ডেস্ক নিউজ : গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি, তাই আমি শঙ্কিত নই। আমাকে ডাকা হয়েছিল, তাই এসেছিলাম। যেহেতু এটা আইনগত বিষয়, তাই বিস্তারিত আমার আইনজীবী বলবেন।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ মামলার আসামি হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। তিনি দুদকের নোটিস পেয়ে গতকাল সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে দুদক কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় তার আইনজীবীরা সঙ্গে ছিলেন। তাকে প্রায় এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেলা ১১টার দিকে দুদক কার্যালয়ে থেকে বের হন ড. ইউনূস।
ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ড. ইউনূসের নামে একটা মামলা করেছে দুদক। বলা হয়েছে, শ্রমিকদের ৪৩৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে শ্রমিকরা তাদের অগ্রিম হিসেবে ২৬ কোটি টাকা দাবি করেছেন। শ্রমিকরা বলেছেন, ২০১৭ সালে আমরা মামলা করেছি। হাইকোর্টের নির্দেশে এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে শ্রমিকদের ৪৩৭ কোটি টাকা তাদের দিতে সম্মত হয়েছি। কারণ ওই টাকার জন্য শ্রমিকরা আবেদন করেন। ট্রেড ইউনিয়ন বলছে, আমাদের টাকাটা অ্যাডভান্স দিতে হবে। না হলে আমাদের আইনজীবী কাজ করবেন না। তখন শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন তাদের আন্ডারটেকিং নিয়ে ২৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।’
কিন্তু দুদক বলছে, ‘আপনারা জালিয়াতি করে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে নিয়ে নিয়েছেন। ড. ইউনূস সাহেব বললেন, এটা তো দুপক্ষের সমঝোতা। টাকা দেওয়া হয়েছে, শ্রমিকের সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী যেটা হাইকোর্ট অনুমোদন করেছে।’ তিনি বলেন, শ্রমিকের প্রাপ্য টাকা দেওয়া হয়েছে। এটা জালিয়াতি হতে পারে না। হাইকোর্ট নির্ধারণ করেছে। আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে সেটা দিয়ে দিয়েছি। এখানে জালিয়াতির কোনো প্রশ্ন নেই, কিছু করার নেই। কারণ ৪৩৭ কোটি টাকা হাইকোর্টের আদেশ মোতাবেক ওইটা শ্রমিকের টাকা হয়ে গেছে। শ্রমিকদের টাকা থেকে তাদের অ্যাডভান্স দেওয়া হয়েছে উকিলের ফি এবং মামলার খরচ তারা আগে নিয়েছে। এটা তো জালিয়াতি হয় না। জালিয়াতি হয় তখন যখন একপক্ষ আরেক পক্ষের স্বাক্ষর করে জাল করে কোনো ডকুমেন্টস করে। এখানে দুপক্ষ উপস্থিত হয়ে চুক্তি করেছে। দুপক্ষ যখন চুক্তি করে সেটা তো জাল হতে পারে না।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে স্যার বলেছেন, ‘এগুলো কোনো অপরাধ না। এগুলো হয়েছে দুপক্ষের সিদ্ধান্তে, কারণ সমঝোতার জন্য শ্রম আইনেই বলা আছে। যেই অভিযোগটা এনেছে সেটা ভিত্তিহীন, এটা ভুল বোঝাবুঝি, আপনারা এটা বুঝতে পারেননি। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এই ৪৩৭ কোটি টাকা শ্রমিকের, এটা তো আত্মসাতের বিষয় না। সুতরাং ড. ইউনূসকে যে আসামি করা হয়েছে, এখানে কোনো মামলাই হয় না। চুক্তি হয়েছে দুপক্ষের স্বাক্ষরিত। এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে। তাকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে।’
ড. ইউনূসের ভাষ্যমতে তিনি অপরাধ করেননি, তাহলে দুদক কী তাকে হয়রানি করছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘তদন্ত চলছে, আইনগতভাবে তাকে হয়রানির কোনো সুযোগ নেই। গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারীরা তাদের পাওনা না পাওয়ার মর্মে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর এটি দুদকের কাছে পাঠায়। দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় তদন্ত শুরু করে।’তাকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয় জানিয়ে সচিব বলেন, ‘বক্তব্য রেকর্ড করার বিষয়টি হলো যখন কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তার অবস্থানটি তিনি যেন পরিষ্কার করতে পারেন, সেজন্যই তাকে বক্তব্য দিতে ডাকা হয়।’
দুদক সচিব বলেছেন, ‘দুদক আইনে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বলা আছে, মামলার আসামিরা যদি সাক্ষী-প্রমাণ বা আলামত নষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে থাকেন, যদি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অথবা সাক্ষী-প্রমাণ প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন তাহলে তদন্তকারী কর্মকর্তা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন। আমি যে তিনটি শঙ্কার কথা বললাম তার (ইউনূসের) ক্ষেত্রে তেমন কিছু উদ্ভব হয়নি।’এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ জনকে তলব করে দুদক। ওই তলবি নোটিসে তাদের দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়। গত ৩০ মে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলাটি করে দুদক। মামলায় ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
কিউএনবি/আয়শা/০৬ অক্টোবর ২০২৩,/দুপুর ১২:৪৫