এম,এ, রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় পাকাবাড়ী নির্মাণ করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারক চক্র উধাও হয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া এলাকায়। প্রতারক চক্র অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকায় একতলা বাড়ি করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তেইশটি পরিবারের নিকট থেকে প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে গেছে। প্রতারক চক্রের এক সদস্যের কেবল মাত্র মোবাইল নম্বর ছাড়া কোন কাগজপত্র এমনকি ঠিকানাও জানা নেই ভুক্তভোগীদের। অসহায় পরিবারগুলো প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা যায়, প্রায় দেড় মাস আগে উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া বাজারের এক প্রতারক আসেন। আড়পাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ছমির হোসেনের মুদি ব্যবসায়ীর দোকানে এসে বসেন। এ সময় ওই প্রতারক আলাপচারিতায় ছমির হোসেনকে বলেন, আমি কবির হোসেন মেঘনা আউটলেট ব্যাংক হতে এসেছি। এখানে একটি এজেন্ট ব্যাংক করা হবে।ব্যবসায়ী ছমির হোসেনে দোকানের দ্বিতীয়তলা তার পছন্দ জানিয়ে সেই প্রতারক বলেন, যদি ভাড়া দেন তাহলে এই ভবনে ব্যাংক হবে। এজন্য ছমির অসমাপ্ত দ্বিতীয়তলা ভাড়া দিতে ওই ব্যক্তির কাছে অগ্রীম দুই লাখ টাকা দাবি করেন। সাথে সাথে প্রতারক রাজি হয়ে পরের দিন এসে নগদ দুই লাখ টাকা দিয়ে যান।
প্রতারক দোকানিকে বলেন, আমার কো¤পানি এলাকার অসহায় পরিবারের জন্য ৩ রুম বিশিষ্ট একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেবেন। বিনিময়ে মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা ওই ব্যক্তিকে কো¤পানিতে জমা করতে হবে। এ সময় দোকানে বসা ছিলেন পার্শ্ববর্তী আড়কান্দি গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে আনারুল ইসলাম লাল্টু। প্রতারকের কথা শুনে লাল্টু ঘর নিতে সম্মতি জানান। তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে সাড়ে তিন লাখ টাকা জোগাড় করে ওই প্রতারকের হাতে তুলে দেন। পরের দিন থেকে লাল্টুর বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অনেকে ঘর নিতে আগ্রহ দেখান।ইতিমধ্যে লাল্টুর বাড়ির ছাদ পর্যন্ত কাজ সমাপ্ত হয়েছে। খুব দ্রুত ঘর হচ্ছে দেখে গ্রামের সাধারণ মানুষ আরও আগ্রহী হয়ে উঠেন। প্রতারক নিজে সরাসরি আগ্রহীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেননি। তিনি লাল্টুর মাধ্যমে আড়কান্দি, স্বর্পরাজপুর ও মির্জাপুর গ্রামের ২৩ টি পরিবারের নিকট থেকে সাড়ে ৩ লাখ করে টাকা হাতিয়ে নেন। যার পরিমান ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কখনো সরাসরি কখনোবিকাশে লাল্টু ওই প্রতারকের কাছে টাকা পাঠিয় দিতেন। যারা টাকা দিয়েছেন তাদের অনেকের বাড়ির সামনে এক ট্রাক ইট, বালি, রড বা সিমেন্ট কিনে ফেলা হয়েছে। আবার বেশ কিছুু বাড়ির কাজও শুরু করেন প্রতারক চক্রটি। হঠাৎ এক সপ্তাহ হলো প্রতারক কো¤পানির হেড অফিসে যেতে হবে বলে চলে যান, তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।রোবরাব (১৩ আগস্ট) সরেজমিনে গেলে আড়কান্দি গ্রামের সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন জানান, এ প্রতারক চক্র যাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা হলেন আড়কান্দি গ্রামের আনারুল ইসলাম লাল্টু, একই গ্রামের আলমগীর, আনোয়ার হোসেন, জিয়ার হোসেন, রিপন হোসেন, মোস্ত মিয়া, বাবলুর রহমান, উজ্জল হোসেন, সাহেব আলী, কামাল হোসেন, সরোয়ার হোসেন, আমজেদ আলী, উজ্জল, আমিনুর রহমান, আপেল উদ্দিন, বাহাজ্জেল হোসেন, লতা মিয়া, মির্জাপুর গ্রামের দুই ভাই বিমল ও অমল, শরিফুল ইসলাম, স্বর্পরাজপুর গ্রামের হাসানুর রহমান, হাফিজুর ও ইকবাল হোসেন।
ভুক্তভোগীরা স্বল্পমূল্যে পাকা বাড়ি পাওয়ার আশায় জমি বিক্রি বা বন্দক, গরু ছাগল বিক্রি, নিকটআত্মীয়র কাছ থেকে ধার নিয়ে টাকা জোগাড় করেন। এখন তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।ভুক্তভোগীরা জানান, আনারুল ইসলাম লাল্টু ও আড়পাড়ার ব্যবসায়ী ছমির হোসেনের সাথে প্রতারকের সুস¤পর্ক দেখে তারা টাকা দিয়েছেন। উনি প্রতারক না সাধু তা তারা জানেন না। প্রতারকের নাম ঠিকানা লাল্টু বা ছমির জানেন বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেন।মুদি দোকানি ছমির হোসেন বলেন, আমার ভবনে ব্যাংক হবে। আমি সেটি নিয়ে কথা বলেছিমাত্র। ঘরের ব্যাপারে কিছু জানিনা।আড়কান্দি গ্রামের আনারুল ইসলাম লাল্টুর পিতা লুৎফর রহমান বলেন, প্রতারকের খপ্পরে পড়ে আমরা এখন চরম অসহায়। মানুষ টাকার জন্য নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। ভয়ে ছেলেটি বেশ কিছুদিন বাড়িছাড়া। তিনি প্রতারকের সন্ধানসহ টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।এ ব্যাপারে জগদীশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত দুইদিন হলো বিষয়টি আমি শুনেছি। ভুক্তভোগীরা আমার কাছে এসেছিলো। প্রতারক চক্র ২৩ টি পরিবারের নিকট থেকে সাড়ে ৩ লাখ করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার পরিমান ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আমি ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ সহকারে পরিষদ কার্যালয়ে আসতে বলেছি।
কিউএনবি/অনিমা/১৩ অগাস্ট ২০২৩,/দুপুর ২:৪৮