই কর্মীদের মনোবল একটু কমেছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো হরতাল অবরোধের কার্যকারিতা থাকবে না। তাই নতুনভাবে সবকিছু চিন্তা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি শিগগিরই নতুন করে মাঠে নামবে।’

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৫ ডিসেম্বর ২০২৩,/বিকাল ৩:৩৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit