এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় আমনধান ক্ষেতে ইঁদুরের উৎপাত দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। আবহওয়া অনুকুল ও সঠিক পরিচর্চায় আমন ধানের কাইস থোড় হওয়া শুরু করেছে। সবুজ ও সতেজ গাছের গলায় ধানের শীষ উঠেছে। আর কিছু দিনের মধ্যই ধানের শীষ দেখা দেবে। কৃষক আমন ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন বুনছেন । এমনি সময়ে আমন ধান ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণে কৃষকের সে স্বপ্ন মøান হতে চলেছে।মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার আন্দারকোটা, আন্দুলিয়া, খড়িঞ্চা, মাধবপুর, সিংঝুলীসহ প্রায়সব এলাকার ঘুরে দেখা যায় দিগন্তজোড়া পুরো এলাকা। চারদিকে দুল খাচ্ছে আমন ধান। ধান ক্ষেতে বাঁশের কঞ্চিতে টাঙানো হয়েছে পলিথিন। সামান্য বাতাস লাগলেই বেজে ওঠে এটি। ইঁদুরের আক্রমণ থেকে ক্ষেত রক্ষা করতে এমন পদ্ধতি প্রয়োগ করছেন কৃষকেরা। তাই তো টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার কৃষকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি।আপন ক্ষেতে ইদুরের উৎপাত বেড়েই চলেছে। মাঠের পর মাঠ সবুজ ধানক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ চোখে পড়ে। মেঠো রাস্তার ডানে-বামে চোখে পড়ছে ধান ক্ষেত গুলোতে ইদুর তাড়ানোর জন্য অসংখ্য কুঞ্চির মাথায় সাদা-কালো পলিথিন, কালো কাপুড়সহ বিভিন্ন নিশান ও কাকতাড়–য়া পুতে রাখা হয়েছে। কাইছথোড়, (পেটে শিষ থাকে) হাওয়া ধান কেটে ইঁদুর সাবাড় করলেও প্রতিকার করতে পারছে না কৃষক। ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।
রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক জহির উদ্দীন বলেন, আমন মৌসুমে এমন ইঁদুরের উৎপাত দেখা দিয়েছে। এ মৌসুমে ধান ক্ষেতে ইঁদুরের উৎপাত বেড়েই চলেছে। ধানের কচি শিষ খাওয়া ইঁদুর গর্তে থাকেনা। এরা ডোবা লালার কুচুরিপানায়, জোপ-ঝাড়, জঙ্গলে ও গাছে বাস করে। রাতের বেলা ঐসব এলাকা থেকে বের হয়ে ধান কেটে সাবার করে দিনের বেলায় আবার বাসস্থান চলে যায়। দেখতে স্বাভাবিক ইঁদুর এর চেয়ে অনেক বড়। খুব দ্রুত চলাফেরা করতে পারে। ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা পেতে কৃষক ঝান্ডা লাগিয়ে, কাকতাড়–য়া দিয়ে ইঁদুর তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। অনেক জায়গায় ফসল রক্ষায় কৃষক রাত জেগে ফাঁসি জাল ও হাতে তৈরি ফাঁদ পেতে দুএকটি ইঁদুর মারছেন। অনেকে টসলাইট জ্বালিয়ে রাতে ক্ষেত থেকে ইদুর তাড়াচ্ছেন। তবে কোন ব্যবস্তাই গেছো ইদুরের হাত থেকে শতভাগ ফসল রক্ষা করা যাচ্ছে না।উপজেলার সিংহঝুলী গ্রামের কৃষক আবু তৈয়ব বলেন, ইঁদুর ধান গাছের গোড়া কেটে দিয়েছে। ক্ষেতে অনেক বড় বড় গর্ত তৈরি করছে। দিনের বেলা মানুষের উপস্থিতির কারণে তারা কম আক্রমণ করে। তবে রাত হলে উপদ্রব বেড়ে যায়। তাই এই পলিথিনের ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো শব্দ পেলে ইঁদুর স্থান পরিবর্তন করে। রাতে পলিথিন বাতাসে নড়ে উঠে। আর এই বাজনায় ইঁদুর পালিয়ে যায়।তার ধানক্ষেত কাইচথোর হওয়ার পর থেকে ইঁদুর কেটেই চলেছে। কোন ব্যবস্থাই ইদুরের উৎপাত থেকে ধানরক্ষা করতে পারছেন না। ফলে বিচালী ও ধানের উৎপাদন অনেক কম হবে।
উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, এ বছর উপজেলায় বিভিন্ন জাতের ধান আবাদ হয়েছে ১৮২৪০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু এবার আমন মৌসুমে ধান ক্ষেতে ইঁদুরের উৎপাত বেড়েই চলেছে। ধানের কচি শিষ খাওয়া ইঁদুর গর্তে থাকেনা। এরা ডোবা লালার কুচুরিপানায়, জোপ-ঝাড়, জঙ্গলে ও গাছে বাস করে। রাতের বেলা ঐসব এলাকা থেকে বের হয়ে ধান কেটে সাবার করে দিনের বেলায় আবার বাসস্থান চলে যায়। দেখতে স্বাভাবিক ইঁদুর এর চেয়ে অনেক বড়। খুব দ্রুত চলাফেরা করতে পারে। ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা পেতে কৃষক ঝান্ডা লাগিয়ে, কাকতাড়–য়া দিয়ে ইঁদুর তাড়ানোর চেষ্টা করছেন।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হোসাইন বলেন, ধান ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে কৃষকেরা নিজে থেকেই তারা কঞ্চিতে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছেন। বাতাসে যখন পলিথিন শো শো শব্দ করে সেই শব্দে ইঁদুর পালিয়ে যায়। আগাম সর্তকতা হিসেবেও এটি ব্যবহার করেন তারা। তবে ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পলিথিনের ব্যবহার কার্যকরী।এ ছাড়াও ইঁদুরের উৎপাত ঠেকাতে ধানক্ষেতের আশপাশের জঙ্গল পরিষ্কার, ধানগাছের ১ হাত উপরে খুটি দিয়েনিশান, কাকতাড়–য়া লাগানোর পাশাপাশি জমিতে গ্যাসবোম প্রয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কিউএনবি/অনিমা/২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/বিকাল ৫:৪৬