ডেস্কনিউজঃ কাতারের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে শুত্রবার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি বহাল এবং বন্দী মুক্তি অব্যাহত রয়েছে। প্রথম দিন ১৩ ইসরইলি ও ৩৯ ফিলিস্তিনির মুক্তির পর শনিবার ১৪ ইসরাইলির মুক্তির ঘোষণা দেয় হামাস। বিনিময়ে ৪২ ফিলিস্তিনির মুক্তির কথা জানায় ইসরাইল।
প্রথম দিন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তাদের হাতে বন্দী শিশু ও বয়স্ক নারীসহ ১৩ জন ইসরাইলিকে মুক্তি দিয়েছে, এর বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে ৩৯ ফিলিস্তিনি।
রেড ক্রস মুক্তি পাওয়া ইসরাইলিদের গাজা থেকে প্রথমে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে মিসরে নিয়ে যায়, সেখানে মিসরীয় এক হাসপাতালে তাদের মেডিক্যাল চেকআপ করা হয়। এখানে থেকে হেলিকপ্টারে করে তাদের ইসরাইলে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তি পাওয়া এসব ইসরাইলির মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ৯ বছর বয়সী চারটি শিশু এবং ৮৫ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধা রয়েছেন।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ৩৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয় ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। ইসরাইলের তৈরি করা ৩০০ জন নারী ও শিশুর একটি তালিকা থেকে এদের বেছে নেয়া হয়। এই দলে ২৪ জন নারী ও ১৫ জন কিশোর রয়েছেন।
তাদের ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর কাছে বেইতুনিয়া চেকপয়েন্টে নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এখান থেকে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছে ইসরাইলের কারা কর্তৃপক্ষ। মুক্তি পাওয়ার পর একটি বাস এই ফিলিস্তিনিদের বহন করে গন্তব্যে নিয়ে যায়। বাসটি যখন এগিয়ে যাচ্ছিল রাস্তার দুইপাশে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিরা উল্লাসে ফেটে পড়ে।
এ সময় বাসটির জানালা দিয়ে দেখা যায়, মুক্তি পাওয়া কিছু ফিলিস্তিনি নাচছেন, একজন গায়ে ফিলিস্তিনি পতাকা জড়িয়ে রেখেছেন। বাইরে জনতা মোবাইলফোন দিয়ে ছবি তোলার পাশাপাশি ‘আল্লাহু আকবর’ বলে আওয়াজ তুলছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন হামাসের পতাকাও দোলায়। ভয়াবহ একটি যুদ্ধের মধ্যে বিজয় উদযাপনের একটি মুহূর্ত তৈরি হয়।
কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে হওয়া এক চুক্তির আওতায় এদের মুক্তি দেয়া হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী গাজায় যুদ্ধরত পক্ষ দুটির মধ্যে চার দিনের যুদ্ধবিরতি চলছে। শুক্রবার গাজার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে, যা সোমবার পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে।
মুক্তি পাওয়া ইসরাইলিরা ফেরার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এখন আমাদের বন্দীদের মধ্যে প্রথম কয়েকজনকে ফিরিয়ে আনা সম্পন্ন করেছি আমরা। শিশু, তাদের মা ও অন্য নারীরা ফিরে এসেছে। তাদের প্রত্যেকে এক একটি পুরো বিশ্ব। কিন্তু আমি জোর দিয়ে বলছি, এই পরিবারগুলোকে ও আপনাদের- ইসরাইলের নাগরিকদের: আমরা আমাদের সব বন্দীকে ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির পাশাপাশি মিসরের মধ্যস্থতায় তাদের হাতে বন্দী থাকা থাইল্যান্ডের ১০ নাগরিক ও ফিলিপাইনের এক নাগরিককে মুক্তি দেয় হামাস। তবে হামাসের হাতে থাইল্যান্ডের আরো ২০ জন নাগরিক বন্দী আছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বন্দী এসব থাই নাগরিকদের সাথে মানবিক ব্যবহার করা হবে এবং তাদের শিগগিরই মুক্তি দেয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে তারা। পাশাপাশি জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়া থাই নাগরিকরা ৪৮ ঘণ্টা হাসপাতালে থাকার পর দেশে ফিরে যাবে।
চার দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় বিরতির দ্বিতীয় দিন শনিবার আরো ১৩ জন ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দেয়ার কথা জানায় হামাস। শনিবার যাদের মুক্তি দেয়া হয়, তাদের নামের তালিকা আগেই ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কাছে হস্তান্তর করে হামাস। এ দিন ৪২ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়ার কথা জানায় ইসরাইল।
কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তি অনুযায়ী অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চলাকালে মোট ৫০ জন ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দেবে হামাস, এর বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারগুলোতে বন্দি থাকা ১৫০ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবে।
গত ৭ অক্টোবর গাজার সীমান্ত সংলগ্ন ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের নজিরবিহীন হামলা সবাইকে হতবাক করে দেয় এবং সাধারণ ইসরাইলিরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। সেই হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। ওই দিন প্রায় ২৪০ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গিয়ে বন্দী করে রাখে হামাস। এরপর মাত্র পাঁচজন মুক্তি পেয়েছিল। হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে প্রায় সবদিক থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল। তাদের অবিরাম বোমাবর্ষণ ও গোলা হামলায় ১৪ হাজারেরও বেশি গাজাবাসী ফিলিস্তিনি নিহত হয়, এদের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু।
সূত্র : রয়টার্স ও আলজাজিরা
কিউএনবি/বিপুল/২৫.১১.২০২৫/ রাত ১১.১০