আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘সাংবিধানিকভাবে বৈধ’ ঘোষণার দাবি খারিজ করে দিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সোমবার এসংক্রান্ত একটি দাবি খারিজ করে দেন।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট শনিবার জানিয়েছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারার অবলুপ্তির ক্ষেত্রে কোনো সাংবিধানিক বিধি লঙ্ঘিত হয়েছিল কি না, তার ওপর ভিত্তি করে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ২০১৯ সালের পদক্ষেপের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা হবে। তার পরও শীর্ষ আদালতের এই পদক্ষেপ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার জানিয়েছেন, ৩৭০ ধারা বাতিলের সাংবিধানক বৈধতাসংক্রান্ত মামলা বিচারধীন। তাই নতুন করে এসংক্রান্ত শুনানির প্রয়োজন নেই। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট রাজ্যসভায় জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দানকারী ৩৭০ নম্বর ধারা প্রত্যাহারের ঘোষণা করার সময় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, এসংক্রান্ত নির্দেশনায় সই করেছেন রাষ্ট্রপতি। এরপর সংসদের দুই কক্ষে ৩৭০ ধারা বাতিলের বিল পাসের ফলে ‘বিশেষ’ মর্যাদা হারায় কাশ্মীর।
এমনকি হারায় রাজ্যের মর্যাদাও। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ—দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারপক্ষের দাবি, ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হলেও সেই মর্যাদা স্থায়ী ছিল না, বরং ছিল ‘অস্থায়ী সংস্থান’ (টেম্পোরারি প্রভিশন)। ওই অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ইচ্ছে করলে ওই ‘বিশেষ মর্যাদা’ তুলে নিতে পারেন।
রাষ্ট্রপতির ওই ক্ষমতাকে ব্যবহার করেই ২০১৯ সালে ‘বিশেষ মর্যাদা’ প্রত্যাহার করে মোদি সরকার। অর্থাৎ নির্দেশনামায় রাষ্ট্রপতি সই করার পরের মুহূর্ত থেকেই রদ হয়ে যায় ৩৭০ ধারা। এই ধারার অধীনেই ৩৫(এ) ধারায় ভারতীয় ভূখণ্ডে থেকেও জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা যে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত, খারিজ হয়ে যায় তা-ও।
অন্যদিকে ৩৭০ ধারার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের করা মামলার আবেদনকারী পক্ষের যুক্তি, জওয়াহেরলাল নেহরুর জামানায় সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত অংশ ১২ বলছে—কেবল ‘কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি’ (পরে রাজ্য সরকার) সম্মত হলে তবেই সংবিধানের কোনো ধারার সংশোধন জম্মু ও কাশ্মীরে প্রযোজ্য। অর্থাৎ কোনো সংশোধন জম্মু ও কাশ্মীরে প্রযোজ্য হতে হলে ৩৭০(১) ধারা মতে রাজ্য সরকারের সম্মতিতে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি প্রয়োজন।
নির্বাচনসংক্রান্ত অংশ ১৫ বলছে—রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন রাজ্যের নিজস্ব আইনে পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে ৩৭০ ধারা বাতিল করতে হলে সংবিধানসভা বা বিধানসভার সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু মোদি সরকারের আমলে ৩৭০ বাতিলের আগে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভেঙে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি শাসনে রাজ্যপালকে কোনো অবস্থাতেই ‘স্থানীয় সরকার’ বলা যায় না বলে আবেদনকারী পক্ষের দাবি। তাদের মতে, রাজ্যপাল জনপ্রতিনিধিত্বের প্রতীক নন, এ ক্ষেত্রে ৩৭০ এবং ৩৫(এ) ধারা বাতিলের ঘটনা সাংবিধানিকভাবে বেআইনি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
কিউএনবি/আয়শা/২১ অগাস্ট ২০২৩,/রাত ৮:২৪