আবু জাহের, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরে বারোদুয়ারী হাটের জায়গা দখলে নিয়ে ইটের স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এভাবে সরকারি হাটের জায়গা বেদখল হয়ে যাওয়ায় দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ায় লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তাদের জানানো হলেও সেদিকে তাদের কোনো নজরদারি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে সহজেই সরকারি হাটের জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে স্থায়ী স্থাপনা গড়ে তুলছেন। এরপর সেখানে একাধিক দোকান পজিশন তৈরী করে মোটা অঙ্কের টাকা জামানত নিয়ে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের খন্দকারপাড়া হাটখোলায় অবস্থিত বারোদুয়ারী হাট। দুই একর আটাত্তর শতক আয়তনের সরকারি এই হাটের জায়গা দখল করে বিগত ছয়-সাতদিন ধরে স্থায়ীভাবে ইট দিয়ে পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী জয়নাল শাহ্, জামাল শাহ্ ও আব্দুল আলীম নামের তিন ব্যক্তি। হাট সংলগ্ন করতোয়া নদীর পাশের কাফুড়া গ্রামের বাসিন্দা তারা। স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, বারোদুয়ারী হাটের অন্তত আট থেকে দশ শতক জায়গা দখলে নিয়ে স্থায়ীভাবে স্থাপনা তৈরী করা হয়েছে। সব মহলকে ম্যানেজ করেই এই দখল ও নির্মাণযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। শুধু এই তিন ব্যক্তি নয়, বারোদুয়ারী হাটের জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। অথচ প্রশাসনের লোকজন বিষয়টি জানার পরও নিশ্চুপ রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
হাটে আসা পিয়াজ ব্যবসায়ী সোলায়মান আলী বলেন, কিছুদিন আগেও হাটের ফাকা জায়গায় নিয়মিত দোকান বসে বেচাবিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু সেই জায়গা দখলে নিয়ে স্থায়ীভাবে স্থাপনা তৈরী করায় হাটের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আরেক মাছ ব্যবসায়ি আব্দুল গফুর বলেন, দিনদিন হাটের জায়গা দখলদাররা গিলে খাচ্ছে। ফলে হাটের আয়তন কমছে। এতে করে সরকার রাজস্ব হারালেও কতিপয় ব্যক্তি লাভবান হচ্ছেন। সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে ইট দিয়ে স্থায়ী দোকান ঘর নির্মাণ করে লাখ লাখ টাকায় পজিশন বিক্রি করছেন। সেইসঙ্গে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিয়ে হাজার হাজার টাকাও আদায় করছেন দখলদার ওই চক্রটি।
পৌরসভার উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ইতিপূর্বে হাটের জায়গায় স্থায়ী স্থাপনা নির্র্মাণ করার খবর পেয়ে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে হাটের জায়গা দখল করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি জানা নেই। তাই খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই ভূমি কর্মকর্তা। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, আমি এই উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। তাই অনেক বিষয় এখনও অজানা। তবে হাটের সরকারি জায়গা দখল করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। তাই বারোদুয়ারী হাটের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করা হলে সেটি ভেঙে দেওয়া হবে বলে দাবি করেন তিনি।
শেরপুর পৌরসভার মেয়র জানে আলম খোকা এ প্রসঙ্গে বলেন, হাটের জায়গা বুঝে পেতে সরেজমিন মাপযোগ প্রয়োজন। এজন্য উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করা হয়েছে। এরপর অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অভিযুক্তদের পক্ষে জয়নাল আবেদীন হাটের জায়গা দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, হাটের লাগোয়া আমাদের ব্যক্তিগত জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। সেটি দীর্ঘদিন ধরেই ভোগদখল করছেন তারা। এমনকি বর্তমান সাল পর্যন্ত খাজনাও পরিশোধ করেছেন বলে জানান।
কিউএনবি/আয়শা/৩০ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ২:৪০