লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : পৃথিবীজুড়েই একজিমা নামের চর্মরোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। শরীরের যেকোনো অংশেই যে কারোরই এটা হতে পারে; তবে সাধারণত শরীরের যেসব স্থান শুষ্ক ও সংবেদনশীল সেখানেই এটা বেশি হতে দেখা যায়। এ রোগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এ ক্ষেত্রে অনেক সময়ই বংশগত প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়।
শরীরের যেকোনো স্থানেই দেখা দিক না কেন, প্রথমে আক্রান্ত স্থান একটু লালচে হয়ে যায়, সেখানে বেশ চুলকায়, পরবর্তী পর্যায়ে সেখানে দেখা দেয় ছোট ছোট গোটা, যা কয়েক দিনের মধ্যেই ফুসকুড়ির আকার ধারণ করে।
একজিমার উপসর্গ
যেহেতু চুলকানি এই রোগটির অন্যতম প্রধান উপসর্গ, তার ফলে নখের আঁচড়ে সেই ফুসকুড়িগুলো গলে গিয়ে সেখান থেকে অল্প কষের মতো নিঃসরণ হতে থাকে। এই নিঃসরণ আবার ত্বকের উপরিভাগে শুকিয়ে গিয়ে একটা পাতলা চলটার মতো আকার ধারণ করে। আর সেটাতেও চুলকানির প্রকোপ থাকার ফলে সেটা এক পর্যায়ে আক্রান্ত স্থানের উপরিভাগ থেকে আলগা হয়ে খসে পড়ে যায়। এই পর্যায়ে রোগাক্রান্ত জায়গাটি আবরণহীন হালকা ঘায়ের মতো আকার ধারণ করে।
চিকিৎসা না করা হলে সেই জায়গাটি আপাত দৃষ্টিতে কিছুদিন স্বাভাবিকভাবে সেরে উঠছে বলে মনে হলেও সেখানে চুলকানির উপসর্গটি কিন্তু অব্যাহতই থেকে যায়, ফলে সেখানে আবার ছোট ছোট গোটা, তারপর ফুসকুড়ি, চুলকানির ফলে সেগুলো গলে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে ঘটতেই থাকে এবং আক্রান্ত স্থানটি আকারে আরো বেড়ে যায় এবং দেখা যায় সেই সময় শরীরের অন্যান্য জায়গায়ও একই রকম লক্ষণ ও উপসর্গ শুরু হচ্ছে, অর্থাৎ রোগটি এক জায়গায় সীমাবদ্ধ না থেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
একজিমা হলে কী করবেন?
একজিমা রোগীদের ত্বককে আর্দ্র রাখতে হবে। গোসলে বেশি গরম পানি ব্যবহার করবেন না, বেশি বেশি সাবান বা শ্যাম্পুও নয়। গোসলের পর অতিরিক্ত ঘষাঘষি করে না শুকিয়ে তোয়ালে বা নরম কাপড় দিয়ে পানি সরিয়ে নিন ও আর্দ্র অবস্থাতেই ময়েশ্চারাইজিং লোশন বা তেল মেখে নিন। পুরু ময়েশ্চার যা দীর্ঘক্ষণ আর্দ্রতা ধরে রাখে, সেটাই ভালো। যেসব ক্রিম বা লোশনে বাড়তি সুগন্ধি বা রাসায়নিক উপাদান নেই, সেগুলোই বেছে নিন।
চুলকানি কমানোর জন্য অ্যান্টি-হিস্টামিন খেতে পারেন। এরপরও যাঁদের ভীষণ চুলকানি হয়, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু স্টেরয়েড মলম ব্যবহার করতে পারেন। ময়েশ্চারাইজিং লোশন ও এই স্টেরয়েড ক্রিম একই জায়গায় একই সঙ্গে ব্যবহার করা যাবে না।
সমস্যা আরও বেশি প্রকট হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইমিউন মডুলেটর ওষুধ ব্যবহার করা যায়। একজিমা কখনো পুরোপুরি সারবে না। তবে একে নিয়ন্ত্রণে রেখে আপনি ভালো থাকতে পারবেন।
মনে রাখা জরুরি
একজিমা কখনোই ছোঁয়াচে রোগ নয়। এই রোগের সঙ্গে খাবারদাবারের কোনো সম্পর্ক নেই, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের যেমন ধারণা রয়েছে যে কচু, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, গরু, চিংড়ি, ইলিশ, বোয়াল, পুঁটি ইত্যাদিসহ আরো অনেক খাবার খেলে একজিমা রোগটির উৎপত্তি ঘটে বা এটা অবধারিতভাবে বেড়ে যায়, এই কথাটি একদমই সত্য নয়। স্বাস্থ্যকর যেকোনো খাবারই এ রোগে আক্রান্ত রোগী খেতে পারবেন, তাতে এ রোগের কোনো রকম ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না।
খাবারদাবারের বাছবিচার না থাকলেও একজিমা রোগে বেশ কিছু জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হয়। সেগুলোর মধ্যে সাবান ও ডিটারজেন্টজাতীয় দ্রব্যাদি অন্যতম। একজিমা রোগটি সাবানজাতীয় দ্রব্যে প্রচণ্ড সংবেদনশীলতা থাকে, সাবান ছাড়াও রাবার, প্লাস্টিক, সিনথেটিক কাপড়ও এই রোগটির উৎপত্তি বা ক্রমবৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায়।
কিউএনবি/অনিমা/৩১ জুলাই ২০২৩,/রাত ১১:০৬