মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন

ইস্তিগফার মানুষকে কলুষতা থেকে মুক্তি দান করে

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১১০ Time View

ডেস্ক নিউজ : পাপ মানুষের জীবনকে কলুষিত করে। ইস্তিগফার মানুষকে সেই কলুষতা থেকে মুক্তি দান করে। মানবজীবনকে করে নির্মল। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মানুষকে তাওবা ও ইস্তিগফারের প্রতি নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৯)
ইস্তিগফার কাকে বলে?

আরবি ইস্তিগফারের শাব্দিক অর্থ ক্ষমাপ্রার্থনা করা। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করাকে ইস্তিগফার বলা হয়।

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘ইস্তিগফার হলো আল্লাহর দরবারে পাপের শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ এবং পাপ গোপন রাখার প্রার্থনা।’ (মাজমুউ ফাতাওয়া : ১০/১৮৫)

ইস্তিগফার কারা করবে?

ইস্তিগফার সাধারণত পাপী বান্দারাই করবে। তবে যারা সাধারণত পাপ কাজ করে না, তারাও ইস্তিগফার করবে। কেননা নবী-রাসুলরা নিষ্পাপ হওয়ার পরও বেশি বেশি ইস্তিগফার করতেন।

যেমন—নুহ (আ.)-এর ব্যাপারে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার রব, তুমি ক্ষমা করো আমাকে, আমার বাবা-মাকে এবং যারা মুমিন হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করে তাদের এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের; আর জালিমদের শুধু ধ্বংসই বৃদ্ধি করো।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ২৮)
আর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন ৭০ বারের বেশি তাওবা ও ইস্তেগফার করে থাকি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩০৬)

ইস্তিগফারের পরকালীন উপকার

ইস্তিগফারের মাধ্যমে মুমিন পরকালীন জবাবদিহি ও শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পায়। যেমন—

১. পাপ থেকে মুক্তি : আল্লাহর দরবারে ক্ষমাপ্রার্থনা করলে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি কেউ কোনো মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১০)

২. সুসংবাদ লাভ : ইস্তিগফার পাঠকারীর জন্য মহানবী (সা.) পরকালীন জীবনের সুসংবাদ দান করেছেন। তিনি বলেন, ‘সেই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যার আমলনামায় অধিক পরিমাণ ইস্তিগফার আছে।’ (শুআবুল ঈমান : ১/৩৮১)

৩. জান্নাত লাভ : আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনাকরীদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের ঘোষণা হলো, ‘যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি অবিচার করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদেরে পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া কে পাপ ক্ষমা করবে? এবং তারা যা করে ফেলে জেনে-শুনে তারই পুনরাবৃত্তি করে না। তারাই তারা, যাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কত উত্তম।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৫-১৩৬)

৪. জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধি : ব্যক্তির ইস্তিগফার যেমন তার জান্নাত লাভের কারণ হবে, তেমনি তার সন্তানদের ইস্তিগফার তার মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে এক ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। সে জানতে চাইবে, এর কারণ কী? বলা হবে, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ইস্তিগফার।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩/২১৪)

ইস্তিগফারের পার্থিব উপকার

ইস্তিগফার কেবল পরকালীন মুক্তির কারণ নয়; বরং জাগতিক জীবনেও তার বহু উপকারিতা রয়েছে। যেমন—

১. মুক্তি ও নিরাপত্তা লাভ : ইস্তিগফারের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ এমন নন যে তুমি তাদের মধ্যে থাকবে অথচ তিনি তাদের শাস্তি দেবেন এবং আল্লাহ এমনও নন যে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদের শাস্তি দেবেন। (সুরা আনফাল, আয়াত : ৩৩)

২. বরকত লাভ : ইস্তিগফার পাঠকারীর জীবনে আল্লাহ বরকত দান করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তো মহাক্ষমাশীল, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২)

৩. আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ : মহান আল্লাহ ইস্তিগফারের পুরস্কার ঘোষণা করে বলেন, ‘কেন তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছ না, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হতে পারো।’ (সুরা নামল, আয়াত : ৪৬)

৪. উত্তম জীবন লাভ : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আরো যে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো ও তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করো, তিনি তোমাদের এক নির্দিষ্ট কালের জন্য উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন এবং তিনি প্রত্যেক গুণীজনকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দান করবেন।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৩)

৫. আল্লাহর সাহায্য লাভ : ইস্তিগফার আল্লাহর সাহায্য ত্বরান্বিত করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং কত নবী যুদ্ধ করেছে, তাদের সঙ্গে বহু আল্লাহওয়ালা ছিল। আল্লাহর পথে তাদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল তাতে তারা হীনবল হয়নি। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন। এই কথা ছাড়া তাদের আর কোনো কথা ছিল না, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের পাপ এবং আমাদের কাজে সীমা লঙ্ঘন তুমি ক্ষমা কোরো, আমাদের পা সুদৃঢ় রাখো এবং অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৬-১৪৭)

৬. অন্তরের পবিত্রতা লাভ : ইস্তিগফার করার মাধ্যমে মানুষ আত্মিক পবিত্রতা লাভ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৩৪)

৭. সংকট থেকে মুক্তি লাভ : ইস্তিগফার মানবজীবনের সংকটগুলো দূর করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সকল দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে জীবিকা দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৫১৮)

ইস্তিগফার কখন করব?

একজন মুমিন যেকোনো সময় ইস্তিগফার করতে পারেন। তবে হাদিসের বর্ণনা থেকে কিছু সময়ে ইস্তিগফারের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। যেমন—

১. ইবাদতের পর : কোনো ইবাদত বা নেক আমলের পর। সাওবান (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ শেষ করার পর তিনবার ইস্তিগফার পাঠ করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৯১)

২. অজুর পর : রাসুলুল্লাহ (সা.) অজুর শেষে কলেমা শাহাদাত পাঠের পর নিম্নোক্ত দোয়ার মাধ্যমে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৫৫)

৩. বৈঠক শেষে : কোনো মজলিস ত্যাগ করার সময় নবীজি (সা.) আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে বলতেন, ‘সুবাহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন-লা ইলাহা ইল্লা আনতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৮৫৯)

৪. শেষ রাতে : শেষ রাত আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করার সর্বোত্তম সময়। কেননা আল্লাহ শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘তারা রাতের সামান্য অংশ ঘুমিয়ে কাটাত এবং রাতের শেষভাগে ক্ষমা প্রার্থনা করত।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ১৭-১৮)

৫. দাফন করার পর : কাউকে দাফন করার পর মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কাউকে দাফন করার পর বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা কোরো এবং তাঁর দৃঢ়তার জন্য দোয়া কোরো। কেননা এখনই তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩২২১)

যে শব্দ-বাক্যে ইস্তেগফার করব

যেকোনো ভাষার যেকোনো শব্দ ও বাক্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়। তবে উত্তম হলো কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো পাঠ করা। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শব্দ-বাক্যের পৃথক মর্যাদা রয়েছে। সবচেয়ে সহজ ও সংক্ষিপ্ত ইস্তেগফার হলো ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই)। অবশ্য হাদিসে একটি দোয়াকে সাইয়িদুল ইস্তিগফার বা সর্বোত্তম ক্ষমাপ্রার্থনা বলা হয়েছে। তা হলো—‘হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কোরো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩০৬)

কিউএনবি/অনিমা/১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/বিকাল ৩:০১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit