বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৩ অপরাহ্ন

খালিস্তান আন্দোলন কি? কে এই শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ২১০ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কানাডার মাটিতে একজন শিখ নেতা হত্যা এবং এ হত্যাকাণ্ড ঘিরে ভারত সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগের কারণে কানাডা এবং ভারতের মধ্যে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আর এ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের এতটাই অবনতি হয়েছে যে একে অপরের একজন করে শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। মূলত কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ গুরুদ্বারের বাইরে গত ১৮ই জুন গুলি করে হত্যা করা হয় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে।

এরই প্রেক্ষিতে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কানাডার হাউজ অব কমন্সে কানাডার নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের গুপ্তচরদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়ার কথা জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ওই ভাষণের পরে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী মেলানি জলি ঘোষণা করেন যে এক শীর্ষ ভারতীয় কূটনীতিককে তারা বহিষ্কার করছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে ওই কূটনীতিক পবন কুমার রাই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা “র” এর প্রধান। মি. নিজ্জারকে হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের জড়িত থাকার গুরুতর এই অভিযোগকে ‘মনগড়া’ এবং ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে নাকচ করে দেয় ভারত।

কানাডার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেকে পাঠায় দিল্লিতে কানাডার রাষ্ট্রদূত ক্যামেরুন ম্যাকে-কে। পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়তে বলা হয় কানাডার এক সিনিয়র কূটনীতিককে।

কে এই শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার?

খালিস্তান আন্দোলন কি? কে এই শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার

৪৫ বছর বয়সী হরদীপ সিং নিজ্জার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারে শহরের গুরু নানক শিখ গুরুদুয়ারার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পাঞ্জাবে জন্ম হলেও কানাডায় প্রায় ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছিলেন তিনি।

পাঞ্জাবে খালিস্তান বানানোর ‌আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় কর্মী ছিলেন নিজ্জার। যার কারণে ভারতে একজন ঘোষিত সন্ত্রাসী ছিলেন তিনি। তাকে জঙ্গি উপাধি দিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলো ভারত সরকার।

কানাডার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে যে, নিজ্জারের এক স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে।

২০১৬ সালে ইন্টারপোলের এক নোটিশে অভিযোগ করা হয়, ২০০৭ সালে পাঞ্জাবের একটি সিনেমা হলে বোমা হামলার অন্যতম ‘প্রধান ষড়যন্ত্রকারী’ ছিলেন নিজ্জার।

২০২৩ সালের ১৮ জুন কানাডায় গুরু নানক শিখ গুরুদুয়ারায় নিজ্জারের পিকআপ ট্রাককে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান গাড়ির ভেতর থাকা নিজ্জার।

তবে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। যদিও নিজ্জারের জীবনহানির শঙ্কা রয়েছে এমন সতর্কবার্তা আগেই তাকে দিয়েছিলো কানাডীয় পুলিশ।

খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেই নিজ্জারকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা তার আইনজিবির।

খালিস্তান আন্দোলন কি?

খালিস্তান আন্দোলন কি? কে এই শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার

খালিস্তান আন্দোলন বা শিখ স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু হয় মূলত চল্লিশের দশক থেকে। সে সময় ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক খালিস্তানের দাবী উঠলেও তা আন্দোলনে রূপ নেয় সত্তর আর আশির দশকে। আটের দশকের শুরু থেকে ওই আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে, অস্ত্র মজুত করা হতে থাকে মন্দির সংলগ্ন ভবনগুলিতে।

সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ১৯৮৪ সালের পয়লা জুন স্বর্ণমন্দির চত্বরে সেনা প্রবেশ করে, শুরু হয় অপারেশন ব্লু স্টার।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে শীর্ষ খালিস্তানি নেতা জার্নেইল সিং ভিন্দ্রনওয়ালে সহ বহু খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হন।

সরকারি হিসাবে ওই অপারেশনে ৮৩ জন সেনা সদস্য ও শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী ও বেসামরিক নাগরিক সহ ৪৯২ জন নিহত হয়েছিলেন বলে ইন্ডিয়া টুডে জানালেও পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলি দাবি যে নিহতের সঠিক সংখ্যা অনেকগুন বেশি।

আর এই অপারেশন ব্লু স্টারের কারণেই ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে প্রাণ দিতে হয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে।

ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরেই ভারতব্যাপী শুরু হয় শিখ বিরোধী দাঙ্গা, যাতে এক হাজারেরও বেশি শিখ নিহত হন। বিশেষ করে নয়াদিল্লিতে ঘরে ঘরে শিখদের তাদের বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে যায়, অনেককে কুপিয়ে হত্যা করে এবং অনেককে জীবিত পুড়িয়ে দেয়া হয়।

আন্দোলন কি এখনও সক্রিয়?

বর্তমানে ভারতের পাঞ্জাবে কোনো সক্রিয় বিদ্রোহ না থাকলেও রাজ্যে এখনও খালিস্তান আন্দোলনের কিছু সমর্থক রয়েছে। সেইসাথে ভারতের বাইরেও বিশাল শিখ প্রবাসী রয়েছে। তবে ভারত সরকার কয়েক বছর ধরে বারবার সতর্ক করেছে যে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ফিরে আসার চেষ্টা করছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপর নজরদারি আরও জোরদার করেছে এবং আন্দোলনের সাথে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের কয়েক ডজন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।

চলতি বছরের শুরুতেই একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ নেতাকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ যিনি খালিস্তান আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন। ছিলেন এবং পাঞ্জাবের সহিংসতার আশঙ্কা জাগিয়েছিলেন। ৩০ বছর বয়সী অমৃতপাল সিং বলেছিলেন যে তিনি ভিন্দ্রানওয়ালের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।

ভারতের বাইরে খালিস্তান আন্দোলন

ভারতের বাইরেও খালিস্তান আন্দোলন সক্রিয় হয়ে উঠার শঙ্কায় আছে ভারত। আর তাই কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলিকে শিখ কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির মোদী সরকার।

বিশেষ করে কানাডায় প্রায় আট লাখের মত শিখ জাতির বসবাস যা দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ।

কানাডায় খালিস্তান সমর্থকদেরকে “ভারত-বিরোধী” উপাধি দিয়ে হিন্দু মন্দির ভাংচুর করা এবং মার্চ মাসে অটোয়াতে ভারতীয় হাইকমিশনের অফিসে হামলার জন্য অভিযুক্ত করেছে ভারত সরকার।

এ ছাড়া চলতি বছরের শুরুর দিকে লন্ডনে দেশের হাইকমিশনে ভারতীয় পতাকা টেনে নামিয়ে দেয় এবং অমৃতপাল সিংকে গ্রেপ্তার করার বিরুদ্ধে ভবনের জানালা ভেঙে দেয়। এমনকি বিক্ষোভকারীরা সান ফ্রান্সিসকোতে ভারতীয় দূতাবাসের জানালা ভাংচুরের পাশাপাশি দূতাবাসের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনার নিন্দা করে এবং লন্ডনে দূতাবাসে নিরাপত্তা লঙ্ঘন বলে প্রতিবাদ করার জন্য নয়াদিল্লিতে যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাইকমিশনারকে তলব করে।

এ ছাড়া গত বছর, শিখ জঙ্গি নেতা এবং খালিস্তান কমান্ডো বাহিনীর প্রধান পরমজিৎ সিং পাঞ্জওয়ারকে পাকিস্তানে গুলি করে হত্যা করা হয়।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:১২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit