রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ১০:১৫ অপরাহ্ন

অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত কুড়িগ্রামের পান্ডুল উচ্চ বিদ্যালয় 

রাশিদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ।
  • Update Time : শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৭০ Time View
রাশিদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : অনিয়ম-দুর্নীতি ও সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা, নিয়োগ বাণিজ্য,  কমিটিবিহীন বিদ্যালয় পরিচালনা করা সহ নানা অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রামের পান্ডুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। নিয়মের বালাই না থাকায় এতিমদশায় পরিণত হয়েছে বিদ্যালয়টি। সেই সাথে শিক্ষার মানও তলানিতে ঠেকেছে। ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় প্রতিকার চেয়ে, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান,জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। 

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার উলিপুর উপজেলার পান্ডুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. মোজাফফর হোসেন গত ৩১ আগস্ট ২০১৬ তারিখে অবসরে গ্রহণের কথা থাকলেও তিনি তা না করে ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে  অসৎ উদ্দেশ্যে দুই বৎসরের জন্য চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। তিনি অবসর গ্রহণের পূর্বে মো. রফিকুল ইসলামকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষকের আসনে বসিয়ে দেন। উক্ত অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে উলিপুর সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন উক্ত ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য। যার মামলা নং-২২৯/২০১৬। 

নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়ম ও অর্থ কেলেঙ্কারিতে। এরই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে অডিট কার্য সম্পাদনের নামে সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের নিকট ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ, বিএড টাইম স্কেলের জন্য শিক্ষকদের নিকট হতে টাকা উত্তোলন, অফিস সহায়ক পদে জাহাঙ্গীর আলম নামের ব্যক্তির কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ, অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে বরখাস্ত  এবং ম্যানেজিং কমিটিকে উপেক্ষা করে নিজের বরখাস্ত প্রত্যাহারে নিজেই প্রত্যয়ন করেন এবং স্থগিত হয়ে থাকা বেতন-ভাতা নিয়মবহির্ভূতভাবে উত্তোলন করেন।

অফিস সহায়ক জাহাঙ্গীর আলম ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন,যথাযথভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছি। প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ২০২৩ সালের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষা না নেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে ষষ্ঠ শ্রেণির ৮৬জন এবং সপ্তম শ্রেণির ১১০জন শিক্ষার্থী কাছ থেকে বিনা রশিদে পরীক্ষার ফি বাবদ ৪০০ টাকা এবং অন্যান্য ফি বাবদ ৪০০ টাকা করে জনপ্রতি ৮০০ টাকা হারে ১৯৬জন শিক্ষার্থীর নিকট ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮’শ টাকা হাতিয়ে নেন এবং আত্মসাত করেন।

এছাড়া তিনি সেশন ফি, ফর্তি ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি, জেএসসি, এসএসসির ফরম পূরণ, প্রশংসাপত্র ও সনদ বাবদসহ নানা বিষয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা না করে নিজেই আত্মসাত করেছেন। এছাড়া নিজের স্বার্থে চার বছর থেকে ম্যানেজিং কমিটিবিহীন মনগড়াভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন। উক্ত বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাগর আহমেদ বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক রফিকুল স্যার সেশন ফি এবং পরীক্ষার ফি বাবদ ৭০০ টাকা করে নিলেও আমাদেরকে কোন প্রকার রশিদ দেন নাই।’ 

৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আসমাউল হুসনা বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আমাদের কাছে সেশন ফি ৪০০ টাকা এবং পরীক্ষা ফি ৪০০ টাকা সহ মোট ৮০০ টাকা গ্রহণ করেছেন কিন্তু কোন রশিদ দেন নাই এবং লিখিত পরীক্ষাও নেন নাই।’ বিদ্যালয়ের অডিট করতে অর্থ প্রদানকারী অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক আকতারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সকল শিক্ষকের কাছ থেকে ২০১৭ সালে প্রধান শিক্ষক অডিটের কথা বলে এক মাসের করে বেতন কর্তন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে কখন কিভাবে অডিট হয়েছে কিনা তা আমরা জানি না।’ 

প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অবৈধ দাবি করে মামলাকারী বাদী মো.  আব্দুল জলিলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেন অবসরে যেয়ে আবারো ম্যানেজিং কমিটির কাছে দুই বছর চাকুরির মেয়াদ বাড়িয়ে নেন। যদিওবা শিক্ষা বোর্ড সেটির অনুমোদন দেন নাই। এমতাবস্থায় ওই অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবার কিভাবে রফিকুল ইসলামকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন তা আমার বোধগম্য নয়। সেটিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছি যা এখনো কোর্টে চলমান। আমরা আশা করি বিজ্ঞ আদালত ন্যায় বিচার করবেন।’

এ প্রসঙ্গে পান্ডুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। একটি মহল আমাকে স্কুল থেকে সরানোর জন্য পাঁয়তারা করছে। তারাই মূলত আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অভিযোগ করেছেন।’কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামছুল আলম বলেন, ‘পান্ডুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত টিম গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সরেজমিনে অভিযোগের সতত্য পেলে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন দেয়া হবে।’ 

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ আজাদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নিয়মের বাইরে বিদ্যালয় পরিচালনার কোন সুযোগ নেই। প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কিউএনবি/আয়শা/০৬ অক্টোবর ২০২৩,/বিকাল ৪:৩৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit