এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় চলতি বছরের সাত মাসে বজ্রপাতে অনন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতের ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেকে। নিহতরা বেশির ভাগ কৃষক। অভিজ্ঞদের মতে এলাকা থেকে বড় গাছ কেটে ফেলায় বজ্রপাতে হরহামেশায় মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ২০২৩ সালের গেল সাত মাসের বিভিন্ন সময় বজ্রপাতে উপজেলার সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ মানুষের প্রয়োজনে সরকারি রাস্তায় বা মালিকানায় থাকা বড়-বড় গাছ গুলো কেটে সাবাড় করে দিয়েছেন। ফলে আকাশে মেঘ জমলেই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। মরছে মানুষ ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।
বজ্রপাতের প্রভাবে ক্ষতিগ্রহস্থ হচ্ছে প্রাণীকূল ও মরছে মানুষ। একতথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৪ আগষ্ট বৃহ¯পতিবার সকালে উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের চুড়াগাড়ির মাঠ নিজের ধান ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে শরিফুল ইসলাম (৪৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়। শরিফুল ইসলাম চাঁদাপাড়া গ্রামের মৃত মুজিবর রহমানের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষক। এ দিন সারাদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছে সে সাথে বজ্রপাত। দুপুরের পরে কোনো এক সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। তিনি বাড়িতে ফিরে না আসায় গভির রাত পর্যন্ত গ্রাম এলাকায় অনেক খোঁজাখোঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পরদিন সকালে গ্রামের অন্যকৃষকরা চুড়াগাড়ি মাঠে তার নিজ ধান ক্ষেতে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তারা স্বজনদের খবর দেন। স্বজনরা স্থনীয়দের সহযোগীতায় তার মরদেহ উদ্ধার করেন। কৃষক শরিফুল ইসলামের শরীরে বিভিন্ন স্থানে ঝলসা পোড়া ক্ষত ছিলো। ৩ আগস্ট দুপুরে বজ্রপাতে সেলিম হোসেন (৩১) নামে এক দিনমুজুরের মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের বারুইহাটি গ্রামের আব্দুল খালেক বিশ্বাসের ছেলে। প্রত্যাক্ষদর্শিরাদের মতে এদিন সেলিমসহ তারা ১১ জন বারুইহাটি গ্রামের পূর্বমাঠে দিনমজুর হিসেবে আমন ধানের চারা রোপন করছিল।
হঠাৎ বেলা ১১ টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে তারা মাঠ ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসছিল। পথিমধ্যে তারা গ্রামের গভীর নলকুপের কাছাকাছি পৌঁছালে হঠাৎ বজ্রপাত হলে সেলিম হোসেন ঘটনাস্থেলই মৃত্যুবরণ করেন। প্রত্যাক্ষদর্শি সেলিমের সহকর্মী আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা নলকুপের পানি সেচের ড্রেনের উপর দিয়ে এক সারিতে হাটছিলাম, সেলিম ছিল আমার পিছনে। হঠাৎ সে আমার পিছন থেকে আগে উঠে যায়। আর সে সময়ই তার মাথার উপর বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতে সেলিমের মাথার চুল ও গায়ের জামাই আগুন ধরে পুড়ে যায়। এ এ সময় ঘটনাস্থেলই তার মৃত্য হয়।
১৫ জুলাই দুপুরে বজ্রপাতে আমিনুর রহমান (৪৩) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ধুলিয়ানি ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের নুর বক্সের ছেলে। ঘটনার সময় তিনি ফতেপুর গ্রামের উত্তর মাঠের তার ঘাস ক্ষেতে কাজ করছিলেন। তিনি পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। এদিন বেলা ১১ টার দিকে ছেলেকে সাথে নিয়ে জমিতে চাষ করা ঘাস গরুর জন্য কাটতে যায়। ঘাস কেটে ছেলেকে বাড়ীতে পাঠিয়ে তিনি ঘাস ক্ষেত পরিস্কারের কাজ করছিলেন। দুপুর ১ টার দিকে হঠাৎ গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় বজ্রাপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বৃষ্টি থেমে গেলে গ্রামের এক কৃষক গরু নিয়ে মাঠে যাওয়ার সময় তিনি আমিনুরকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তার ডাকচিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে গিয়ে মরাদেহ উদ্ধার করেন। মৃত কৃষকের শরীরে বিভিন্ন স্থানে পুড়া ক্ষতের দাগ ছিলো।
২২ জুন দুপুরে বজ্রাপাতে আমিনুর রহমান (৩৩) নামে এক পল্লীপশু চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। তিনি চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের গয়ড়া গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় একজন পল্লীপশু চিকিৎসক ছিলেন। ঘটনার দিন মোটরসাইকেলে পাশের দিঘড়ি গ্রামে গরু চিকিৎসা দিতে যাচ্ছিলেন। তিনি দিঘড়ি গ্রামের মাঠের রাস্তার রোস্তম আলীর স্যালোঘরের নিকট পৌছালে হঠাৎ বজ্রাপাতের শিকার হন। এতে ঘটনা স্থলেই তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানান তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়া দাগ ছিলো।
২৬ মে মাহাবুবুর রহমান (২৭) ও পিতা গোলাম মোস্তফা (৬০) বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহবুবুর রহমানেক মৃত ঘোষণা করেন। আহত পিতা গোলাম মোস্তফাকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেন। এদিন উপজেলার মাকাপুর গ্রামে বিকেলে মাঠে সবজী ক্ষেতে কাজ করছিলো তারা। ২৯ এপ্রিল মাঠে ধান ক্ষেতের কাজ শেষ করে বাড়ী ফেরার পথে বজ্রাপাতে বসির উদ্দীন (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে। বসির উদ্দীন পেশায় একজন কৃষক ছিলেন।
এদিন বিকেলে তিনি মাঠে ধান ক্ষেতে কাজ করতে যায়। সন্ধ্যার দিকে আকাশে মেঘ দেখে বাড়ীতে ফিরে আসছিলেন। তিনি গ্রামের মোড়ের মাথায় পৌছালে বজ্রাপাতের শিকার হন। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঝলসে যায়। এ সময় তার ডাক-চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বসির উদ্দীনকে মৃত ঘোষণা করেন। ২৬ এপ্রিল বজ্রাপাতে সাগর কুমার বিশ্বাস (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি এদিন মাঠে ধান ক্ষেতে কাজ করছিলেন। তিনি চৌগাছা পৌরশহরের ৭নম্বর ওয়ার্ডের হালদার পাড়ার রবি বিশ্বাসের ছেলে। সাগর কুমার বিশ্বাস মাছ ধরার কাজ করতেন।
এদিন রাত নয়টার দিকে সাগর তার বাবাসহ ৪ জন কপোতাক্ষ নদ পাড়ে মাঠে নিজেদের জমির ধান গুছানোর কাজ করছিলো। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হয়। এতে সাগরের শরীর ঝলসে যায়। এ সময় তার সাথে থাকা মৃত্যুঞ্জয় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। পাশে থেকে তার বাবা ও ভাই দেখে দৌড়ে গিয়ে সাগরের শরীর থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তাদের ডাক-চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাগর কুমার বিশ্বাসকে মৃত ঘোষণা করেন।
কিউএনবি/আয়শা/২৬ অগাস্ট ২০২৩,/রাত ৯:৪৪