বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। এর মাঝে বিলজুড়ে আসন পেতেছে পদ্ম ফুল। যত দুর চোখ যায় শুধু পদ্ম ফুলের হাসি। এ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সাজ। দুর থেকে দেখে মনে হবে যেন কেউ পদ্ম ফুলের বিছানা পেতে প্রকৃতি প্রেমিকে কাছে ডাকছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্ধ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম ঘাগুটিয়া। গ্রামের ১২০ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে এই বিল। বিলের ওপাড়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মাধবপুর গ্রাম। স্থানীয় ও প্রকৃতির সৌন্দর্য প্রেমিদের কাছে বিলটি পদ্মবিল নামেই বেশি পরিচিত। বিল জুড়ে যখন পদ্ম ফুটে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসে প্রকৃতি প্রেমিরা।স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর আষাড় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত এ বিলে পদ্ম ফোটে। বিল থেকে পানি নেমে গেলে ফুলও উদাও হয়ে যায়। বাকি সময় স্থানীয় কৃষকরা বিলে ধান চাষ করে।উত্তর ধর্মনগর গ্রামের সোহাগ সরকার জানায়, বিশাল বিলজুড়ে যখন পদ্ম ফোটে দুর দুরান্ত থেকে প্রকৃতি প্রেমীরা এখানে ছুটে আসে। কেউ ছবি তুলে, কেউ আবার ডিঙি নৌকা নিয়ে বিল ঘুরে বেড়ায়। ফেরার সময় তুলে আনে পদ্ম।
কুমিল্লার বরুড়া থেকে আসা আবু সাঈদ নামে এক যুবক জানায়, প্রতিবছরই এসময়টায় এখানে ঘুরতে আসি। এতো পদ্ম আর কোনো বিলে চোখে পড়ে না। আরিফ নামে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্র জানায়, ইমেজিং! এতো পদ্ম। বিল থেকে চোখ সরানো দায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা শহর থেকে আসা আসিফ জানায়, এখানে আমার খালার বাড়ি। পদ্মবিল দেখার জন্যই মূলত এখানে বেড়াতে আসা। জেলা শহরের পাইক পাড়ার শীলা দাস জানান, পদ্মবিল দেখবো বলে মায়ের সাথে এখানে ঘুরতে এসেছি। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে খুব ভালো লাগছে। ধর্মনগর গ্রামের কামাল হোসেন জানায়, পদ্ম বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসে। ঘুরতে আসা বেশির ভাগ মানুষই ফেরার সময় বিল থেকে ফুল তুলে নিয়ে যায়। যার ফলে বিলে এবার পদ্ম ফুল কম। প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা না নিলে এক সময় এ বিলে আর পদ্ম ফুল থাকবে না।মনিয়ন্ধ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর ভুইয়া জানান, সনাতন ধর্মালম্বীদের দূর্গাপূজায় লাগে এ পদ্ম ফুল। পূজার সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষ বিল থেকে ফুল সংগ্রহ করে। এমন কি আগরতলা বটতলীবাজারে এ ফুল বিক্রিও করা হয়। তিনি আরো বলেন, প্রকৃতি প্রেমিদের আগমনে বিল এলাকা যেমন মুখরিত হয়ে উঠে। তবে তাদের অবাধ পদচারণায় বিলের সৌন্দর্য কিছুটা নষ্ট হচ্ছে। আমার মতে সরকারিভাবে পদ্মবিলটি সংরক্ষণ করা দরকার।
মনিয়ন্ধ ইউনিয়নের মেম্বার রফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন, প্রতিদিন এখানে অনেক দর্শনার্থী আসতে দেখে নিজের কাছে অনেক ভাল লাগে। দৈনিক ইনকিলাব এর সাংবাদিক ময়নাল হোক ভুইয়া মইনুল বলেন, দর্শনার্থীদের পদচারনা মুখরিত পদ্মবিলে গেলে শরীর ও মন ভাল হয়ে যায়। অবসর সময়ে ছোট বাচ্চাদের এখানে নিয়ে আসলে খুবই ভাল লাগবে। দৈনিক গণকন্ঠের স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক বাদল আহাম্মদ খান বলেন, মাঝেমধ্যে মন ভাল না থাকলে পরিবার নিয়ে পদ্মবিলে ছুটে যাই, মন ভাল করতে।মোহনা টেলিভিশনের আখাউড়া প্রতিনিধি সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন কবির বলেন, পদ্ম বলেন, পদ্ম বলের সৌন্দর্য রক্ষা করতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। মনিয়ন্ধ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আলম চৌধুরী দীপক বলেন, বিল ও বিলে ফোটা পদ্ম ফুল সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে মানুষ বেড়াতে আসে। জনসচেতনতায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিল এলাকায় একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। বেড়াতে এসে যেন কেউ বিলের ক্ষতি না করে।