গত মঙ্গলবার (১৯ জুন) বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফর শুরু করেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২২ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে নির্ধারিত সাক্ষাৎ রয়েছে নরেন্দ্র মোদির। এ সফরে দুই দেশের প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সম্পর্ক জোরদার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে এরই মধ্যে বুধবার (২১ জুন) মার্কিন গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টেসলার প্রধান ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের মালিক ইলন মাস্ক সাক্ষাৎ করেছেন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদফতর প্রাঙ্গণে বিশ্ব যোগ দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
সফরসূচি অনুযায়ী এদিন (বৃহস্পতিবার) মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার কথা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির আমন্ত্রণে নৈশভোজে যোগ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্থানীয় সময় বুধবার (২১ জুন) রাতে হোয়াইট হাউসে মোদিকে স্বাগত জানান জো বাইডেন ও জিল বাইডেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসে পৌঁছলে নরেন্দ্র মোদিকে সঙ্গীতের মাধ্যমে বিশেষ অভ্যর্থনা জানানো হয়। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির সঙ্গে তাকে কথা বলতে দেখা যায়।
পরে জো বাইডেন এবং জিল বাইডেনের পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদিকে বিশেষ উপহার দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতকের শুরুর দিকে হাতে লেখা মার্কিন পুস্তক দেয়া হয় মোদিকে। অতি পুরনো একটি ক্যামেরা ও ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফির ওপর বিশেষ বইও উপহার দেন জো বাইডেন। আর মোদিকে রবার্ট ফ্রস্টের স্বাক্ষর করা একটি কবিতার বই দেন জিল বাইডেন। কৌশলগত অংশীদার হিসেবে নরেন্দ্র মোদি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, নৈশভোজের আয়োজন তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদির সফরটি বাইডেন প্রশাসনের জন্য একটি পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। কারণ ক্রমবর্ধমান জনতুষ্টি এবং মেরুকরণের যুগে নিজেদের বিশ্বের গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করেছে বাইডেন। অপরদিকে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থেকে আপাতদৃষ্টিতে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।
হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ক্রমবর্ধমান কট্টর রূপ দেখানো এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়নের অভিযোগে মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও বিরোধীদলীয় আইন প্রণেতারা। ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক অংশীদার মনে করলেও মোদির এ সফরকালে এসব উদ্বেগ উত্থাপন করতে বাইডেনের ওপর চাপ রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে ওয়াশিংটনে এ বিষয়ে খুব একটা সমালোচনা হবে না। সেই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লাখ ভারতীয় অভিবাসীর ভোট ব্যাংক আরও একটি বড় বিবেচনার বিষয়।
ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসের (ইউএসআইপি) দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ড্যানিয়েল এস মার্কি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারতকে বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি কৌশলগত ‘সুইং স্টেট’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনা করে। কারণ ভূ-রাজনীতিতে মানবাধিকার ইস্যু ‘সাধারণত পেছনের সারিতেই স্থান পায়’।
এস মার্কি আরও বলেন, এ সফর বাইডেনের জন্য একটি পরীক্ষা হবে। কারণ মোদির কর্তৃত্ববাদী নীতিকে সমর্থন করা তার উচিত হবে না।
সূত্র: সিএনএন ও রয়টার্স