মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম
যে কারণে গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে পরিমণির মামলা খারিজ হতে যাচ্ছে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ ইসরাইলের সাথে সংঘাতে নিহতের নতুন সংখ্যা জানাল ইরান জার্মান গোয়েন্দা বিমানে চীনের ‘লেজার অ্যাটাক’! নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে ৫৬ রানের জুটি ভাঙলেন তানভীর বরখাস্তের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রুশ মন্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার বিগত ৩ নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আগামীতে সুযোগ পাবে না: সিইসি সমুদ্রে ভেসে গেল চবি’র ৩ শিক্ষার্থী, একজনের মরদেহ উদ্ধার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে মনোয়ন দিলেন নেতানিয়াহু এসএসসির ফল প্রকাশ ১০ জুলাই দুপুর ২টায়, জানা যাবে যেভাবে

অতিরিক্ত কেনাকাটা কি রোগ!

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১২৫ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : বিজ্ঞানের তাক-লাগানো অগ্রগতি পাল্টে দিয়েছে আধুনিক মানুষের জীবনযাপনের ধরন। স্যাটেলাইট টেলিভিশন, ই-মেইল, ফেসবুক-টুইটারসহ বহুরকম অ্যাপস ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে আজকের মানুষ। প্রতি মুহূর্তে তাকে সামলাতে হচ্ছে অগণিত তথ্যের অবিরাম স্রোত। এমন ঠাসবুনোটের ভিড় এড়িয়ে সে ঘরে ফেরে নিরিবিলিতে একটু দম ফেলার আশায়। কিন্তু সে ঘর যদি হয় পণ্যবোঝাই, তা কি পারে জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে? দিতে কি পারে একটু শান্তি?

পাশ্চাত্যের সমাজবিজ্ঞানীরা নেমে পড়েছেন সে উত্তর খুঁজতে। পৃথিবীতে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত আকর্ষণীয় আর নিত্যনতুন সব পণ্যের বিজ্ঞাপন নিয়ে মার্কিনিদের দুয়ারে হাজির হচ্ছে। প্রয়োজন থাকুক বা নাই থাকুক, তারাও দেদারসে কিনছে ওসব। ক্রমশ ভরিয়ে ফেলছে ঘরবাড়ি। খালি থাকছে না বাড়ির বেজমেন্ট গ্যারেজ বারান্দা উঠান কোনো কিছুই।

মনোবিজ্ঞানীরা মার্কিনিদের পণ্য কেনার এই অস্বাভাবিক বিকারগ্রস্ততার নাম দিয়েছেন হাইপারঅ্যাকুইজিশন। হাইপারঅ্যাকুইজিশন এর ওপর এক দশকের দীর্ঘ গবেষণার পর গবেষকরা তাদের মতামত জানিয়েছেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলস (ইউসিএলএ)-এর নৃবিজ্ঞানী ইলিনর ওকস-এর মতে, অতিরিক্ত পণ্য কেনা ও সংগ্রহের প্রবণতা মানুষকে শান্তি দেয় না, বরং তা একসময় হয়ে দাঁড়ায় দুশ্চিন্তা ও মানসিক অশান্তির কারণ। কেনই-বা মার্কিনিদের এই পণ্যপ্রীতি?

নেপথ্যের ইতিহাসটা চমকপ্রদ। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মেলবন্ধন ঘটে। আগের যে-কোনো সময়ের তুলনায় পণ্য হয়ে পড়ে সহজলভ্য এবং সস্তা। সেই থেকে শুরু মার্কিনিদের পণ্যপ্রীতি। একপর্যায়ে যা প্রভাবিত করে তাদের সামাজিক মূল্যবোধকেও। শুধুমাত্র ক্রয়ক্ষমতাই একজন মানুষের সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে-এ ধারণা গেঁথে যায় মার্কিন সমাজের মর্মমূলে। ব্যবসায়ীরা দেখল, এতো দারুণ সুযোগ! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সে-শের শীর্ষ মোটরগাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেনারেল মোটরস প্রতিবছর নতুন নতুন মডেলের গাড়ি বাজারজাত করতে শুরু করল। নিয়মিত গাড়ির মডেল বদলানো তখন আর প্রয়োজনের তাগিদে নয়, বরং রূপ নিল স্ট্যাটাস সিম্বলে।

না পারলে ঋণ করে হলেও কেনো, তবু কেনো। এভাবেই ধীরে ধীরে মার্কিনিদের মাঝে চালু হয়ে গেল ঋণ করে হলেও হালফ্যাশনের পণ্য কেনার অসুস্থ অভ্যাস ও প্রতিযোগিতা। আর তারই পথ ধরে আশির দশকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ক্রেডিট কার্ড। বড় বড় সুপারস্টোরের আবির্ভাব ঘটে। বিক্রি বাড়াতে ব্যবসায়ীরাও বেছে নেয় নানান রকম কৌশল। যেমন: বিভিন্ন উপলক্ষে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়, অনলাইনে কেনার সুযোগ, ২৪ ঘণ্টায় হোম ডেলিভারি ইত্যাদি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বাড়ি বদলের সময় একটি পরিবারে ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রীর গড় ওজন হয় সাধারণত ১১০০ থেকে ৩৪০০ কিলো। মার্কিনিদের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ নিদেনপক্ষে ৩৬০০ কিলো।

সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যান অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের বার্ষিক আয়ের প্রায় অর্ধেকই ব্যয় করে অপ্রয়োজনীয় বিলাসদ্রব্য কেনার পেছনে। প্রতিটি পরিবার গড়ে ২৪৮টি পোশাক ও ২৯ জোড়া জুতার মালিক। উপরন্তু, প্রতি বছর প্রায় ৮৪ হাজার টাকা ব্যয় করে তারা গড়ে আরো ৬৪টি পোশাক ও সাত জোড়া জুতা কেনে।

সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্যটি হলো, পৃথিবীর মোট শিশুদের মাত্র ৩.১ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে। অথচ, বিশ্বজুড়ে শিশুদের জন্যে বিক্রি হওয়া খেলনার ৪০ শতাংশের মালিক মার্কিন শিশুরা! পরিস্থিতি আগাম বুঝেই হয়তো অর্থনীতিবিদ ভিক্টর লেবো সেই ১৯৫৫ সালে বলেছিলেন, মার্কিনিদের জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য ভোগবাদিতা। খাওয়াদাওয়া আর ফূর্তির মাঝেই তারা জাগতিক সুখ ও আত্মিক মুক্তির সন্ধান করে চলেছে।

কেনাকাটার লাগামহীন এই হিড়িক মার্কিনিদের আটকে ফেলেছে পণ্যদাসত্বের শেকলে। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সে-দেশের পুরো সামাজিক কাঠামো।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক স্টেফানি প্রেস্টন তার দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ থেকে বলছেন, যখন কেউ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও বিষণ্নতায় থাকে তখন কেনাকাটার ব্যাপারে তার আগ্রহ আরো তীব্র হয়। বর্তমানে প্রতি ছয় জন মার্কিনির একজন দুশ্চিন্তাজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, কেনাকাটা করার সময় মস্তিষ্কে ডোপামিন হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে। তাই দুশ্চিন্তা-উদ্বেগে আক্রান্ত অনেক মার্কিনি যখন পণ্য কেনার মহোৎসবে মেতে ওঠে, তখন হয়তো তারা সাময়িকভাবে উৎফুল্ল হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে মানসিক প্রশান্তি তো দেয়ই না, বরং ঘটে উল্টোটা।

কারণ, আমরা যেসব জিনিস কিনে ঘর সাজাই, সেগুলো প্রাণহীন হলেও এসব বস্তুও আসলে আমাদের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। অহেতুক কেনা পণ্যে ঠাসা ঘর মস্তিষ্কে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় স্ট্রেস সৃষ্টিকারী হরমোন কর্টিসলের নিঃসরণ।

ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এবং প্রায় গোটা বিশ্বেই এই পণ্যপ্রীতি ও তার ফলশ্রুতিতে ব্যক্তিগত-পারিবারিক-সামাজিক অস্থিরতা ও হাইপারঅ্যাকুইজিশন সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল মূলত এটাই প্রমাণ করে যে, এ যুগে পণ্যের পরিমাণ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে মানুষের অভাববোধ। অনেক কিছু কিনেও মানুষ পারছে না তৃপ্ত হতে। মিটছে না তার অভাব। কারণ, শান্তির খোঁজে আত্মনিমগ্নতা ও আত্মশক্তি জাগরণের পথ ছেড়ে সে যতই বেছে নিক পণ্যের সমাহার আর আসুক হাজারো তথ্যের প্লাবন-কোনোটাই শেষপর্যন্ত তাকে দিতে পারে না সত্যিকারের প্রশান্ত জীবন।

(টাইম সাময়িকীতে প্রকাশিত বিশেষ নিবন্ধ)

কিউএনবি/অনিমা/৩০ জানুয়ারী ২০২৩/রাত ১১:৩৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit