শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩৬ অপরাহ্ন

নওগাঁয় ইউটিউবে ভিডিও দেখে মাশরুম চাষে সাফল্য সাগর আলী

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১১১ Time View

সজিব হোসেন,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি : ইউটিউবে ভিডিও দেখে মাশরুম চাষে আগ্রহী হন নওগাঁর সবজি বিক্রেতা সাগর আলী। প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বল্প পুঁজিতে প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করেন মাশরুম চাষ। মাশরুম চাষ লাভ জনক হওয়ায় আস্তে আস্তে তিনি বড় পরিসরে মাশরুমের খামার গড়ে তোলেন। এতে তিনি বেশ সাফল্য হয়েছেন। খুব কম সময়ের মধ্যে লাভের মুখ দেখছেন তিনি। মাশরুম বিক্রি করে সংসারেও ফিরছেন আর্থিক স্বচ্ছলতা। সবজি বিক্রেতা সাগর আলী নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তপুর ইউনিয়নের বেনী-ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা। সরেজমিনে তার মাশরুম খামারে গিয়ে দেখা যায়, দুই কাঠা জমির উপরে টিন দিয়ে ঘর তৈরি করেছেন। ওই ঘরে কটের সুতো দিয়ে ঝুলে রাখা হয়েছে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ৩শ টি মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট)। সেই পলিথিনের গায়ে সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে সাদা আস্তরণ দেখা যাচ্ছে মাশরুম। সেখান থেকেই কেটে বাজারজাত বা বিক্রি করছেন তিনি। এছাড়াও প্রতিদিন তার খামারে মাশরুম কিনতে ও দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ আগ্রহী হয়ে উঠছেন পুষ্টগুনে ভরপুর এই মাশরুম চাষে।

স্থানীয় সাজ্জাদ আলী বলেন, শুনলাম সাগর ভাই তার বাড়ির পাশে মাশরুম চাষ করেছেন। এই জন্য দেখতে আসলাম। মাশরুম চাষ সম্পর্কে আমাদের পূর্বে জানা ছিল না। এমনকি মাশরুমের নামও জানা ছিল না। কম খরচে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তিনি। তাই চিন্তাভাবনা করছি তার কাছ থেকে মাশরুম চাষ শিখে আমিও করবো। হামিদুর রহমান নামে আরেকজন বলেন, মূলত এখানে এসেছি মাশরুমের খামার দেখতে। দেখে খুবই ভালো লাগলো। শুনলাম মাশরুম চাষে তেমন কোন খরচ নেই। আমিও মাশরুম চাষ করার উদ্যোগ নেবো। যাতে করে অল্প খরচে লাভবান হওয়া যায়। তার কাছ থেকে পরামর্শ নেব কিভাবে মাশরুম চাষ করা যায়। নওগাঁ শহর থেকে মাশরুম কিনতে এসেছেন আব্দুল্লাহ আল মুসাব্বের। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যের জন্য ভালো যে খাবারটা; মাশরুম তার মধ্যে অন্যতম। চোখের জন্য, ডায়াবেটিসের জন্য, ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোলের জন্য বলেন সবদিক থেকে এই খাবারটা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু এ আমাদের এলাকায় সেভাবে মাশরুম পাওয়া যায় না। আমার এক ছোট ভাই এখান থেকে মাশরুম কিনে খেয়ে ভালো লেগেছে।

