তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : টুইটারের গোপন কর্মকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধানটি চালিয়েছেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট’র সাংবাদিক লি ফ্যাং। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন নথির ভিত্তিতে করা ওই অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাষ্ট্র প্রভাবিত কোনো প্রচারণা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও টুইটার দীর্ঘ সময় ধরে এর বিপরীত কর্মকাণ্ড চালিয়ে এসেছে।
লি ফ্যাংয়ের অনুসন্ধান মতে, রাষ্ট্রীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যায় এমন বয়ান ছড়িয়ে দিতে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দিয়েছে টুইটার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্লাটফর্মে অনেক সময় প্রপাগান্ডা বা প্রচারণামূলক তথ্য সম্বলিত ছবি ও ভিডিওকে চিহ্নিত করে ‘স্প্যাম’ হিসেবে অভিহিত করে তা ডিলিট করে দেয়া হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) পরিচালিত বেশ কিছু অ্যাকাউন্টকে ‘বিশেষ সুরক্ষা’ দিয়েছে টুইটার।
অ্যাকাউন্টগুলো যাতে ‘স্প্যাম বা ‘অ্যাবিউজ ফ্লাগ’র হাত থেকে বাঁচাতে বিশেষ একটি ‘হোয়াইট লিস্ট’ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয়, এসব অ্যাকাউন্টের পোস্টগুলো যাতে একসঙ্গে বহু মানুষ দেখতে পায়, সে ব্যবস্থাও করেছে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এখন থেকে পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের কথা মতো টুইটার প্লাটফর্মে এসব ফিচার যোগ করা হয়। মোট ৫২টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সবই আরবি ভাষায় পরিচালিত। এসব অ্যাকাউন্টের ‘নির্দিষ্ট ও বিশেষ কিছু বার্তা‘ আরবি ভাষাভাষী ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারণার জন্য রীতিমতো দায়িত্ব নেয় টুইটার।
লি ফ্যাংয়ের এ অনুসন্ধান ইতোমধ্যে দ্য ইন্টারসেপ্টের পাশাপাশি টুইটারেও প্রকাশ করা হয়েছে। সেন্টকম পরিচালিত ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে মূলত মার্কিন সেনাবাহিনীর বয়ান ও বক্তব্য সমর্থন করে বিভিন্ন পোস্ট করা হয়। প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান শত্রু ইরানের সমালোচনা, মার্কিন সেনাবাহিনীর সাফাই, ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন সমর্থন ও মার্কিন ড্রোনের প্রশংসা করে এসব পোস্ট করা হয়।
ফ্যাং বলেছেন, শুরু থেকেই এসব অ্যাকাউন্টের কথা গোপন করে আসছে সেন্টকম। কিছু অ্যাকাউন্টে ভুয়া ‘প্রোফাইল পিকচার’ ও ‘বায়ো’ ব্যবহার করেছে। যাতে আরব বিশ্ব বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ব্যবহারকারীদের কাছে এমন মনে হয় যে, অ্যাকাউন্টগুলো বেসামরিক লোকজন চালাচ্ছে। চলতি বছরের (২০২২) মে মাস পর্যন্ত সেন্টকমের এসব গোপন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করেছে টুইটার।
বিষয়টি টুইটার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেনে ফ্যাং। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) এক টুইটার বার্তায় এ সাংবাদিক বলেন, ‘এক টুইটার কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, টুইটারের এমন আচরণে তার খারাপ লেগেছে। এখনও ২০২০ সালের এমন অনেক ইমেইল রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, টুইটার শীর্ষ নির্বাহীরা মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও তাদের এমন গোপন প্রচারণা সম্পর্কে ভালোভাবেই জানতেন। কিন্তু তারপরও সেগুলো তারা বাতিল করেননি।’
অবশ্য এসব ঘটেছিল ইলন মাস্ক টুইটার কেনার আগে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে টুইটার কিনে নেন ইলন। এরপর টুইটারের আগের কর্মকাণ্ডের অভ্যন্তরীণ কিছু নথি সাংবাদিকদের কাছে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছেন তিনি। যেসব নথিকে ইলন ‘টুইটার ফাইলস’ বলে অভিহিত করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় টুইটারে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের গোপন প্রচারণা বিষয়ক তথ্য সামনে আনলেন সাংবাদিক ফ্যাং।
কিউএনবি/আয়শা/২১ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:৩৫