আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনে আবারও সেই ১৯৪৮ সালের দাবা। আজ থেকে ঠিক ৭৫ বছর আগে ইহুদিদের আক্রমণে বাড়িঘর ছেড়েছিল লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। দখল করে নিয়েছিল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড। যেখানে তৈরি হয় নতুন এক রাষ্ট্র। নাম দেওয়া হয় ইসরাইল। এর পর থেকে ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ ‘বিপর্যয়’ নেমে আসে। যাকে আরবিতে নাকবা বলা হয়। এত বছর পর আবারও যেন সেই বিপর্যয়ের প্রতিধ্বনি ঘটতে চলেছে দেশটিতে। শনিবার (৭ অক্টোবর) শুরু হওয়া ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের হাত ধরে একই ঘটনার স্মৃতি আবারও জেগে উঠেছে।
অনেকেই ধারণা করছে, এই হুংকারের মাধ্যমে ইসরাইল উত্তর গাজা দখলের পরিকল্পনা করছে। উত্তর গাজাকে পুরোপুরি ফাঁকা করতেই বাসিন্দাদের দক্ষিণ দিকে সরানোর পরিকল্পনার অংশ। কেউ বলছেন ,যতক্ষণ পুরোপুরি ভাবে গাজা ছেড়ে মিসরে শরণার্থী হতে বাধ্য হয় ততক্ষনই হামলা চালাতে থাকবে ইসরাইল। ফিলিস্তিনিদের এই বিশ্বাস আরো পাকাপোক্ত করে দিয়েছে ইসরাইলের একটি ঘোষনা। এক বিবৃতিতে দেশটির সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ অঞ্চল হিসাবে তালিকাভুক্ত এলাকাগুলোতে ফিরে আসা যাবে না।
ইসরাইলের জোরপূর্বক এই বাস্তুচ্যুত পদক্ষেপকে দুঃসহ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। পাশিপাশি এর বিপর্যয়কর পরিণতি সম্পকের্ও সতর্ক করেছে সংস্থাটি । গাজার সরকারী মিডিয়া অফিস মন্তব্য করেছে, ইসরাইলের এ সিদ্ধান্ত তাদের প্রকৃত অপরাধী চেহারা উন্মোচন করেছে। অনেক ফিলিস্তিনিদের কাছে পরিস্থিতিটি তাদের ৯০ দশকের পুরোনো বিপর্যয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। যুদ্ধের পর থেকেই ইসরাইল গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ বহাল রেখেছে।
ছিটমহলে জরুরী চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং দৈনন্দিন জীবনের সরবরাহের প্রবেশ বন্ধ রেখেছে। গাজা শহরের একজন বাসিন্দা আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘তারা আমাদের জল, খাদ্য ও বিদ্যুৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। এখন তারা আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চাপ দিচ্ছে।’ আরও বলেন, এটা দ্বিতীয় নাকবা। কিন্তু দখলদারদের বোঝা উচিত, আমরা আমাদের জমিতে বদ্ধমূল থাকবো এবং আমাদের স্বাধীনতা, শান্তি ও নিরাপত্তার ন্যায্য অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবো।’
ফিলিস্তিনি ভূখন্ড দখলের পর ইসরাইল আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৪৮ সালের মে মাসের ১৮ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ঘোষণার পর পরই ইসরাইলি সেনাবাহিনী নতুন নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দিতে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ৪০০ টিরও বেশি শহর ও গ্রাম ধ্বংস করে ফেলে। প্রাণ ভয়ে ৭ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি পালিয়ে যায়।
বিশেষ করে কেন্দ্রীয় শহর লোড, রামলে এবং উত্তরে গ্যালিলি থেকে পালিয়ে যায় অসংখ্যা বাসিন্দা। নতুন রাষ্ট্রের দাবিকৃত জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তারা। দেশত্যাগের ফলে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু আশেপাশের বিভিন্ন দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের মতে এখন গাজা উপত্যকা, জর্ডান, লেবানন এবং সিরিয়ায় ৫.৯ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি শরণার্থী বসবাস করছে।
কিউএনবি/আয়শা/১৪ অক্টোবর ২০২৩,/রাত ১০:০৫