বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : বদলে যাচ্ছে দেশের পূর্বাঞ্চলের অন্যতম রেলওয়ে জংশন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া। স্টেশনকে ঘিরে যেন উন্নয়নের মহাকাব্য রচিত হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে স্টেশন ভবনের আধুনিকায়ন, নতুন একাধিক প্লাটফরম নির্মাণ, রেল ট্র্যাক স্থাপন, আধুনিক সংকেত (সিগন্যাল) ব্যবস্থা। বদলে যেতে থাকা আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনকে হঠাৎ কেউ দেখলে চিনে উঠা দায়।সেই উন্নয়নের মহাকাব্যে বঞ্চিত প্রতিবন্ধীরা। সারাদেশে বিশেষ করে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত নতুন রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্য সমতল সিঁড়ি থাকলেও এখানে সেটি করা হয়নি। সমতল সিঁড়ি না থাকায় প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি বয়স্ক ও শিশু যাত্রীরা এবং বেশি মালামাল নিয়ে ভ্রমণ করবেন এমন যাত্রীরা বিপাকে পড়বেন। সাধারণ যে সিঁড়ি করা হয়েছে সেটিও অনেক উচ্চতার ও বেশ দৈর্ঘ্যরে হওয়ায় কষ্ট হবে যাত্রীদের।
এদিকে বিষয়টি অনুধাবন করে এলাকাবাসীর পক্ষে নিজ সংসদীয় এলাকার সংসদ সদস্য এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে সমতল সিঁড়ি করার আবেদন করেছেন আখাউড়া পৌরসভার কাউন্সিলর কাজী এনাম খাদেম। গত শুক্রবার তিনি এ সংক্রান্ত লিখিত আবেদন আইনমন্ত্রীর কাছে দেন। আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েল গেজ নির্মাণ ও রেলওয়ে স্টেশন উন্নয়ন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০ জুলাই রেলপথ উদ্বোধনের কথা রয়েছে। আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের কাজ শেষ হতে আরো কয়েকমাস সময় লাগবে। ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন ও রেলওয়ে স্টেশনের উন্নয়ন কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে ১৭টি নতুন লাইন বসানো হচ্ছে। মোট প্লাটফরম হচ্ছে তিনটি। এ জন্য প্রায় ১৯০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ৩০ ফুট উচ্চতার সাধারন সিঁড়ি করা হচ্ছে। তবে নেই কোনো র্যাম্প বা সমতল সিঁড়ি। কাজের সুবিধার্থে পুরাতন প্লাটফরম দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখায় নতুন প্লাটফরমেই আসছে ট্রেন। যে কারণে বিশাল সিঁড়ি বেয়ে যাত্রীদেরকে ট্রেনে উঠতে হচ্ছে।
১৩ জুলাই শারিরিক অসুস্থতা নিয়ে চট্টলা ট্রেনে চড়তে স্টেশনে ঢুকছিলেন নরসিংদীর মো. আমীর হোসেন। স্বজনদের কাঁধে ভর করে চলতে থাকা অসুস্থ এ মানুষটি বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘এ টাকা খরচ করে এমন স্টেশন করে কি লাভ? সামান্য কিছু টাকার জন্য প্রতিবন্ধী ও বয়স্করা টাকার জন্য বঞ্চিত হলো নাকি এখানে কোনো ভুল হয়েছে সেটা জেনে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ মো. নায়েব আলী নামে এক শারিরিক প্রতিবন্ধী যাত্রী সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘সমতল সিঁড়ি হলে আমাদের চলাচলে সুবিধা হতো। এখন যে ধরণের সিঁড়ি করা হচ্ছে সেটি দিয়ে শারিরিক প্রতিবন্ধীদের চলা কোনোভাবেই সম্ভবপর হয়ে উঠবে না।’ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ড্রিম ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো. হেদায়েতুল আজিজ মুন্না বলেন, ‘আমাদের অধিকার ও সুরক্ষা আইনে বলা আছে যে, ভৌত অবকাঠামো, যানবাহন, যোগাযোগ, তথ্য ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ জনসাধারণের জন্য প্রাপ্য্য সকল সুবিধা ও সেবাসমূহে অন্যান্যদের মত প্রত্যেক সমসুযোগ ও সমআচরণ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আখাউড়ার মতো দেশের গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশনে প্রতিবন্ধীদের চলার মতো সুবিধা না থাকাটা দুখ:জনক। আমি আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টির দ্রত সুরাহা করবেন। ’আখাউড়া পৌরসভার কাউন্সিলর মো. এনাম খাদেম বলেন, ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেশনে র্যাম্প সিঁড়ি না থাকা দুখ:জনক। বিষয়টি নজরে আসার পর আইনমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি মন্ত্রী মহোদয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে নকশা রয়েছে তাতে সমতল সিঁড়ির কথা বলা নেই।
আমার মনে হয় এটা একটা ভুল। সাধারণ সিঁড়ি হয়ে যাওয়ায় সমতল সিঁড়ির জন্য এখন জায়গা করাও মুশকিল হবে। তারপরও যদি নতুনভাবে কিছু চিন্তা করা হয় তাহলে সেটা করতে হবে।আখাউড়া-লাকসাম ডাবল রেলপথ নির্মাণ কাজের প্রকল্প পরিচালক সুবক্ত গীন সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘স্টেশনের উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে র্যাম্প নেই। যে কারণে সেটি করা হয়নি। যথাযথভাবে এ বিষয়ে আবেদন পাওয়া গেলে এলাকাবাসীর চাহিদা অনুযায়ি পরামর্শক ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কিউএনবি/অনিমা/১৮ জুলাই ২০২৩,/সকাল ১১:১৮