ডেস্ক নিউজ : মসজিদে কিবলাতাইন- ইসলামের ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। মদিনার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত মসজিদে কিবলাতাইন ইসলামি যুগের তৃতীয় মসজিদ। হজরত আদম (আ.) থেকে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত লক্ষাধিক নবী-রাসুলের একটি মাত্র কিবলা ছিল, তা হলো বায়তুল মাকদিস। কিন্তু নবী মুহাম্মদ (সা.) ও তার উম্মতের একাংশের ভাগ্যে বায়তুল মাকদিস ও পৃথিবীর প্রথম ঘর পবিত্র কাবা, এই উভয় কিবলার দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের বিরল সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে।
মসজিদটি বনু সালামা অঞ্চলে হওয়ার সুবাদে এর প্রথম নাম ছিল মসজিদে বনু সালামা। নবী কারিম (সা.) মদিনায় হিজরতের পর প্রায় ১৬ মাস বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। এরপর বায়তুল মাকদিসের পরিবর্তে মহান আল্লাহ পবিত্র কাবাকে মুসলমানদের জন্য চিরস্থায়ী কিবলা হিসেবে নির্ধারণ করেন, যা আজও বিশ্বের মুসলমানের কিবলা হিসেবে পরিগণিত।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর উত্তরসূরি হওয়ার সুবাদে মিল্লাতে ইবরাহিমের প্রতিষ্ঠা ও পুনর্গঠনের জন্য কাবার দিকে মুখ করার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। আর মুসলমানদের কিবলা বায়তুল মাকদিস হওয়ার কারণে কপট ইহুদিরাও এই বলে অপপ্রচার করে বেড়াত যে আমাদের ও মুসলমানদের কিবলা যেহেতু এক এবং অভিন্ন, অতএব ধর্মের ক্ষেত্রেও মুসলমানদের উচিত আমাদেরই অনুসরণ করা।
এসব কারণে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হৃদয়ের সুপ্ত বাসনা ছিল, কাবা যদি মুসলমানদের কিবলা হতো! এ বাসনা তীব্রতর হলে তিনি ব্যাকুল নয়নে আকাশের দিকে বারবার তাকাতেন, অহির মাধ্যমে এর অনুমোদনের প্রত্যাশায়। হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসে মতান্তরে রজব মাসের মাঝামাঝি সময়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরামসহ হজরত বিশর ইবনে বারা (রা.)-এর নিমন্ত্রণে যোগ দিতে মদিনার অদূরে বনু সালামায় পৌঁছে জোহরের নামাজ, মতান্তরে আসরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে তাশরিফ নিলেন। বলা বাহুল্য, নামাজে ইমাম ছিলেন রাসুল (সা.) আর মুক্তাদি ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম (রা.)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি সময়ে আল্লাহর প্রিয় হাবীব (সা.)-এর আন্তরিক ইচ্ছার বাস্তবায়নে হজরত জিবরাইল (আ.) আল্লাহর শাশ্বত বাণী নিয়ে অবতীর্ণ হলেন। হে মুহাম্মদ! আপনি নিজের মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরান এবং (মুসলমানরা) তোমরা যেখানেই থাকো, সে দিকেই নিজেদের মুখ ফেরাবে।
আল্লাহর নির্দেশে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাত কাবা শরিফের দিকে ফিরে আদায় করেছিলেন, বিধায় এ মসজিদ ইসলামের ইতিহাসে মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলাবিশিষ্ট মসজিদ নামে সুপরিচিত ও সমাদৃত। দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে মদিনা মোনওয়ারার বনি সালামা অঞ্চলের খালিদ বিন ওয়ালিদ সড়কসংলগ্ন এ মসজিদ সর্বপ্রথম হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) নির্মাণ করেন। খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) ১০০ হিজরিতে মসজিদে কিবলাতাইন পুনর্নির্মাণ করেন। এর দীর্ঘকাল পর মসজিদে নববির প্রখ্যাত খাদেম শুজায়ি শাহিন আল জামালি ৮৯৩ হিজরিতে ছাদসহ মসজিদে কিবলাতাইন পুনর্নির্মাণ করেন। এই নির্মাণের ৫৭ বছর পর তুরস্কের উসমানীয় খলিফা সুলাইমান আল কানুনি ৯৫০ হিজরিতে আগের তুলনায় বৃহৎ আয়তনে মসজিদে কিবলাতাইন পুনর্নির্মাণ করেন।
এ মসজিদ একটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, যা অন্য কোনো মসজিদে নেই। তা হলো, হজরত রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত এই মসজিদে দুটি মেহরাব তথা ইমামের দাঁড়ানোর স্থান ছিল। যার একটি বায়তুল মাকদাসমুখী। অন্যটি ছিল কাবাঘরমুখী। পরে সংস্কারের সময় অবশ্যই বায়তুল মাকদাসমুখী মিম্বরটি গুঁড়িয়ে দিয়ে কাবাঘরমুখী মেহরাবটি অবশিষ্ট রাখা হয়। ঐতিহ্যবাহী আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ ঐতিহাসিক মসজিদের মুসল্লি ধারণক্ষমতা দুই হাজার। মসজিদটির আয়তন তিন হাজার ৯২০ স্কয়ারমিটার। গম্বুজসংখ্যা দুটি, ব্যাস আট মিটার ও সাত মিটার। উচ্চতা ১৭ মিটার। মিনার সংখ্যা দুটি। ইসলামের স্বর্ণালি ইতিহাসে মসজিদে কিবলাতাইনের আবেদন চিরভাস্বর।
কিউএনবি/আয়শা/২৬ জুন ২০২৩,/রাত ৮:৫০