আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পারভেজ মোশাররফ। পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ। যিনি ১৯৯৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল অল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এপিএমএল)। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পারভেজ মোশাররফ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। আসুন, একনজরে জেনে নেই পারভেজ মোশাররফের জীবনের সাতকাহন।
সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার প্রায় এক বছর পর তিনি নওয়াজ শরিফকেই ক্ষমতাচ্যুত করেন। জেনারেল মোশাররফকে সেনাবাহিনীর প্রধান করা ছিল পিএমএল-নওয়াজের এই নেতার জন্য একটি বাজি। কারণ তিনি জ্যেষ্ঠ জেনারেলদের পাশ কাটিয়ে তাকে সেনাপ্রধান করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। ওই ব্যর্থতার দায় একা নিতে চায়নি সেনাবাহিনী। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মোশাররফকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন নওয়াজ। কিন্তু সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। নওয়াজ সরকারের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থন জানান জেনারেল মোশাররফ। পাকিস্তানে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যে চাপ ছিল এবং দেশের ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী যে মতাদর্শ ছিল, তার মধ্যে ভারসাম্যের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো এবং আফগান সরকারের অভিযোগ ছিল, আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় আল–কায়েদা ও তালেবানের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি মোশাররফ।
২০০১ সালে যখন জানা যায়, আল-কায়েদার তৎকালীন নেতা ওসামা বিন লাদেন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানে বসবাস করছেন এবং তার অবস্থান সেনা একাডেমি থেকে খুব বেশি দূরে নয়, তখন মোশাররফের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যদিও তিনি বলেছিলেন, ওসামা বিন লাদেনের অবস্থান সম্পর্কে তিনি জানতেন না। জেনারেল মোশাররফ পাকিস্তানের ক্ষমতায় থাকতে বিচার বিভাগের সঙ্গে একধরনের লড়াইয়ে নেমেছিলেন। তিনি দেশের আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট পদে আসীন থাকতে চেয়েছিলেন।
এ জন্য তিনি প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মুহাম্মদ চৌধুরীকে বরখাস্ত করেন। এতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমনে তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর নওয়াজ নির্বাসন থেকে দেশে ফেরেন। তার ফিরে আসার মধ্য দিয়ে মোশাররফ জামানার অবসানের শুরু হয়। যদিও মোশাররফ জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে হেরে যায় তার দল। এই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ছয় মাস পর অভিশংসন এড়াতে পদত্যাগ করেন তিনি।
২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় বেআইনিভাবে সংবিধান বাতিল ও জরুরি অবস্থা জারির দায়ে ২০১৩ সালে মোশাররফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ তাকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বিশেষ আদালতের কাছে বিচারের জন্য সব তথ্যপ্রমাণ পেশ করা হয়। তবে আপিল ফোরামে মামলাটি তোলার পর বিচারকাজ দীর্ঘায়িত হয়ে পড়ে এবং মোশাররফ ২০১৬ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যান।চিকিৎসার জন্য তাকে দেশত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর অবৈধভাবে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে ২০১৯ সালে তাকে দেশটির একটি বিশেষ আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম বেসামরিক আদালতে দেশদ্রোহের অভিযোগে কোনো সাবেক সেনাপ্রধানের বিচারের রায় হয়েছিল।
কিউএনবি/আয়শা/০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/বিকাল ৫:১৮