এই জন্য তার কথা শুনে আমিও মাশরুম কিনতে এখানে এসেছি। এখানে এসে একদম ফ্রেশ টাটকা ১ কেজি মাশরুম কিনলাম। দামও কম আছে। তার সাথে এসেছেন মাহবুব আলম। তিনি বলেন, আমরা মাশরুম সুপার শপ থেকে কিনে খেয়েছি। এখন বাড়ির কাছে সাগর ভাই মাশরুম চাষ করেছেন। অবশ্যই এটি ভালো উদ্যোগ। তার এই মাশরুম চাষ দেখে অনেক বেকার যুবক উদ্বুদ্ধ হবে। এবং এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় ভাবে একটি ভালো বাজার গড়ে উঠবে। সবজি বিক্রেতা সাগর আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নওগাঁ শহরের সিও অফিস বাজারে ছোট্ট একটা দোকান বসিয়ে সেখানেই সবজি বিক্রে করি। ১ বছর আগে সবজি বিক্রির ফাঁকে ইউটিউবে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার একটি ভিডিও দেখি। এরপর চিন্তা করি কিভাবে অবসর সময়ে মাশরুম চাষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরানো যায়। এরপর যশোরের মাগুরা ড্রিম মাশরুম সেন্টারে গিয়ে চার দিনের প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার সময় সেখান থেকে অল্প কিছু বিজ দিয়েছিল। সেই বীজ নিয়ে এসে ১৬শ টাকা খরচ করে প্রথমে ৩০টি মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট) তৈরি করি।

পরে সেখান থেকে ৭ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করি। তারপর পাহাড়পুর বাজারে একটি ঘর তৈরি করে সেখানে ৬ মাস মাশরুম চাষ করে অনেক টাকা লাভ দেখতে পায়। পরে বাড়ির পাশে নিজের দুই কাটা জায়গায় ঘিরে সবজি বিক্রির পাশাপাশি মাশরুম চাষ শুরু করি। তিনি বলেন, বর্তমানে আমার খামারে ৩শ টি অয়েস্টার জাতের মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট) রয়েছে। সবকিছু মিলে প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একেকটি স্পন প্যাকেট তৈরি করার ৩০ দিন পর থেকে মাশরুম আসা শুরু হয়েছে। গত পাঁচ দিন থেকে মাশরুম উঠতে শুরু করেছে। পাঁচ দিনেই ৬ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেছি। প্রথম অবস্থায় একটি স্পন প্যাকেট থেকে ২৪০ থেকে ৩শ টাকার মাশরুম বিক্রি হচ্ছে। এভাবে আরও দুই মাস একেকটি স্পন প্যাকেট থেকে ৪ বার মাশরুম পাওয়া যাবে। বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে মাশরুমের। প্রতিদিন বিভিন্ন চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট থেকে অর্ডার দিচ্ছে। প্রতি কেজি পাইকারি ২৫০ টাকা ও খুচরা ৩শ টাকা বিক্রি করছি। আশা করছি ভালো লাভবান হবো। সামনে আরও বড় পরিসরে করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

সাগর আলী বলেন, মাশরুম উৎপাদন করা খুব সহজ। মাশরুম চাষের জন্য এক থেকে দেড় ইঞ্চি করে খড় কাটতে হবে। এরপর সিদ্ধ করে হালকাভাবে শুকাতে হয়। যাতে চাপ দিলে পানি না ঝরে। এরপর খড়গুলো পলিথিনের প্যাকেটে রেখে তাতে মাশরুমের বীজ দিতে হবে। প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে কয়েকটা ছিদ্র করে দিতে হবে। দিনে ৩-৪ বার পানি দিতে হয়। সাধারণত ২৫-৩০ দিনের মধ্যে পলিথিনের গায়ে সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে সাদা আস্তরণ দেখা যাবে যাকে মাইসেলিয়াম (মাশরুমের ছাতা) বলে। এরপর মাশরুম খাওয়ার উপযোগী হয়। বর্তমানে সাগর আলী মাশরুম উৎপাদনের পাশাপাশি মাশরুম বীজ (স্পন) উৎপাদন তৈরি করছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে তার এই মাশরুমের খামার দেখতে আসছে। শুনছে কিভাবে তৈরি করছেন। মাশরুম উৎপাদন করা সহজ শুনে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান তিনি। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, মাশরুম একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। মাশরুম ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের জন্য অনেক উপকারী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন মাশরুম চাষ শুরু হয়েছে। চাইনিজ রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং মানুষজন ধীরে ধীরে এর ব্যাবহারে অভ্যস্ত হচ্ছে। আমি মনে করি খুব অল্প জায়গায় ও অল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষ করা যায় এবং এটি লাভজনক একটি ব্যাবসা।

কিউএনবি/অনিমা/০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/সন্ধ্যা ৬:২৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit