সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন

ভারতে নারীরা নিজেদের ‘সিঙ্গেল’ বলতে গর্ববোধ করেন

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৮৫ Time View

ডেস্কনিউজঃ ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় ভারতে ৭ কোটি ১৪ লাখ নারী একা ছিলেন, যা যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। ভারতে ২০০১ সালের আদমশুমারির সঙ্গে ২০১১ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে একা নারীর সংখ্যা ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০০১ সালে সংখ্যাটি ছিল ৫ কোটি ১২ লাখ। করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালের আদমশুমারি শেষ হতে দেরি হচ্ছে। পিউ কুণ্ডু বলেন, এখন একা নারীর সংখ্যা ১০ কোটি পেরিয়ে যাবে।

অনেকেই ভারতে একা নারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। কেউ বলছেন, ভারতে বিয়ে করার বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছে। এর অর্থ, দেশটিতে বিপুলসংখ্যক একা বা অবিবাহিত নারীর বয়স কেবল কিশোরী পেরিয়েছে বা ২০ বছর বয়সের মধ্যে। আর একা নারীদের সংখ্যার মধ্যে বিপুলসংখ্যক বিধবা নারীও আছেন। পুরুষদের তুলনায় নারী বেশি দিন বাঁচে বলে এই সংখ্যা বেড়েছে।

তবে পিউ কুণ্ডু বলেছেন, বিপুলসংখ্যক নারী কেবল পরিস্থিতির কারণে একা নন, অনেক নারীই এখন ইচ্ছাকৃতভাবে একা থাকতে পছন্দ করছেন। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক নারীর সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তাঁরা নিজেদের পছন্দেই একা থাকেন। তাঁরা প্রথাগত বিয়ের ধারণা অস্বীকার করেন। কারণ, এটা পিতৃতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, যা নারীদের প্রতি অবিচার ও নিপীড়ন চালু রাখে।’

পিউয়ের মা বিধবা হওয়ার পর বেশ বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পিউ বলেন, ‘বড় হতে হতে দেখেছি, কীভাবে একজন নারীকে একজন পুরুষ সঙ্গীহীন করে দেয়; আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কীভাবে নারীরা প্রান্তিক হয়ে পড়েন। চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের সময় তিনি (মা) অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলেন। বিধবা নারীর ছায়া অশুভ বলে তাঁকে কনের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছিল।’

৪৪ বছর বয়সে পিউয়ের মা আবার বিয়ে করেন। এতে তিনি সমাজের রোষানলে পড়েন। সবাই অপমানজনক কথা বলতে থাকেন। পিউ বলেন, ‘এসব বিষয় আমার ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। আমি একসময় বিশ্বাস করতাম, বিয়ে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা আনবে, আমার সব অন্ধকার দূর করে দেবে।’

দুবার প্রেমে পড়েছিলেন পিউ। কিন্তু ওই দুই সম্পর্কেই তিনি শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। কোনো সম্পর্কই আর সামনের দিকে এগোয়নি। ২৬ বছর বয়সে তাঁর বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়েছিল। সেই বিয়েও আর করেননি তিনি। পিউ বলেন, তিনি একসময় বুঝতে পেরেছিলেন, প্রথাগত বিয়েতে একজন নারীকে পুরুষের অধীনে থাকতে হয়। এটা তিনি পারবেন না। তাই আর বিয়ে করা হয়নি।

আদর্শ সম্পর্ক কখনো সংস্কৃতি, ধর্ম বা সম্প্রদায়ের ওপর ভিত্তি করে হবে না; বরং সম্মান ও স্বীকৃতির ওপর ভিত্তি করে তা হবে বলে মন্তব্য করেন পিউ।

ভারতে এখনো পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বিরাজমান। এই সমাজে ৯০ শতাংশ বিয়ে পরিবারের সক্রিয় তদারকিতে হয়। এখানে নারী কাকে বিয়ে করবেন, একা থাকবেন নাকি আদৌ বিয়ে করতে চান না—এমন কথা খুব কমই বলতে পারেন।

দিল্লির কাছে গুরুগ্রামের লাইফ কোচে ৪৪ বছর বয়সী ভাবনা দাহিয়া কখনো বিয়ে করেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা সমুদ্রের একটি বিন্দু হতে পারি। কিন্তু ওই বিন্দু তো আছে। নারীদের একা থাকার উদাহরণ যত বেশি আছে, ততই ভালো। ঐতিহ্যগতভাবেই পরিবারে স্বামীর চাকরি, পরিকল্পনা ও সন্তানদের স্কুল নিয়ে আলোচনা হতো। নারীদের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়ে আলোচনা তেমন একটা হতো না। কিন্তু এখন এই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।’

কিউএনবি/বিপুল/১২.১২.২০২২/ রাত ১১.১১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit